হালদায় নমুনা ডিম, উৎসবের অপেক্ষা

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2016, 01:24 PM
Updated : 19 May 2016, 01:56 PM

পরিবেশ অনুকূল থাকায় বৃহস্পতিবার বা শুক্রবারের যে কোনো সময় মা মাছ ডিম ছাড়বে বলে আশা করছেন ডিম সংগ্রহকারী ও বিশেষজ্ঞরা।

বুধবার গভীর রাতে প্রবল বর্ষণের পর হালদা নদীর বিভিন্ন অংশে নমুনা ডিম ছাড়ে মা মাছ।

তারপর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয় নমুনা ডিম সংগ্রহ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে হালদা নদীর বিভিন্ন অংশে গিয়ে দেখা গেছে, ডিম সংগ্রহকারীরা নৌকা নিয়ে নদীতে অপেক্ষমান। কেউ কেউ নমুনা ডিমও সংগ্রহ করছেন।

চট্টগ্রামের রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলায় হালদা নদীর সত্তার ঘাট, অংকুরী ঘোনা, মদুনাঘাট, গড়দুয়ারা, কান্তার আলী চৌধুরী ঘাট, নাপিতের ঘোনা ও মার্দাশা এলাকায় ডিম সংগ্রহকারীরা অপেক্ষায় আছেন।

মা মাছ ডিম ছাড়লেই শুরু হবে ডিম সংগ্রহের উৎসব।

প্রতি বছরের চৈত্র থেকে আষাঢ় মাসের মধ্যে পূর্ণিমা-অমাবস্যার তিথিতে বজ্রসহ বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢল নামে হালদা নদীতে।

আর তখনই তাপমাত্রা অনুকূলে থাকলে ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মাছ। মধ্য এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে হালদায় ডিম ছাড়ে মা মাছ।

হালদা নদী রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নদীর পরিবেশ ডিম ছাড়ার জন্য উপযুক্ত কি না তা দেখতেই মা মাছ অল্প পরিমাণে ডিম দেয়। এটাই নমুনা ডিম।

নমুনা ডিম ছাড়ার পর অনুকূল পরিবেশে দ্বিতীয়বার ডিম ছাড়লেই তা সংগ্রহ করে হালদা পাড়ের জেলেরা।

মৎস্য কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন বলেন, বুধবার গভীর রাতে হালদায় নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ। জেলেরা ডিম সংগ্রহ করছে।

“যে কোনো সময় মা মাছ আবার ডিম ছাড়তে পারে। নদীর বিভিন্ন অংশে ঘুরে ঘুরে আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।”

চট্টগ্রামের রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার প্রায় ৯৮ কিলোমিটার ‍দীর্ঘ এলাকা জুড়ে আছে হালদা নদী। ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল এবং ২০১৪ সালের ১২ মে হালদায় ডিম ছেড়েছিল মা মাছ।

হালদা নদীর উত্তর মার্দাশা অংশের ডিম সংগ্রহকারী আবদুস সালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অল্প পরিমাণে ডিম পাওয়া যাচ্ছে। দিনভর অপেক্ষা করেছি, রাতেও অপেক্ষায় থাকব।

রামদাশ হাট এলাকার বাসিন্দা মো. খালেদ বলেন, একটি নৌকা নিয়ে আধা কেজির মত ডিম পেয়েছি। রাতে ভাটার অপেক্ষায় আছি। তখন বুঝা যাবে মা মাছ ডিম ছাড়বে কি না।

হালদা নদী গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মনজুরুল কিবরিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পরিবেশ এবং তাপমাত্রা অনুকূলে আছে। পূর্ণিমার তিথি চলছে। নমুনা ডিমও মিলছে।

“আশা করছি আজ রাতে বা আগামীকাল মা মাছ ডিম ছাড়বে। নদীতে প্রায় আড়াইশ নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহকারীরা অপেক্ষায় আছে। ডিম ছাড়লেই শুরু হবে সংগ্রহ করা।”

দূষণ, দখল এবং চোরা শিকারীর তৎপরতায় নদীতে মা মাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় প্রতিবছরই হালদায় ডিম উৎপাদনের পরিমাণ কমছে।

সরকারি হিসাবে, ২০১২ সালে নদী থেকে সংগৃহীত ডিমে রেণু হয়েছিল প্রায় এক হাজার ছয়শ কেজি। ২০১৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৬২৪ কেজি। ২০১৪ সালে আরও কমে তা হয় মাত্র পাঁচশ কেজি।