গোলাম আযমের মতো কাজী রকিবেরও বিচার হবে: অলি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার হরণ ও জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ এনে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের মতো তারও বিচার হবে বলে মন্তব্য করেছেন এলডিপি সভাপতি অলি আহমদ।  

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Jan 2016, 11:21 AM
Updated : 3 Jan 2016, 03:38 PM

পৌর নির্বাচনের চারদিন পর রোববার চট্টগ্রামের লালদিঘীর পাড়ে নিজ বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

অলি আহমদ বলেন, “গোলাম আযমের যেভাবে ট্রায়াল হয়েছে যুদ্ধাপরাধের জন্য, আগামী দিনে সিইসির ট্রায়াল হবে মানবাধিকার হরণ ও জনগণকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য।”

সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কারণে আজকে সমগ্র বাংলাদেশ হুমকির মুখে বলেও এসময় অভিযোগ করেন তিনি।

“সিইসি বেতন, পদ ও গাড়ির লোভ-লালসায় বাংলাদেশকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।”

(ফাইল ছবি)

পৌর নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্তরা চাকরির লোভে নিজেদের বিবেক বিসর্জন দিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের এই নেতা। 

পৌর নির্বাচন ‘শান্তিপূর্ণ’ হয়েছে বলে সিইসি যে বক্তব্য দিয়েছেন সে প্রসঙ্গ তুলে ব্যঙ্গ করে অলি আহমদ বলেন, “সিইসি যেটা বলেছেন, শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে, সেটা খুবই সত্য কথা। কারণ দিনের বেলায় কোনো ভোট হয়নি। ফযরের আযানের পরপরই ভোটার উপস্থিতির পূর্বে ব্যালট পেপার সিল মারা হয়েছিল।”

নিজের এলাকা চন্দনাইশ পৌরসভার প্রসঙ্গ টেনে সেখানে ভোটাররা মেয়রের ব্যালট পায়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

চন্দনাইশ পৌরসভায় ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে এলডিপির প্রার্থী আইয়ুব কুতুবী নির্বাচন করেন। যেখানে ভোট শুরুর আগেই ব্যালটে সিল মারার অভিযোগে তিনটি কেন্দ্র বন্ধ করে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা সনজিদা শারমিন।

এই পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মাহবুবুল আলম ১১ হাজার ৫২২ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন।

অলি আহমদ বলেন, “আপনারা দেখেছেন, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের এক নেতা প্রেস ব্রিফিং করে ২৩০টিতে জয়লাভ করার সম্ভাবনা তারা সমীক্ষায় পেয়েছেন বলে জানান।  

“তাতে প্রমাণিত হয় ভোট কেড়ে নেওয়া ও তাদের প্রার্থীকে জয়ী করাটা পূর্বপরিকল্পিত ছিল, নতুন কোনো বিষয় না।”

ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের ‘চরম ভরাডুবি’ হওয়ায় তারা সতর্ক হয় মন্তব্য করে এলডিপি সভাপতি বলেন, “একদলীয় শাসন কায়েমে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পৌর নির্বাচনে তারা পরিকল্পিতভাবে জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করেছে।”

বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের নির্বাচন হয়নি মন্তব্য করে সাবেক মন্ত্রী অলি বলেন, এরশাদের আমলেও ভোটের কারচুপি হয়েছে। কিন্তু সেটা ছিল ভিন্ন রূপ। 

এসময় সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদকে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে তিনি বলেন, “ওই সময় ক্যানডিডেট উপজেলা হেডকোয়ার্টার থেকে বাক্সগুলো ঘরে নিয়ে যেত। … পোলিং, প্রিজাইডিং ও পুলিশ অফিসাররা ব্যালেটগুলো দস্তখত করে বাক্সে ঢুকিয়ে দিত। জনগণকে কষ্ট দেওয়া হয়নি।

“এই নির্বাচনে শীতের মধ্যেও অসংখ্য মানুষ সবকিছু উপেক্ষা করে কেন্দ্রে গিয়েছিল। কিন্তু তাদের ভোট দিতে দেওয়া হয়নি।”

এখন নিজেকে ‘পরাধীন’ মনে হয় জানিয়ে বীর বিক্রম অলি বলেন, “বাংলাদেশ যে আজ স্বাধীন, আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সেটা অনুভব করতে পারছি না। আমি মনে করি, আমি একজন পরাধীন ব্যক্তি।

“ব্রিটিশ আমলে যেরকম ব্রিটিশদের গোলাম ছিলাম, এখন আওয়ামী লীগের গোলাম বসবাস করছি।”

নির্বাচনে কারচুপি হবে জেনেও কেন অংশ নিলেন- এমন প্রশ্নে অলি আহমদ বলেন, “যুব সমাজ মনে করে ৫ তারিখের নির্বাচনে (২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন) না গিয়ে বিএনপি ভুল করেছে। অওয়ামী লীগ কী জিনিস, আমরা যুব সমাজকে সেটা দেখাতে চেয়েছিলাম।”

উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখনও তিন মাস বাকি আছে। এর মধ্যে অনেক পানি গড়াবে; অপেক্ষায় থাকুন।”

এর আগে পৌরসভার ভোটের দিন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় অলি আহমদ পৌর নির্বাচনকে ‘আওয়ামী লীগের নীল নকশার নির্বাচন’ বলেছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন সাবেক বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম, নগর বিএনপির সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান, এলডিপি নেতা ও সাবেক পিপি কফিল উদ্দিন প্রমুখ।

এবার প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে নির্বাচন হয়।

২৩৪ পৌরসভার মধ্যে নৌকা প্রতীক জিতেছে ১৭৭টিতে, বিএনপির প্রার্থীরা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জয় পেয়েছেন ২২টিতে। চট্টগ্রামের ১০ পৌরসভায়ও জয়ী হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা।

অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি ও তার জোট।