একাত্তরে চট্টগ্রামে গেরিলা হামলার মাধ্যমে পাকিস্তানী বাহিনীর এই দেশিয় দোসরদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ালেও স্বাধীন দেশে তাদেরই বংশধরদের আস্ফালন পীড়া দেয় মুক্তিযোদ্ধা কাজী নূরুল আবছারকে।
Published : 16 Dec 2015, 01:08 PM
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং কয়েকজনের দণ্ড কার্যকরের পরও এই আস্ফালন ও উগ্র সাম্প্রদায়িক জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তির ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গেরিলাযোদ্ধা নূরুল আবছার যুদ্ধকালীন স্মৃতি, ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদেরের বিরুদ্ধে দেওয়া সাক্ষ্য, বাংলাদেশের রাজনীতিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন।
১৯৬৬ সালে ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হওয়া এ মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীনতা আন্দোলনের শুরু থেকে চট্টগ্রাম শহর ও রাঙ্গুনিয়ায় সক্রিয় ছিলেন।গ্রামের বাড়ি রাঙ্গুনিয়ায় হলেও একাত্তরে ছিলেন নগরীর চন্দনপুরা এলাকার বাসায়।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মে মাসের শেষদিকে ফটিকছড়ি হয়ে সাব্রুম সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে যান তিনি। সেখানকার ১ নম্বর সেক্টরে নয়দিনের গেরিল ট্রেনিং নিয়ে ফিরে আসেন চট্টগ্রাম শহরে।
গেরিলা হিসেবে তার কাজ ছিল নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গ্রেনেড ফাটিয়ে রাজাকার ও পাকবাহিনীকে তটস্থ রাখা। সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে চন্দনপুরায় ডা. ছমিউদ্দিনের বাড়িতে বেড়াতে এসে ফিরে যাওয়ার সময় সালাউদ্দিন কাদেরের গাড়ি বহরে গ্রেনেড হামলা করে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল। ওই দলেও তিনি ছিলেন।
“স্থানীয় হওয়ায় আমার দায়িত্ব ছিল তার (সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী) গতিবিধির ওপর নজর রাখা। ছমিউদ্দিনের ছেলে আজিজ উদ্দিনের কাছ থেকে কৌশলে ওগুলো জেনে নিই।
“আমাদের কাছে খবর ছিল সাকা নিজেই গাড়ি চালাবে। সে অনুযায়ী গ্রেনেড হামলা ও গুলি করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ওইদিন তার গাড়িচালক গাড়ি চালাচ্ছিল।”
হামলায় সাকার গাড়িচালক স্প্লিন্টারবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিল।
প্রচণ্ড বৃষ্টিতে রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে চালানো ওই হামলাকারী দলে আরও ছিলেন মাহবুবুল আলম, ফজলুল হক ভূঁইয়া ও সৌরিন্দ্র সেন।
কাজী নূরুল আবছার
যুদ্ধ শুরুর পর ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সাকা চট্টগ্রাম শহর, রাউজানে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পক্ষের লোকদের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছিল তা ছিল ‘অবর্ণণীয়’।
“একাত্তরেই তাকে মারতে চেয়েছিলাম, পারিনি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পর সুযোগ আসায় সাক্ষী হয়েছি। একটা সময় অনেকে মনে করেছিল তার বিচার হবে না। কিন্তু ঠিকই হয়েছে,” বলেন নূরুল আবছার।
মানবতাবিরোধী অপরাধে সাকা চৌধুরীর বিচার শুরু হলে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন তিনি। তাদের দেওয়া সাক্ষ্যেই প্রমাণিত হয়, একাত্তরে সাকা চৌধুরী পাকিস্তানে নয়, দেশেই ছিলেন।
গত ২২ নভেম্বর যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিএনপিনেতা সাকা চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
কিন্তু দাম্ভিক সাকার মতো তার পরিবারের আস্ফালন এখনো বন্ধ হয়নি বলে জানান তিনি।
“ফাঁসি হওয়ার পরও কুখ্যাত এই যুদ্ধাপরাধীর ছেলে ও তার পরিবারের সদস্যরা যে ভাষায় কথা বলে তাতে মন খারাপ হয়ে যায়।”
চট্টগ্রামের বাম রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিত মুখ নূরুল আবছার যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ ‘ক্রোক’ এবং তা নিলামে বিক্রির করে অর্থ একাত্তরে ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে দেওয়ার দাবি জানান।
“পাশাপাশি আগামী দুই-তিন প্রজন্ম যাতে যুদ্ধাপরাধীর পরিবারের কেউ সরকারি আনুকূল্য বা চাকরি না পায় সেটাও নিশ্চিত করা হোক।”
জাতীয় ও আর্ন্তজাতিকভাবে যারা যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরোধীতা করছে, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানান এ বীর মুক্তিযোদ্ধা।