আধিপত্যের সংঘর্ষের কারণে কমিটি বিলুপ্ত করে এক বছর পর নতুন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব দিয়েও সামলানো যাচ্ছে না চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগকে।
Published : 03 Nov 2015, 12:25 PM
তিন মাস আগে দায়িত্ব পাওয়া নতুন দুই নেতা বলছেন, সংগঠনে ‘অনুপ্রবেশকারী শিবির’ এবং ‘জুনিয়রদের ভুল বোঝাবুঝি’ এই অস্থিরতার কারণ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী এই সংগঠনের কার্যক্রম গত কয়েক বছর ধরেই শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক আধা ডজন ‘গ্রুপে’র দলাদলিতে বিপর্যস্ত। এদের কোন্দলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের প্রাণও দিতে হয়েছে।
সর্বশেষ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার দ্বিতীয় দিন ভর্তিচ্ছুদের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষ। এতে পুলিশসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হন।
এর আগেও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে সভাপতি আলমগীর টিপু ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজনের অনুসারীরা। সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচি তারা পালন করে আসছেন আলাদাভাবে।
গত ২৫ অগাস্ট সোহরাওয়ার্দী হলের কক্ষ ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা। সে সময়ও পুলিশসহ উভয় পক্ষের কমপক্ষে সাতজন আহত হন।
২০১৪ সালের ১০ জুন শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক দল ‘কনকর্ড’ ও ‘ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স)’ এর কর্মীদের সংঘর্ষের পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ২১৯ সদস্যের কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় কমিটি।
মামুনুল হককে সভাপতি এবং এস এম খালেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১১ সালের ২৫ জুন ওই কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এক বছর কমিটিহীন থাকার পর চলতি বছরের ১৯ জুলাই টিপুকে বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সভাপতি ও সুজনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এরপর আর পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি।
মাঝের এক বছর কমিটি না থাকলেও ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দল আর সংঘর্ষ থেমে থাকেনি। এ কারণে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১২ নভেম্বর চট্টগ্রাম সফরে এসে দলের প্রভাবশালী দুই নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দিনকে সংকট নিরসনের দায়িত্ব দেন।
এরপর ১৫ নভেম্বর রাতে মহিউদ্দিনের বাসায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিবদমান পক্ষগুলোর নেতারা বসে ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে’র প্রতিশ্রুতি দেন।
এক মাস পার না হতেই ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক দল ভিএক্স ও সিএফসি’র সংঘর্ষে প্রাণ হারান সংস্কৃত বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তাপস সরকার।
এরপর চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভিএক্স ও সিএফসির নতুন সংঘর্ষে আহত হন অন্তত পাঁচজন।
গত ১২ মার্চ সভাপতি আলমগীর টিপুর সমর্থক ‘সিক্সটি-নাইন’ গ্রুপের কর্মীরা ক্যাম্পাসে মারধর করে চবি ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পিযুষ কান্তি বর্মনকে।
সিটি নির্বাচনের দুই দিন পর ৩০ এপ্রিল সংঘর্ষে জড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিয়াজ ইরফান চৌধুরীর সমর্থক ‘বাংলার মুখ’ ও ‘সিক্সটি নাইন’। এতে আহত হন কমপক্ষে আটজন।
৬ জুন কনকর্ড ও বগিভিত্তিক আরেকটি গ্রুপ ‘একাকার’ এর কর্মীদের সংঘর্ষেও আটজন আহত হন।
সংগঠনের এ দশার কথা বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকও স্বীকার করেছেন।
সভাপতি আলমগীর টিপু বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাস ছিল ছাত্র শিবিরের নিয়ন্ত্রণে। আমাদের সংগঠনেও কিছু ‘শিবিরের এজেন্ট’ ঢুকে গেছে। তারাই এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে।”
এর সঙ্গে দীর্ঘদিন কমিটি না থাকাকে দায়ী করে সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজন বলেন, “আমরা কাজ করে যাচ্ছি।এ ধরনের ছোটখাটো বিশৃঙ্খলা অচিরেই ঠিক হয়ে যাবে।”
তবে ‘কোন্দল নেই’ দাবি করে তিনি বলেন, “আমাদের মধ্যে কোনো ধরনের সমস্যা নেই। জুনিয়রদের ভুল বোঝাবুঝির কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।”