সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনে সমস্যা সাংবিধানিক: প্রধান বিচারপতি

চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের ক্ষেত্রে কিছু সাংবিধানিক সমস্যা আছে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Sept 2015, 01:16 PM
Updated : 4 Sept 2015, 03:36 PM

শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে ‘হাই কোর্টের সার্কিট বেঞ্চ বাস্তবায়ন পরিষদ, চট্টগ্রাম’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, “হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনে সংবিধানে কিছু সমস্যা আছে। আমাদের উচ্চ আদালতে দুটি বিভাগ- হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ।

“আমাদের প্রধান বিচারপতি একজন। তিনি পূর্ণাঙ্গ আদালত করেন, প্রশাসনিক কাজও করেন। আমাদের ইউনিটারি (এককেন্দ্রিক) ফর্ম অব গভার্নমেন্ট।”

হাই কোর্ট বিকেন্দ্রীকরণের নমুনা তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, “ধরেন, চট্টগ্রামে তিন জন বিচারক দিয়ে দিলাম। একটা মামলা ফুল বেঞ্চে করা দরকার হলে ফাইল যাবে ঢাকায়। আবার সেটা আনতে হবে চট্টগ্রামে।

“ভারতে এটা সম্ভব হচ্ছে, কারণ পশ্চিমবঙ্গে একটা হাইকোর্ট আছে। সেখানে একজন প্রধান বিচারপতি আছেন।”

চট্টগ্রামে আগে সার্কিট বেঞ্চ নয়, স্থায়ী বেঞ্চ ছিল উল্লেখ করে এস কে সিনহা বলেন, “ছয়টা স্থায়ী বেঞ্চ হওয়া সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”

১৯৮২ সালের ১১ মে চট্টগ্রামে হাই কোর্টের একটি স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠিত হয়। এইচ এম এরশাদের সামরিক শাসনামলে ১৯৮৬ সালের ১৭ জুন সামরিক ফরমানের ৪ (এ) ধারা সংশোধন করে স্থায়ী বেঞ্চকে সার্কিট বেঞ্চ (অস্থায়ী) করা হয়।

সংবিধান পুনরুজ্জীবনের পর সংবিধানের অনুচ্ছেদ-১০০ অনুসারে সার্কিট বেঞ্চের বিধান থাকায় চট্টগ্রামসহ দেশের ছয়টি সার্কিট বেঞ্চ বহাল থেকে যায়। পরে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর ২(ক) অনুচ্ছেদ অনুসারে, ছয়টি সার্কিট বেঞ্চই আবার স্থায়ী বেঞ্চের মর্যাদা পায়।

প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমাদের সংবিধানে, সিভিল ও ক্রিমিনাল প্রসিডিউরে ‘হাইকোর্ট’ উল্লেখ আছে। এখন হাইকোর্ট বলতে কোন হাইকোর্ট? তখন চিন্তা-ভাবনা না করেই দেওয়া হয়েছিল। কাঠামো-জনবল কিছুই ঠিক করা হয়নি।”

১৯৮৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাই কোর্ট বিকেন্দ্রীকরণ সংক্রান্ত অষ্টম সংশোধনীর ২(ক) অনুচ্ছেদটি বাতিলের আদেশ দিলে চট্টগ্রাম, রংপুর, যশোর, বরিশাল, কুমিল্লা ও সিলেটের হাই কোর্ট বেঞ্চগুলো ঢাকায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

প্রধান বিচারপতি বলেন, “বিভিন্ন কারণে আমি আপনাদের খুব বেশি আশ্বস্ত করতে পারছি না। সরকারপ্রধান, বিরোধী দলের নেতা ও সংসদ সদস্যরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাকে বলেছেন। তাদের বলেছি, চিন্তা করে দেখব।

“সুপ্রিম কোর্টে তিন লাখ মামলা আছে যেগুলো নিষ্পত্তি করা দরকার। সিলেট, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, বরিশালও চাইছে। যদি দিই কিভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে, বিচারক সংখ্যা কত জন হবে, জ্যেষ্ঠ কতজন হবে, টেকসই হবে কি না সব বিচার বিবেচনা করে দেখতে হবে।”

সংবিধানে ‘সুপ্রিম কোর্টের আসন’ শিরোনামের ১০০ অনুচ্ছেদে বলা আছে- রাজধানীতে সুপ্রিম কোর্টের স্থায়ী আসন থাকিবে, তবে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লইয়া প্রধান বিচারপতি সময়ে সময়ে অন্য যে স্থান বা স্থানসমূহ নির্ধারণ করিবেন, সেই স্থান বা স্থানসমূহে হাইকোর্ট বিভাগের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হইতে পারিবে।

অনুষ্ঠানে সংগঠনের আহ্বায়ক ও চট্টগ্রামের জেলা পিপি আবুল হাশেম প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে বলেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও জ্যেষ্ঠ বিচারকরা আপনাকে এর পক্ষে-বিপক্ষে বলতে পারে। চট্টগ্রাম আর সিলেট, রাজশাহী এক না।

“আপনি সকলের অভিভাবক। চট্টগ্রামে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিলে আপনি আইন বিভাগের ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবেন।”

পরিষদের সদস্য সচিব শংকর প্রসাদ দের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলের সদস্য ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবলু ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মুজিবুল হক।