উইলিয়ামসনের হাসিতে বেদনার প্রতিচ্ছবি

বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে গেছে নিষ্ঠুরতম উপায়ে, তবু হাসছেন কেন উইলিয়ামসন! একবার, দুবার নয়। বারবার। তার ক্রিকেটীয় বোধ, তার প্রজ্ঞা, ভাবনার গভীরতা, এসবের প্রতিফলন তো ফাইনাল শেষে সংবাদ সম্মেলনে পড়ল অনেকবারই। পাশাপাশি নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক হাসলেন অনেক, হাসালেন। রসিকতায় মাতালেন। তবে সেই হাসিতেই যেন ফুটে উঠল না পাওয়ার যন্ত্রণা। তার অসহায়ত্ব।

ক্রীড়া প্রতিবেদক লন্ডন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 July 2019, 06:10 AM
Updated : 15 July 2019, 09:25 AM

অবিশ্বাস্য নাটকীয়তায় ঠাসা ফাইনালে যখন দুই দলই ছিল সমান কাতারে, তাদেরকে আলাদা করেছে বাউন্ডারির সংখ্যা। বেশি বাউন্ডারির সৌজন্যে লর্ডসের বিজয় উৎসব করেছে ইংল্যান্ড। প্রায় সবকিছুতে পাশাপাশি থেকেও নিউ জিল্যান্ড ডুবেছে হতাশার আঁধারে।

২০১৫ বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যাওয়া নিউ জিল্যান্ড দলে ছিলেন উইলিয়ামসন। এবার দল ফাইনালে উঠেছে বলতে গেলে তার দুর্দান্ত ব্যাটিং ও অসাধারণ নেতৃত্বে। টুর্নামেন্ট জুড়ে দলকে বলতে গেলে একা বয়ে নিয়েছেন ব্যাটিংয়ে। অধিনায়কত্বে ছিলেন দারুণ কুশলী, ক্ষুরধার ও প্রেরণাদায়ী। প্রায় প্রতি ম্যাচেই রেখেছেন নিজের নেতৃত্বের ছাপ। ভেসেছেন স্তুতিতে।

এত কিছুর পরও অধরা বিশ্বকাপ জয় করা হলো না এবারও। মার্টিন গাপটিলের থ্রো ডাইভ দেওয়া বেন স্টোকসের বাড়ানো ব্যাটে লেগে বাড়তি চারটি রান না হলে, সুপার ওভারের শেষ বলটি মার্টিন গাপটিল একটু ফাঁকা জায়গায় পাঠাতে পারলে, ম্যাচে বাউন্ডারি আর কিছু বেশি হলে কিংবা আরও অনেক ছোট-খাটো কিছুর অন্তত একটি একটু এদিক-সেদিক হলেই হয়তো উইলিয়ামসন হতেন চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক। কিন্তু সেই অল্পটুকুই গড়ে দিয়েছে বড় ব্যবধান।

সেই কঠিন বাস্তবতায় হোক কিংবা ভাগ্যের ছোঁয়া না পাওয়ার অসহায়ত্বে, সংবাদ সম্মেলনে উইলিয়ামসনের মুখে হাসি ফুটে উঠল অনেকবার। কতটা হতাশা থেকে এই অবস্থা, সেটি বোঝা গেল তার কথায়।

“হাসতে পারি বা কাঁদতে, আর কী করা, তাই না? ক্ষোভ নেই কারও প্রতি। হতাশা আছে তীব্র। ছেলেরা সবাই এই বেদনা টের পাচ্ছে। আরও বেশি এই কারণে যে এত পরিশ্রম করলেও নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা কিছুর সঙ্গে অনেক সময় পারা যায় না। খেলাটার ধরনই এমন যে অনেক সময়ই কিছু স্রেফ পক্ষে আসে না। আজকে সব উপচে পড়েছে।”

“অবশ্যই আমরা খুবই হতাশ। বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলতে ও শিরোপা জয়ের সুযোগ সৃষ্টি করতে ছেলেরা অনেক কাজ করেছে। এরপরও শেষ বাঁধাটুকু পার হওয়া গেল না। বিশ্বকাপ জুড়ে বেশ কটি সংবাদ সম্মেলনে আমি বলেছি, অনেক সময় কিছু ব্যাপার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। আজকেও এমন দুয়েকটি ছিল, যা হজম করা কঠিন।”

দুর্দান্ত একটি ফাইনাল হয়েছে, সম্ভবত ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা ম্যাচ, এসব সান্ত্বনার ক্ষেত্র অবশ্য তৈরি আছে। তবে উইলিয়ামসন মজা করেই বললেন, এসবে খুব একটা মজতে চাইছেন না।

“সবাই ম্যাচটি উপভোগ করেছে, তাই না? আমাদের চেয়ে হয়তো ইংলিশদেরই বেশি ভালো লেগেছে। ম্যাচটি দারুণ ছিল অবশ্যই। তবে ফলটা পক্ষে থাকলে সবসময়ই মধুর লাগে, উল্টো পাশে থাকলে তিক্ত।”