সেই ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে স্মৃতির মেলায় স্টিভ ওয়াহ
লন্ডন থেকে আরিফুল ইসলাম রনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 12 Jul 2019 08:53 PM BdST Updated: 12 Jul 2019 08:53 PM BdST
হাই-হ্যালো, শুভেচ্ছা বিনিময়ে আন্তরিক। কিন্তু ক্রিকেট নিয়ে কথা বলতে চাইলেই মুখে তালা। চুক্তির দায়বদ্ধতা আছে। শত অনুরোধেও গলানো কঠিন। শেষ পর্যন্ত মোক্ষম একটি দাওয়াই কাজে লাগল, স্মৃতির দুয়ারে টোকা দেওয়া। ওল্ড ট্রাফোর্ড! ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ম্যাচ এই ওল্ড ট্রাফোর্ডেই। এই প্রসঙ্গ তুলতেই কাজ হলো। স্টিভ ওয়াহ খানিকটা খুলে দিলেন মনের আগল।
ভারত-নিউ জিল্যান্ড ম্যাচে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে পাওয়া গেল ওয়াহ যমজের বড় ভাইকে। সাবেক অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক এসেছিলেন ধারাভাষ্য দিতে। কিংবদন্তিকে নাগালে পেয়ে ধারাভাষ্যের বাইরেও নানা কিছুতে তার ভাষ্য নিতে চেষ্টা করলেন সংবাদকর্মীদের অনেকে।
যখন খেলা ছেড়েছিলেন, তার ১৬৮ টেস্ট ছিল ম্যাচ খেলার রেকর্ড। অধিনায়ক হিসেবে ৪১ টেস্ট জয়ও ছিল রেকর্ড। সেই ৪১ জয় এসেছিল ৫৭ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েই। অধিনায়ক হিসেবে ৭১.৯২ শতাংশ টেস্ট জয়ের রেকর্ড টিকে আছে এখনও।
১৯৮৭ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিস্ময়কর জয়ে বড় অবদান ছিল সেই সময়ের তরুণ অলরাউন্ডার ওয়াহর। পরে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ব্যাটিং ও অসাধারণ নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়াকে এনে দিয়েছিলেন আরেকটি বিশ্বকাপ শিরোপা।
এসব পরিসংখ্যান-রেকর্ডের বাইরেও স্টিভ ওয়াহ মানে অনেক কিছু। গড়পড়তা একজন থেকে নিজেকে ভেঙেচুরে বিশ্বসেরাদের কাতারে উঠে আসা, সবসময়ের সেরাদের উচ্চতায় নিজেকে তুলে নেওয়া, তার আঁটসাঁট ব্যাটিং, তার অধিনায়কত্ব, প্রায় মিথ পর্যায়ে চলে যাওয়া মানসিক শক্তি, সীমবদ্ধতাকে জয় করার প্রতিজ্ঞা, স্রেফ ক্রিকেটার ছাপিয়ে ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠা- কথা বলার ছিল এমন অনেক কিছু নিয়েই। কিন্তু ওয়াহ যে কথাই বলবেন না!

উপলক্ষ্যটাই ছিল এমন। মঞ্চ ছিল প্রস্তুত। ১৯৯৭ সালের জুলাই, দুই টেস্ট শেষে অস্ট্রেলিয়া পিছিয়ে ছিল ১-০তে। অ্যাশেজ জয়ের সম্ভাবনায় ইংল্যান্ড ছিল উদ্দীপ্ত। তৃতীয় টেস্ট ছিল ম্যানচেস্টারে।
টস জিতে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক মার্ক টেইলর চমকে দিয়েছিলেন সবাইকে, এমনকি নিজের দলকেও। কন্ডিশন, উইকেট সবই ছিল পেস সহায়ক। টেইলর নিলেন ব্যাটিং!
ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়কের সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে চর্চা হয় এত বছর পরও। কারও মতে সেটি ছিল প্রচণ্ড সাহসী সিদ্ধান্ত, কারও মতে ভীষণ বোকামি। স্টিভ ওয়াহর কি মনে হয়েছিল?
এত দিন পর ফিরে তাকিয়ে বললেন, “জুয়া... বড় একটি জুয়া। ড্রেসিংরুমে আমরা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।”
খেলা শুরুর ঘণ্টাখানেক পর মনে হচ্ছিল, অধিনায়কের সেই জুয়ার জন্য পস্তাতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। চার মিনিটের ছোট ভাই মার্ক ওয়াহ আউট হওয়ার পর উইকেটে গেলেন স্টিভ ওয়াহ, দলের রান তখন ৩ উইকেটে ৪২। ইংলিশ পেসাররা সুইং করাচ্ছেন ইচ্ছেমতো।
উইকেটে যাওয়ার পরপরই অ্যান্ডি ক্যাডিকের একটি সুইঙ্গিং ফুলটস ঠিকমতো খেলতে পারেননি ওয়াহ। জোরালো আবেদন হয় এলবিডব্লিউয়ের। ইংল্যান্ডেরই আম্পায়ার জর্জ শার্প আউট দেননি, ইংলিশরা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না।
‘আসলেই কি আউট ছিলেন?’ প্রশ্ন শুনে ওয়াহ যে হাসি দিলেন, সেটির মানে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’, দুটিই হতে পারে।
তবে এরপর থেকে ওয়াহ যেভাবে ব্যাট করে গেলেন, সেখানে দ্বিধার লেশ মাত্র ছিল না। একপ্রান্তে উইকেট পড়েছে নিয়মিত, আরেক প্রান্তে চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তায় দলকে এগিয়ে নিলেন ওয়াহ।
নয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা পল রাইফেল কিছুটা সঙ্গ দিতে পারলেন। অষ্টম উইকেটে গড়া হলো ৭০ রানের জুটি।
মজার ব্যাপার হলো, অ্যাশেজে তখন তুমুল স্লেজিং চললেও সেই ইনিংসে ওয়াহকে কোনো কথাই শোনায়নি ইংল্যান্ড। পরে এক লেখায় কারণটি বলেছিলেন ওই ম্যাচের ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইক আথারটন।
“আমরা খেয়াল করেছিলাম, স্লেজিংয়ে তার মনোযোগে কোনো চিড় ধরানো যেত না। বরং বিরুদ্ধ পরিবেশে সে আরও বেশি জ্বলে উঠত।”
সেই কৌশল কাজে দেয়নি। মুখের কথার লড়াই না হলেও ওয়াহর ব্যাট কথা বলেছিল ঠিকই।
তাকে নড়বড়ে করতে একের পর এক শর্ট বল করে গেছেন ইংলিশরা। ওয়াহ বলের পর বল ছেড়েছেন, ‘ডাক’ করেছেন। আর যখন সুযোগ পেয়েছেন দারুণ সব কাট, কাভার ড্রাইভ ও ফ্লিকে রান বাড়িয়েছেন। এতটাই ছন্দে ছিলেন যে একটা পর্যায়ে অফ স্টাম্পে এসে ফ্লিক খেলেছেন ক্যাডিক, ড্যারেন গফদের বলে।

দ্বিতীয় ইনিংসে সেই একই চিত্র। এবার স্টিভ ওয়াহ যখন উইকেটে গেলেন, অস্ট্রেলিয়ার রান ৩ উইকেটে ৩৯!
এবার উইকেট প্রথম ইনিংসের তুলনায় ভালো ছিল ব্যাটিংয়ের জন্য। তবে প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরির পথেই চোট পেয়েছিলেন হাতে। সেটি ভোগাচ্ছিল। প্রচণ্ড ব্যথা নিয়েই ব্যাট করে গেলেন, এবার ১১৬।
৫০ বছরের মধ্যে সেটি ছিল অ্যাশেজে প্রথম কোনো ব্যাটসম্যানের এক ম্যাচে জোড়া সেঞ্চুরি।
সেই ম্যাচ জিতে অস্ট্রেলিয়া সমতা ফিরিয়েছিল সিরিজে। উজ্জীবিত দল পরের দুই টেস্টেও বড় জয়ে নিশ্চিত করে ফেলে অ্যাশেজ জয়।
মনে রাখার মতো কীর্তি ওয়াহর ক্যারিয়ারে আছে অসংখ্য। তবে সেই ওল্ড ট্র্যাফোর্ড টেস্ট যে হৃদয়ের আলাদা জায়গা নিয়ে আছে, তা ফুটে উঠল ওয়াহর কথাতেই।
“আগেই বলেছি, অন্যতম স্মরণীয় টেস্ট। উইকেট কঠিন ছিল, পরিস্থিতি ছিল প্রতিকূল। সেখানে যেভাবে ব্যাট করেছিলাম, ক্রিকেটার হিসেবে আমার জন্য ছিল তৃপ্তিদায়ক। আমার ইনিংস দুটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কঠিন পরিস্থিতি থেকে দলকে জিতিয়েছিল। এই পারফরম্যান্সগুলোই একজন ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারকে অর্থবহ করে তোলে।”
সেই ম্যাচ নিয়ে কথা হলো, এই বিশ্বকাপ নিয়েও তো কিছু বলা যায়! ‘কেমন দেখলেন বাংলাদেশের পারফরম্যান্স? সাকিব? কোথায় উন্নতি বেশি জরুরি দলটির?’
প্রশ্ন সব শেষও হলো না। সরে গেল স্টিভ ওয়াহর মুখ থেকে আলোর রেখা। ‘বাংলাদেশ ভালো খেলেছে, আমার তাড়া আছে…’ বলে হাঁটা দিলেন হনহন করে।
-
আইসিসির বিশ্বকাপ একাদশে সাকিব
-
অস্ট্রেলিয়ান কোচের হাত ধরে ইংল্যান্ডের বিশ্বজয়
-
ওভারথ্রোয়ে ইংল্যান্ডকে ৬ রান দেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল: টাফেল
-
সতীর্থরা আস্থা রাখায় খুশি আর্চার
-
ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা ম্যাচ?
-
আফগানিস্তান ‘এ’ দলের কাছে সিরিজ হারল ইমরুলরা
-
স্টোকসের যে ডাইভ ইংল্যান্ডকে নিল ট্রফির কাছে
-
বাউন্ডারি সংখ্যায় ট্রফির নিষ্পত্তি কতটা যৌক্তিক?
WARNING:
Any unauthorised use or reproduction of bdnews24.com content for commercial purposes is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.
সর্বাধিক পঠিত
- সমুদ্রে রাশিয়ার তেলবোঝাই কার্গোর সংখ্যায় রেকর্ড, নেই ক্রেতা
- নাম পদ্মা সেতুই হবে, উদ্বোধন ২৫ জুন
- ‘ফাইনালে’ জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে নামিবিয়ার ইতিহাস
- অনেক আফসোসে দিনটা ভালো হলো না বাংলাদেশের
- পদ্মা সেতু: শরীয়তপুরবাসীর অপেক্ষা এখনই ফুরাচ্ছে না
- কুমিল্লার ‘বিদ্রোহী’ ইমরান ‘ছাড়ছেন’ ভোটের মাঠ
- টেক্সাসের স্কুলে ঢুকে গুলি, ১৯ শিশুসহ নিহত ২১
- ৫০০ ছুঁয়েও রেকর্ড গড়া হলো না মুশফিক-লিটন জুটির
- করুনারত্নের লড়াই, বাংলাদেশের শিকার ২ উইকেট
- এমন উদ্ভট কথা ‘বলতেই পারেন না’ সিইসি