স্বপ্নের মৃত্যু কিংবা নতুন আশার শুরু

“সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম”, বহু বছর আগে যা লিখে গেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সেটিই এখন মাশরাফি বিন মুর্তজার প্রেরণা। ভারতের বিপক্ষে হারলেই বিশ্বকাপ স্বপ্নের মৃত্যু। জিতলে টিকে থাকবে আশা; সমীকরণ তবুও অনেক কঠিন। এই কঠিন পথে হেঁটেই আনন্দের ঠিকানা খুঁজে নিতে চান বাংলাদেশ অধিনায়ক।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবার্মিংহাম থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2019, 05:15 PM
Updated : 1 July 2019, 05:43 PM

ভারত ম্যাচই অবশ্য বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ নয়। তবে এই ম্যাচেই শেষ হতে পারে শেষ চারে জায়গা করে নেওয়ার আশা। শুক্রবার পাকিস্তানের বিপক্ষেও বাংলাদেশের ম্যাচ আছে একটি। কিন্তু বিশ্বকাপ স্বপ্নের বাঁচা-মরার একটি ফয়সালা হয়ে যাবে মঙ্গলবার বার্মিংহামে।

নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডকে বাগে পেয়েও হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে জয় ছিল প্রত্যাশিত। সেই ম্যাচ ভেসে গেছে বৃষ্টিতে। তাই কিছুটা নিজেদের দায় আর কিছুটা ভাগ্যের ফেরে বাংলাদেশের সেমি-ফাইনাল খেলার সমীকরণ কঠিন ছিল আগে থেকেই। সেটি আরও জটিল হয়ে গেছে রোববার ভারত হেরে যাওয়ায়।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিতে ভারত জিতলে, মঙ্গলবার ভারতের সঙ্গে না জিতলেও টিকে থাকত বাংলাদেশের আশা। কিন্তু এখন আশা টিকিয়ে রাখতে হলে জয়ের বিকল্প নেই। ভারতের বিপক্ষে জিতলেও অপেক্ষা করতে হবে ইংল্যান্ড-নিউ জিল্যান্ড ম্যাচের ফলের ওপর। নিজেদের জিততে হবে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে। বাংলাদেশ অধিনায়ক আলিঙ্গন করে নিচ্ছেন কঠিন এই বাস্তবতাকে।

“অন্যদের দিকে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই। এত দূর এসেছি নিজেদের কারণেই। যে ম্যাচগুলি জিতেছি, ভালো খেলে জিতেছি। এই ধরনের টুর্নামেন্টে অন্যদের দিকে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই। কালকে হারলে আমাদের টুর্নামেন্ট শেষ। আমি এটিকে ইতিবাচকভাবেই নিচ্ছি।”

“ভালো চ্যালেঞ্জ এটি। কালকে যদি ভালো খেলে জিততে পারি, সেটি হবে আরও আনন্দের। দলের জন্য সবসময় আমি কঠিন পথই বেশি পছন্দ করি। দলকে পরের ধাপে নিতে, শুধু এই বিশ্বকাপ নয়, এরপরও দলকে সামনে এগোতে হলে এসব চ্যালেঞ্জ জয় করা উচিত।”

চ্যালেঞ্জ জয় করার কাজটি খুবই কঠিন। ভারত এবারের টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট। শক্তি-সামর্থ্যে এগিয়ে অনেকটাই। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমি-ফাইনালে এই মাঠেই ভারতের কাছে উড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। গত বছর এশিয়া কাপে তাদের কাছে বাংলাদেশ হেরেছে দুইবার।

তবে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে অনেক সময়ই বেরিয়ে আসে সেরাটা। মরিয়া পরিস্থিতি অনেক সময় খুঁজে নেয় জয়ের পথ। আশায় বুক বাঁধছেন মাশরাফিও। নিজেদের সেরাটা খেললে ভারতকে হারানো সম্ভব, বিশ্বাস অধিনায়কের।

“আমি অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী। বিশ্বাস রাখতেই হবে। ভারত অবশ্যই শক্তিশালী দল। তবে আমরা নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। আমাদের সব জায়গাতেই শতভাগ দিতে হবে, যতটা সম্ভব কম ভুল করতে হবে। যেভাবে খেলে আসছি এই টুর্নামেন্টে, তার চেয়ে ভালো করতে হবে।”

গত বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল বেশ কিছু কারণে। এরপর থেকে যে সংস্করণে, যেখানেই দেখা হয়েছে, এই দুই দলের ম্যাচে আগে উত্তেজনার পারদ দেখা গেছে তুঙ্গে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে মূলধারার সংবাদমাধ্যম, সমর্থক পর্যায়ে আলোচনার খোরাক মিলেছে প্রচুর।

যত দূরে থাকার চেষ্টাই করা হোক না কেন, মাঠের বাইরের সেসব বিতর্ক-আলোচনার আঁচ অনেকসময় কিছুটা হলেও স্পর্শ করে ক্রিকেটারদের। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের বাড়তি প্রত্যাশা ও উত্তেজনায় বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা চাপের মুহূর্তে ভেঙে পড়েন কিনা, এই প্রশ্ন তাই যৌক্তিকভাবেই উঠছে।

বাইরের আলোচনা থেকে দূরে থাকতে পারলেও নিজের ভেতরের উত্তেজনা-রোমাঞ্চ আছে। পরিস্থিতির ওজন আছে। চাপ তাই নানাভাবেই আসতে পারে। মাশরাফির চাওয়া, সেই চাপ যতটা সম্ভব দূরে সরিয়ে খোলা মনে মাঠে নামা। চাপের সময় ঠাণ্ডা মাথায় সামলানো। আর নিজেদের সামর্থ্যের জায়গায় কোনো খামতি না রাখা।

“ম্যাচের শুরুর দিকে প্রথমে নার্ভগুলি বেশি কাজ করে। এই সময় ঠাণ্ডা থেকে সবকিছু সামলাতে হবে। বাইরের হাইপ থেকে বাইরে থাকতে হবে। মিডিয়া প্রশ্ন করবে, লোকে কথা বলবে। কিন্তু আমাদের সেসব থেকে দূরে থাকতে হবে। অপ্রয়োজনীয় চাপ নেওয়ার দরকার দেখি না।”

 “যখনই আমরা জিতেছি, কখনোই একটি জায়গায় ভালো খেলে জিতিনি। অনেক কিছু ভালো করে জিতেছি। এবারও জিততে হলে সেসব করতে হবে। সব সেক্টর একসঙ্গে ক্লিক করে জিততে হবে। কোনো জায়গায় ঘাটতি থাকলে এ রকম মঞ্চে ভারতের বিপক্ষে জেতা কঠিন।”