ভারতকে হারের স্বাদ দিয়ে জয়ে ফিরল ইংল্যান্ড

বিশ্বকাপে নিজের প্রথম সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিয়েছিলেন জনি বেয়ারস্টো। আসরে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরিতে ভারতকে কক্ষপথে রেখেছিলেন রোহিত শর্মা। তবে শেষরক্ষা করতে পারেনি বিরাট কোহলির দল। শেষের দিকের দারুণ বোলিংয়ে তাদের প্রথম হারের স্বাদ দিয়ে জয়ে ফিরেছে ওয়েন মর্গ্যানের দল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2019, 01:25 PM
Updated : 30 June 2019, 07:11 PM

বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে রোববার ৩১ রানে জিতেছে ইংল্যান্ড। ৩৩৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ৫ উইকেটে ৩০৬ রান করে ভারত। ১৯৯২ আসরের পর বিশ্বকাপে এই প্রথম তাদের বিপক্ষে জিতল ইংল্যান্ড।

ওপেনার বেয়ারস্টো দারুণ এক সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডকে ৭ উইকেটে ৩৩৭ রানের সংগ্রহ এনে দেন। জিততে বিশ্বকাপে সফল রান তাড়ায় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়তে হতো ভারতকে। রোহিত-কোহলি দলকে রেখেছিলেন পথেই। তবে মিডল অর্ডার শেষের দাবি মেটাতে না পারায় তিনশ ছাড়িয়ে থেমে যায় তাদের ইনিংস।

ম্যাচের শেষটার মতো শুরুটাও দারুণ ছিল ইংল্যান্ডের। চোট কাটিয়ে জেসন রয় ফিরতেই যেন পাল্টে যায় স্বাগতিকদের উদ্বোধনী জুটি। আগের দুই ম্যাচে শুরুর জুটি টিকেছিল স্রেফ দুই বল। এবার দেড়শ ছাড়ানো জুটিতে দলকে বড় সংগ্রহের ভিত এনে দিলেন রয় ও বেয়ারস্টো।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ডের শুরুটা ছিল সাবধানী। ঝুঁকিহীন ক্রিকেট খেলে প্রথম ১০ ওভারে ৪৭ রান তুলে নেন দুই ওপেনার। একাদশ ওভারে এসেছিল জুটি ভাঙার একটি সুযোগ। হার্দিক পান্ডিয়ার লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে মহেন্দ্র সিং ধোনির হাতে ধরা পড়েন রয়। তবে আম্পায়ার দেন ওয়াইড, ক্যাচ বুঝতে পারেননি ধোনি, ভারত নেয়নি রিভিউ।

রিভিউ নিলে ব্যক্তিগত ২১ রানে ফিরতেন রয়। পান্ডিয়ার পরের দুই বলে ছক্কা-চার হাঁকিয়ে ডানা মেলেন। প্রথম ৪৩ বলে ২৭ রান করা বেয়ারস্টো পান্ডিয়ার পরের ওভারের প্রথম দুই বলে দুই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে গা ঝাড়া দেন।

দুই ব্যাটসম্যানের দাপুটে ব্যাটিংয়ে রান আসতে থাকে বানের স্রোতের মতো। ১১ থেকে ২০- এই ১০ ওভারে ৯৮ রান তুলে নেয় ইংল্যান্ড। দ্রুত এগোনো ১৬০ রানের জুটি ভাঙেন কুলদীপ যাদব। ৫৭ বলে দুই ছক্কা ও সাত চারে ৬৬ রান করে ফিরেন রয়।

উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর কমে রানের গতি। তবুও ৩০ ওভারে দুইশ ছুঁয়ে ফেলে ইংল্যান্ড। ৫৬ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন বেয়ারস্টো। ৯০ বলে তুলে নেন বিশ্বকাপে প্রথম ও ক্যারিয়ারে অষ্টম সেঞ্চুরি।

১০ চার ও ছয় ছক্কায় ১১১ রান করা বেয়ারস্টোকে ফিরিয়ে নিজের প্রথম উইকেট নেন মোহাম্মদ শামি। পরে দারুণ এক বাউন্সারে বিদায় করেন অধিনায়ক ওয়েন মর্গ্যানকে।

থমকে যাওয়া রানের গতিতে দম দেন ছন্দে থাকা বেন স্টোকস। সাবধানী ব্যাটিং করা জো রুটের সঙ্গে তার জুটিতে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। আক্রমণে ফিরে রুটকে বিদায় করে ৭০ রানের জুটি ভাঙেন শামি।

নিজের শেষ দুই ওভারে বেশ খরুচে ছিলেন এই পেসার। ৪৭ ও ৪৯ তম ওভারে বোলিং করে দেন ৩২ রান। এই সময়ে জস বাটলারকে ফিরিয়ে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো নেন পাঁচ উইকেট।

জাসপ্রিত বুমরাহ দারুণ বোলিং করলেও শেষ ১০ ওভারে ৯২ রান তুলে নেয় ইংল্যান্ড। এতে সবচেয়ে বড় অবদান স্টোকসের। ৫৪ বলে তিন ছক্কা ও ছয় চারে ৭৯ রান করেন এই অলরাউন্ডার।

৬৯ রানে ৫ উইকেট নেন শামি। খরুচে ছিলেন দুই স্পিনার কুলদীপ ও যুজবেন্দ্র চেহেল। তাদের ২০ ওভার থেকে ১৬০ রান নেয় ইংল্যান্ড।

বড় রান তাড়ায় শুরুতেই লোকেশ রাহুলকে হারায় ভারত। আরেক ওপেনার রোহিত ভুগছিলেন টাইমিং করতে। ক্রিজে যাওয়ার পর থেকে আস্থার সঙ্গে খেলছিলেন কোহলি। দ্বিতীয় উইকেটে ১৩৮ রানের জুটিতে এগিয়ে যায় ভারত।

টানা পঞ্চম পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলা কোহলি ফিরেন ফিফটি করার খানিক পরে। ৭ চারে অধিনায়ক করেন ৬৬ রান। ক্যারিয়ারের ২৫তম সেঞ্চুরি করেই ফিরে যান রোহিত। ১০৯ বলে খেলা তার ১০২ রানের ইনিংস গড়া ১৫ চারে।

আসরে প্রথমবারের মতো খেলার সুযোগ পাওয়া রিশাব পান্ত ফিরেন থিতু হয়ে। প্রমোশন পেয়ে পাঁচে নেমে রানের গতিতে দম দিয়েছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। তাকে থামিয়ে নিজের তৃতীয় উইকেট নেন দলে ফেরা পেসার লিয়াম প্লানকেট।

শেষের দিকে অনেক কঠিন হয়ে পড়া সমীকরণ মেলানোর চেষ্টায় যাননি ধোনি ও কেদার যাদব। তাদের মধ্যে মরিয়া চেষ্টা না দেখে দুয়ো দেয় গ্যালারির দর্শকরা। ৫.১ ওভারে ৩৯ রান করেন ধোনি-কেদার। ম্যাচের শেষ ওভারে ভারতের ইনিংসে একমাত্র ছক্কাটি হাঁকান ধোনি।

দারুণ সেঞ্চুরিতে সুর বেঁধে দেওয়া বেয়ারস্টো জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

৮ ম্যাচে পঞ্চম জয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে উঠে এসেছে ইংল্যান্ড। ৭ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে রয়েছে ভারত। স্বাগতিকদের জয়ে আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর চতুর্থ দল হিসেবে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। আর কঠিন হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের কাজটা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৩৭/৭ (রয় ৬৬, বেয়ারস্টো ১১১, রুট ৪৪, মর্গ্যান ১, স্টোকস ৭৯, বাটলার ২০, ওকস ৭, প্লানকেট ১*, আর্চার ০*; শামি ১০-১-৬৯-৫, বুমরাহ ১০-১-৪৪-১, চেহেল ১০-০-৮৮-০, পান্ডিয়া ১০-০-৬০-০, কুলদীপ ১০-০-৭২-১)

ভারত: ৫০ ওভারে ৩০৬/৫ (রাহুল ০, রোহিত ১০২, কোহলি ৬৬, পান্ত ৩২, পান্ডিয়া ৪৫, ধোনি ৪২*, কেদার ১২*; ওকস ১০-৩-৫৮-২, আর্চার ১০-০-৪৫-০, প্লানকেট ১০-০-৫৫-৩, উড ১০-০-৭৩-০, রশিদ ৬-০-৪০-০, স্টোকস ৪-০-৩৪-০)

ফল: ইংল্যান্ড ৩১ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: জনি বেয়ারস্টো