উইন্ডিজকে বিদায় করে দিল ভারত

বিরাট কোহলি ও মহেন্দ্র সিং ধোনির ফিফটির পরও লক্ষ্য ছিল নাগালে। তবে মোহাম্মদ শামি, জাসপ্রিত বুমরাহদের বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারলেন না ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানরা। অনায়াস জয়ে সেমি-ফাইনালের পথে আরেকটু এগিয়ে গেল ভারত।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2019, 01:32 PM
Updated : 27 June 2019, 06:00 PM

ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের উইকেটে বৃহস্পতিবার বোলারদের জন্য বেশ সহায়তা ছিল। বল কখনও স্কিড করেছে, কখনও গ্রিপ করেছে। বাউন্স ছিল অসমান। এর মধ্যেই লড়াইয়ের পুঁজি গড়ে ভারত। পরে বোলারদের নৈপুণ্যে জেতে ১২৫ রানে। এবারের আসরে তাদের পঞ্চম জয়।

দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া কোহলি খেলেন ৭২ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস। শুরুতে একবার জীবন পাওয়া ধোনি করেন লড়াকু এক ফিফটি। ভারত ৭ উইকেটে করে ২৬৮ রান। চ্যালেঞ্জিং এই রান তাড়ায় সেভাবে জয়ের সম্ভাবনাই জাগাতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়ে তাদের ৩৪ ওভার ২ বলে ১৪৩ রানে থামিয়ে দেন শামি।

এই হারে আফগানিস্তান ও দক্ষিণ অফ্রিকার পর তৃতীয় দল হিসেবে জেসন হোল্ডারের দল বিদায় নিল বিশ্বকাপ থেকে।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি ভারতের। চার-ছক্কা হাঁকিয়ে কেবল ডানা মেলতে শুরু করেছিলেন রোহিত শর্মা। কেমার রোচের দারুণ এক ডেলিভারিতে কট বিহাইন্ডের রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

অন্য ওপেনার লোকেশ রাহুল শুরুতে টাইমিং পেতে ও গ্যাপ খুঁজে পেতে ভুগছিলেন। কঠিন সময় পার করে শট খেলতে শুরু করেন তিনি। শুরু থেকে আস্থার সঙ্গে খেলা কোহলির সঙ্গে তার জুটি জমে যাওয়ার পর দ্রুত এগোয় ভারত।

চমৎকার এক ডেলিভারিতে রাহুলকে বোল্ড করে ৬৯ রানের জুটি ভাঙেন জেসন হোল্ডার। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে বিজয় শঙ্কর ও কেদার যাদবকে কট বিহাইন্ড করে ভারতকে চাপে ফেলে দেন রোচ। কেদারকেও রিভিউ নিয়ে ফিরিয়েছিল ক্যারিবিয়ানরা।

১৪০ রানে ৪ উইকেট হারানো ভারতের অবস্থা হতে পারতো আরও খারাপ। ফ্যাবিয়ান অ্যালেনের বলে ৭ রানে মহেন্দ্র সিং ধোনিকে স্টাম্পিং করার সুযোগ অবিশ্বাস্যভাবে হাতছাড়া করেন শেই হোপ।

শুরুতে সময় নেন ধোনি। সে সময় রানের চাকা সচল রাখেন কোহলি। হোল্ডারের প্রত্যাশার চেয়ে কম বাউন্স করা বলে মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে অধিনায়ক ফিরলে বড় একটা ধাক্কা খায় ভারত। ৮২ বলে ৮ চারে ৭২ রান করেন কোহলি। এই ইনিংস খেলার পথে শচীন টেন্ডুলকার ও ব্রায়ান লারাকে ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্রুততম ২০ হাজার রানের রেকর্ড গড়েন তিনি।

ক্রিজে গিয়েই শট খেলতে শুরু করা পান্ডিয়া রানের গতিতে দম দেওয়ার কাজটা করেন। ধীরে ধীরে শট খেলতে শুরু করেন ধোনি। ষষ্ঠ উইকেটে তারা গড়েন ৭০ রানের জুটি।

শেলডন কটরেলকে ওড়ানোর চেষ্টায় সীমানায় ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় অলরাউন্ডার পান্ডিয়ার ৪৬ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস। ওশান টমাসের করা ম্যাচের শেষ ওভারে দুই ছক্কা ও এক চারে ১৬ রান নিয়ে দলকে ২৬৮ পর্যন্ত নিয়ে যান ধোনি। ৬১ বলে ৫৬ রানে অপরাজিত থাকেন অভিজ্ঞ এই কিপার-ব্যাটসম্যান।

রান তাড়ায় শুরুতেই চাপে পড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্রিস গেইলকে ফেরানোর পর দারুণ এক ডেলিভারিতে শেই হোপকে বোল্ড করেন শামি। আন্দ্রে রাসেলের চোটে বিশ্বকাপ দলে আসা সুনিল আমব্রিসকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন নিকোলাস পুরান।

আমব্রিসকে এলবিডব্লিউ করে পান্ডিয়া ভাঙেন ৫৫ রানের জুটি। এরপর আর কোনো জুটি গড়তে পারেনি ক্যারিবিয়ানরা। দলকে এগিয়ে নিতে পারেননি কেউই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪৫ রানে হারায় শেষ ৬ উইকেট।

পরপর দুই বলে কার্লোস ব্র্যাথওয়েট ও অ্যালেনকে ফিরিয়ে দেন বুমরাহ। ৯ রানে ২ উইকেট নেন এই পেসার। লেগ স্পিনার যুজবেন্দ্র চেহেল ২ উইকেট নেন ৩৯ রানে। শুরু, মাঝে আর শেষে ছোবল দেওয়া শামি ১৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে দলের সেরা বোলার।

বোলারদের জন্য বেশ সহায়তা আছে এমন উইকেটে দারুণ ফিফটির জন্য ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন কোহলি। 

৬ ম্যাচে পাঁচ জয়ে ১১ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে উঠে এসেছে আসরের একমাত্র অপরাজিত দল ভারত। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের একটি ম্যাচ ভেসে যায় বৃষ্টিতে। ৭ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পয়েন্ট ৩। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাদের একটি ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছিল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ৫০ ওভারে ২৬৮/৭ (রাহুল ৪৮, রোহিত ১৮, কোহলি ৭২, শঙ্কর ১৪, কেদার ৭, ধোনি ৫৬*, পান্ডিয়া ৪৬, শামি ০, কুলদীপ ০*; কটরেল ১০-০-৫০-২, রোচ ১০-০-৩৬-৩, টমাস ৭-০-৬৩-০, অ্যালেন ১০-০-৫২-০, হোল্ডার ১০-২-৩৩-২, ব্র্যাথওয়েট ৩-০-৩৩-০)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৩৪.২ ওভারে ১৪৩ (গেইল ৬, আমব্রিস ৩১, হোপ ৫, পুরান ২৮, হেটমায়ার ১৮, হোল্ডার ৬, ব্র্যাথওয়েট ১, অ্যালেন ০, রোচ ১৪*, কটরেল ১০, টমাস ৬; শামি ৬.২-০-১৬-৪, বুমরাহ ৬-১-৯-২, পান্ডিয়া ৫-০-২৮-১, কুলদিপ ৯-১-৩৫-১, কেদার ১-০-৪-০, চেহেল ৭-০-৩৯-২)

ফল: ভারত ১২৫ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: বিরাট কোহলি