৬ ইনিংসে ৩২৭ রান, ১ সেঞ্চুরির পাশে ফিফটি ২টি। গড় ৬৫.৪০, স্ট্রাইক রেট ৯২.৩৭। যে কোনো মানদণ্ডেই এই পারফরম্যান্স দারুণ। সাকিবের মতো রেকর্ড ভাঙা-গড়ার খেলায় মেতে ওঠেননি বটে। তবে দলে অবদানের পালায় যথারীতি সফল।
প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ে তার ৮০ বলে ৭৮ রানের ইনিংস দলকে এগিয়ে নিয়েছে বড় স্কোরের পথে। সবশেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ে তার ৮৭ বলে ৮৩ রানের ইনিংসটি ছিল মহামূল্যবান। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ জিততে পারেনি, তবে মুশফিকের সেঞ্চুরি দলকে তুলে নিয়েছে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের চূড়ায়।
এই তিন ম্যাচ দিয়েই মুশফিকের ব্যাটসম্যানশিপের গভীরতা বোঝা যায় অনেকটা। একেক দিন ম্যাচের পরিস্থিতি, উইকেটের চরিত্র, প্রতিপক্ষ ও পারিপার্শ্বিক বাস্তবতা ছিল একেক রকম। কিন্তু মুশফিকের ব্যাটে জবাব ছিল সবকিছুর।
প্রথম ম্যাচে উইকেটে গিয়েছিলেন দল অল্প সময়ের ব্যবধানে জোড়া উইকেট হারানোর পর। সেখান থেকে সাকিবের সঙ্গে রেকর্ড জুটি গড়েছেন। রান তুলেছেন সাকিবের চেয়ে বেশি গতিতে।
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে কাটা পড়েছেন রান আউটে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ খেলতে খেলতেই আউট হয়েছেন ৫০ বলে ৪৪ করে। ভালো কাটেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচও।
৮৭ বলে ৮৩ রানের ইনিংস হয়তো বিধ্বংসী নয়। তবে যেভাবে আফগান স্পিনারদের খেলেছেন, সিঙ্গেলস-ডাবলস নিয়ে এলোমেলো করে দিয়েছেন তাদের পরিকল্পনা, ব্যতিব্যস্ত রেখেছেন প্রতিপক্ষ অধিনায়ক ও ফিল্ডারদের, আফগানরা একরকম ধ্বংসই হয়েছে।
এমনিতে শট খেলতে পছন্দ করলেও এ দিনের ইনিংসে চার ছিল কেবল চারটি, ছক্কা একটি। স্ট্রাইক রেট এরপরও ৯৫.৪০। তার স্কিল, তার মানসিক শক্তি আর পরিস্থিতির দাবি মেটানোর আদর্শ উদাহরণ ছিল ইনিংসটি।
গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় মুশফিকের কাছ থেকে এমন পারফরম্যান্স প্রত্যাশিতই, বলছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বাংলাদেশ অধিনায়ক বললেন, মুশফিকের প্রয়োজনীয়তা দল বোঝে বলেই তাকে মূল্যায়ন করে সেই উচ্চতায়।
“এই বিশ্বকাপ বলে নয়, গত কয়েক বছর ধরেই তো মুশফিক দারুণ ধারাবাহিক। দলের প্রয়োজনের সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সে রান করে। সবচেয়ে বড় কথা, পরিস্থিতির বুঝে দলের যা প্রয়োজন, সব করতে পারে। প্রয়োজনে শট খেলে, প্রয়োজনে সিঙ্গেল নেয় বা উইকেট ধরে রাখে।”
“খেয়াল করে দেখবেন, উইকেট-পরিস্থিতি যেমনই থাকুক, মুশফিকের স্ট্রাইক রেট ভালো থাকে। উইকেট যতোই পড়ুক, মুশফিকের ব্যাটিংয়ে চাপের ছাপ থাকে না। খুব কঠিন পরিস্থিতিতেও স্ট্রাইক রেটের মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ড ধরে রাখে। এটাই ওর ব্যাটসম্যানশিপের প্রমাণ যে সবকিছুর জন্যই সে প্রস্তুত। এ কারণেই গত কয়েক বছরে দলকে জেতানো অনেক ইনিংস এসেছে মুশফিকের ব্যাটে।”
রান সংখ্যার সঙ্গে যদি দলে প্রভাবকে বিবেচনায় নেওয়া হয়, মুশফিকের অনেক ইনিংসই অমূল্য। হয়তো কোনো ম্যাচে রান তার চেয়ে বেশি করেছে কেউ, কিন্তু মুশফিক নেমেই বদলে দিয়েছেন ম্যাচের মোড়। রানের গতি তিনি সব পরিস্থিতিতেই ধরে রাখতে পারেন বলে অন্যদের কাজও সহজ হয়ে যায় অনেকটা।