নিউ জিল্যান্ডকে প্রথম হারের স্বাদ দিল পাকিস্তান

দারুণ বোলিংয়ে শাহিন শাহ আফ্রিদি লক্ষ্যটা রেখেছিলেন নাগালে। বিশ্বকাপে নিজের প্রথম সেঞ্চুরিতে ব্যাটিংয়ে বাকিটা সেরেছেন বাবর আজম। পেয়েছেন হারিস সোহেলের দারুণ সঙ্গ। নিউ জিল্যান্ডকে প্রথম হারের স্বাদ দিয়ে তৃতীয় জয় তুলে নিয়েছে পাকিস্তান।  

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2019, 02:27 PM
Updated : 26 June 2019, 07:09 PM

বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে বুধবার ৬ উইকেটে জিতেছে সরফরাজ আহমেদের দল। ২৩৮ রানের লক্ষ্য ৫ বল বাকি থাকতে পেরিয়ে গেছে সাবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া নিউ জিল্যান্ডকে বড় সংগ্রহ গড়তে দেননি আফ্রিদি। লড়াকু ফিফটিতে দলকে ২৩৭ পর্যন্ত নিয়ে যান দুই অলরাউন্ডার জিমি নিশাম ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং ছিল বেশ কঠিন। উইকেট আরও মন্থর হয়ে যাওয়ায় টাইমিং পেতে লড়াই করতে হচ্ছিল ব্যাটসম্যানদের। সব বাধা দূরে ঠেলে অপরাজিত সেঞ্চুরিতে দলকে দারুণ এক জয় এনে দিয়েছেন বাবর।

মাঠ ভেজা থাকায় খেলা শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর। কমেনি ম্যাচের দৈর্ঘ্য। অনেকটা সময় পিচ কাভারে ঢাকা ছিল। আকাশ ছিল মেঘলা। পেসারদের জন্য কন্ডিশন ছিল দারুণ সহায়ক। সেটা সবচেয়ে ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছেন আফ্রিদি।

শুরুটা করেছিলেন মোহাম্মদ আমির। দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই বোল্ড করে দেন মার্টিন গাপটিলকে। ব্যর্থতার চক্র থেকে এই ম্যাচেও বের হয়ে আসতে পারেনি নিউ জিল্যান্ডের ওপেনাররা। আরেক ওপেনার মানরোকে ফিরিয়ে শিকার ধরেন আফ্রিদি।

তরুণ বাঁহাতি এই পেসার দ্রুত বিদায় করেন রস টেইলর ও টম ল্যাথামকে। দুজনই হন কট বিহাইন্ড। ঝাঁপিয়ে এক হাতে টেইলরের দারুণ ক্যাচ গ্লাভসে জমান সরফরাজ আহমেদ।

আগের দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করা কেন উইলিয়ামসন এবার টানতে পারেননি দলকে। লেগ স্পিনার শাদাব খানের অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক ধরা পড়েন সরফরাজের গ্লাভসে।

এরপরই নিজেদের সেরা জুটি পায় নিউ জিল্যান্ড। শুরু থেকে আস্থার সঙ্গে খেলেন ডি গ্র্যান্ডহোম। মন্থর শুরুর পর শট খেলতে শুরু করেন নিশাম। ষষ্ঠ উইকেটে ১২৮ বলে ১৩২ রানের জুটিতে দুই ব্যাটসম্যানেরই অবদান ৬৪ করে, তবে বল কম খেলেন নিশাম।

রান আউটে ভাঙে দারুণ জুটি। ডি গ্র্যান্ডহোম ৭১ বলে ছয় চার ও এক ছক্কায় ফিরেন ৬৪ রান করে। শেষ বলে ছক্কায় ক্যারিয়ার সেরা ৯৭ রানে অপরাজিত থাকেন নিশাম। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের ১১২ বলের ইনিংস গড়া পাঁচ চার ও তিন ছক্কায়। নিশামের আগের সেরা ছিল ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করা ৭৪। 

দারুণ বোলিংয়ে ২৮ রানে ৩ উইকেট নেন আফ্রিদি। একটি করে উইকেট নেন শাদাব ও আমির। 

ছোট রান তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি পাকিস্তানের। দ্রুত ফিরে যান দুই ওপেনার ফখর জামান ও ইমাম-উল-হক। অভিজ্ঞ মোহাম্মদ হাফিজকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন বাবর। শুরুতেই ভাঙতে পারতো তাদের জুটি। মিচেল স্যান্টনারের বলে ৩৮ রানে বাবরের কঠিন ক্যাচ গ্লাভসে জমাতে পারেননি ল্যাথাম।

ফুটমার্কে বল ফেলে বিশাল টার্ন পাচ্ছিলেন বাঁহাতি স্পিনার স্যান্টনার। তাকে বাড়তি সুবিধা পেতে দেখে আসরে প্রথমবারের মতো বল হাতে নেন উইলিয়ামসন। নিজের প্রথম ওভারেই হাফিজকে ফিরিয়ে ৬৬ রানের জুটি ভাঙেন নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক।

শুরুতে স্যান্টনারের বলে ভুগছিলেন হারিস। বাঁহাতি স্পিনারকে বেরিয়ে গিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে দূর করেন সব চাপ। এরপর থেকে খেলতে থাকেন আস্থার সঙ্গে। জমে যায় বাবরের সঙ্গে তার জুটি। জয়ের দুয়ারে গিয়ে হারিসের রান আউটে ভাঙে ১২৬ রানের জুটি। বাঁহাতি এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ৭৬ বলে খেলেন ৬৮ রানের দারুণ ইনিংস।

চতুর্থ ওভারে ক্রিজে যাওয়া বাবর ফিরেন দলের জয়কে সঙ্গে নিয়ে। ১২৭ বলে ১১ চারে করেন ১০১ রান। ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরিতে জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

৭ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে ৬ নম্বরে উঠে এসেছে পাকিস্তান। টিকে আছে ১৯৯২ সালের চ্যাম্পিয়নদের সেমি-ফাইনালে খেলার স্বপ্ন। সমান ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে আছে নিউ জিল্যান্ড।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউ জিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৩৭/৬ (গাপটিল ৫, মানরো ১২, উইলিয়ামসন ৪১, টেইলর ৩, ল্যাথাম ১, নিশাম ৯৭*, ডি গ্র্যান্ডহোম ৬৪, স্যান্টনার ৫*; হাফিজ ৭-০-২২-০, আমির ১০-০-৬৭-১, আফ্রিদি ১০-৩-২৮-৩, ওয়াসিম ৩-০-১৭-০, শাদাব ১০-০-৪৩-১, ওয়াহাব ১০-০-৫৫-০)

পাকিস্তান: ৪৯.১ ওভারে ২৪১/৪ (ইমাম ১৯, ফখর ৯, বাবর ১০১*, হাফিজ ৩২, সোহেল ৬৮, সরফরাজ ৫*; বোল্ট ১০-০-৪৮-১, হেনরি ৭-০-২৫-০, ফার্গুসন ৮.১-০-৫০-১, ডি গ্র্যান্ডহোম ২-০-১২-০, স্যান্টনার ১০-০-৩৮-০, নিশাম ৩-০-২০-০, উইলিয়ামসন ৮-০-৩৯-১, মানরো ১-০-৯-০)

ফল: পাকিস্তান ৬ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: বাবর আজম