আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে সাকিবের কিছু প্রমাণ করার ছিল না। তবে এই ম্যাচ এল একটি উপলক্ষ্য হয়ে। এগিয়ে চলার ধারাহিকতা দেখানোর আরেকটি সুযোগ। ব্যাটিং প্রতিকূল উইকেটে গুরুত্বপূর্ণ ফিফটি এবং শুরু, মাঝে ও শেষে বোলিংয়ের ঝলকে ৫ উইকেট নিয়ে সাকিব দেখিয়ে দিলেন।
এই বিশ্বকাপও সাকিবের জন্য একটি উপলক্ষ্য। ক্রিকেটের অভিজাত মঞ্চে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব পাকাপোক্ত করার সুযোগ। ক্রিকেটের কুলীনদের ভাবনা নাড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে প্রথম উঠেছিলেন ওয়ানডে অলরাউন্ডারদের র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে। এর পর থেকে তিন সংস্করণে শীর্ষে ওঠার ধারাবাহিকতায় তার ধারেকাছে ছিল না কেউ। একই সঙ্গে তিন সংস্করণে শীর্ষে থাকা ইতিহাসের একমাত্র অলরাউন্ডারও তিনি। তবু ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো জায়গায় তাকে ঠিক সেই উচ্চতায় দেখতেন না অনেকে। ধারাভাষ্যে, কলামে, মতামতে অনেকে বলতেন ‘অন্যতম সেরা’, কিংবা ‘সেরাদের একজন’ বা বড়জোর ‘বাংলাদেশের সেরা’। এই বিশ্বকাপে যেন সেই সংশয় গুঁড়িয়ে এগিয়ে চলেছেন সাকিব। ‘অন্যতম’ বা ‘সেরাদের একজন’, এই ধরনের বন্ধনীর বলয় ছিঁড়ে নিজেকে তুলে নিচ্ছেন আপন উচ্চতায়।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ফিফটিতে এবারের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হয়ে গেছেন আবার। নামের পাশে উইকেট এখন ১০টি। একই বিশ্বকাপে চার শতাধিক রান ও ১০ উইকেট কীর্তি নেই আর কারও।
বিশ্বকাপে নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে সাকিবের ছোট্ট আত্মমূল্যায়ন, “ভালো লাগছে। কোনো একটি লক্ষ্য থাকলে সেটি অর্জন করার একটি তাড়না থাকে। সেটি অর্জন করতে পারলে অবশ্যই ভালো লাগে।”
কি সেই তাড়না? অনুমান করে নিতে কষ্ট হয় না। এবারের আগেও বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রান ও উইকেট ছিল সাকিবের। কিন্তু সব মিলিয়ে পারফরম্যান্স ঠিক সাকিবীয় নয়। গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অসাধারণ ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি করেছেন নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। কিন্তু অন্য ম্যাচগুলোয় ছিলেন বিবর্ণ। প্রয়োজন ছিল তাই বিশ্ব মঞ্চে চমকপ্রদ কিছু করার। পারফরম্যান্স দিয়েই নজর কাড়ার। সাকিব সেই দাবি মেটালেন সত্যিকারের চ্যাম্পিয়নের মতোই।
এই যে এখন তার ধারাবাহিকতায় বিস্মিত ক্রিকেট বিশ্বের অনেকে, এই যে ধারাভাষ্যকার, বিশ্লেষকরা তার প্রশংসায় উপযুক্ত শব্দ খুঁজে হয়রান, তার পায়ে লুটোপুটি খাচ্ছে রেকর্ডের পর রেকর্ড, সবকিছুই ছাপ রেখে যাচ্ছে তার শ্রেষ্ঠত্বের।
রান, উইকেট, পরিসংখ্যানে আছে ধারাবাহিকতার প্রমাণ। তবে সত্যিকার অর্থেই নিজের নাম খোদাই করে রাখছেন তিনি দাপুটে পারফরম্যান্সে। ম্যাচ জিতিয়ে। ব্যবধান গড়ে দিয়ে। বাংলাদেশের তিনটি জয়েই তিনি ম্যাচ সেরা।
পরিসংখ্যান জমা থাকবে রেকর্ড বইয়ে। ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে খোদাই হয়ে থাকবে দলকে জেতানো এসব পারফরম্যান্স। ব্যবধান গড়ে দেওয়ার বীরত্ব।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে শেষ দিকে সীমানায় যখন একটু মিসফিল্ডিং করলেন সাকিব, ধারাভাষ্য কক্ষে ইয়ান স্মিথ বলে উঠলেন, “সাকিবও তাহলে মানুষ! অফিসিয়ালি, সাকিবও মানুষ!”
এই যে রক্ত-মাংসের মানুষ হয়েও অতিমানব হয়ে ওঠা, এটিই এই বিশ্বকাপের সাকিব।