বিশ্বকাপে সেমি-ফাইনালের পথে কার্যত নক আউট ম্যাচে পরিণত হওয়া তিন ম্যাচের প্রথমটিতে জিতেছে বাংলাদেশ। সাউথ্যাম্পটনে সোমবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় এসেছে ৬২ রানে।
সাকিবের ঔজ্জ্বল্যের পাশেও আলাদা করে চোখে পড়ে মুশফিকুর রহিমের আলো। ব্যাটিংয়ের জন্য সম্ভবত এবারের বিশ্বকাপের কঠিনতম উইকেটে বাংলাদেশ ২৬২ পর্যন্ত যেতে পারল তো তার সৌজন্যেই! সাকিব ৫১ রানে ফেরার পর মুশফিকের ৮৭ বলে ৮৩ রানের ইনিংসই টেনে নেয় দলকে।
এই উইকেটে ২৬৩ রান তাড়া ছিল ভীষণ কঠিন। আরও কঠিন করে তোলেন সাকিব। উইকেট নিয়েছেন নিজের প্রথম ওভারে, মাঝে, শেষে। আফগানরা থমকে গেছে ২০০ রানেই।
২৯ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছেন বিশ্বকাপে প্রথম ৫ উইকেট। এবারের আসরে সব দল মিলিয়েই এখনও পর্যন্ত সেরা বোলিং পারফরম্যান্স।
ম্যাচের প্রথম ভাগে ফিফটির পথে আবার উঠে গেছেন এবারের বিশ্বকাপে রান সংগ্রহের চূড়ায়। আর ফিফটি ও ৫ উইকেট মিলিয়ে নাম লিখিয়েছেন রেকর্ড বইয়ে। বিশ্বকাপে একই ম্যাচে ফিফটি ও ৫ উইকেট ছিল আগে কেবল যুবরাজ সিংয়ের।
তামিম সবসময় স্ট্রাইক নিতে পছন্দ করলেও বাঁহাতির জন্য বেশি কার্যকর মুজিব উর রহমানের সামনে স্ট্রাইক নেন লিটন। গত ১২ বছরে মাত্র দ্বিতীয়বার ওয়ানডেতে স্ট্রাইক নিলেন না তামিম। দুবারই আফগানদের বিপক্ষে।
লিটনের শুরুটা ছিল আত্মবিশ্বাসী। তবে ১৭ বলে ১৬ করে আউট হন সেই মুজিবের বলেই।
আউট নিয়ে অবশ্য বিতর্কের অবকাশ থাকল কিছুটা। শর্ট কাভারে ফিল্ডার ক্যাচটি ঠিকমতো নিতে পেরেছিলেন কিনা, নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না অনেকবার রিপ্লে দেখেও। মাঠের আম্পায়ারের সফট সিগনাল ছিল ‘আউট, শেষ পর্যন্ত টিভি আম্পায়ার সেটিকে বদলানোর যথেষ্ট প্রমাণ পাননি।
দ্বিতীয় উইকেটে তামিম ইকবাল ও সাকিব ঠাণ্ডা মাথায় জুটি গড়ে এগিয়ে নিয়েছেন দলকে। উইকেট দ্রুত পড়ে নিয়েছিলেন তারা, তাই ব্যাটিংয়ে ছিল না তাড়া।
দুজনের জুটি যখন দারুণ জমে উঠেছে, তামিম আউট হয়ে যান আলগা শটে। মোহাম্মদ নবিকে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড ৩৬ রানে। ভাঙে ৫৯ রানের জুটি।
দুর্দান্ত ধারাবাহিকতায় সাকিব পৌঁছে যান আরেকটি ফিফটিতে, ৬৬ বলে। পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে চার ছিল কেবল একটি। এই বিশ্বকাপে সাকিবের এটি পঞ্চম পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে পেরিয়েছেন হাজার রান।
এবার অবশ্য ইনিংসটিকে বড় করতে পারেননি। দ্বিতীয় স্পেলে ফেরা মুজিব দারুণ ডেলিভারিতে ৫১ রানে থামান তাকে।
পাঁচে নামা সৌম্য সরকার দ্রুতই বিদায় নেন মুজিবের বল বুঝতে না পেরে। বাংলাদেশ পড়ে যায় একটু চাপে। টানা ১২ ওভারে আসেনি বাউন্ডারি।
উইকেটে যাওয়ার খানিক পরই পায়ে ক্র্যাম্প করে মাহমুদউল্লাহর। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়েই যতটা সম্ভব দৌড়ে চেষ্টা করেছেন দ্রুত রান নিয়ে মুশফিককে সঙ্গ দিতে। দুজনের জুটিতে বাড়ে রানের গতি।
রান বাড়নোর চেষ্টায় মাহমুদউল্লাহ উড়িয়ে মারতে গিয়ে ২৭ রানে আউট হলে শেষ হয় ৫৬ রানের জুটি।
দৌলত জাদরানকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে শেষের আগের ওভারে আউট হয়েছেন মুশফিক। ৯৫ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে কেবল চারটি চার, একটি ছয়। মুশফিকের স্কিল, ফিটনেস ও পরিস্থিতি বুঝে খেলার আদর্শ উদাহরণ।
২৪ বলে ৩৫ করে মোসাদ্দেক আউট হয়েছেন ইনিংসের শেষ বলে। এই উইকেটের জন্য বাংলাদেশের রান তখন কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায়।
আগের ম্যাচে এই উইকেটেই ২২৪ রান তুলে আফগানদের হারিয়েছিল ভারত। বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ যদিও ততটা ক্ষুরধার নয়। তবে একজন সাকিব তো আছেন!
কঠিন রান তাড়ায় আফগানদের শুরুটা অবশ্য খারাপ ছিল না। গুলবাদিন নাইব ও রহমত শাহ উদ্বোধনী জুটিতে ১০ ওভারে দলকে এনে দেন ৪৮ রান।
ব্রেক থ্রু আনতে সাকিবকে বোলিংয়ে ডাকেন অধিনায়ক। যেমন চাওয়া, তেমন প্রাপ্তি। প্রথম ওভারেই সাকিব ফিরিয়ে দেন রহমতকে।
দুই ওভারের প্রথম স্পেলে উইকেট ছিল ওই একটিই। ফিরলেন ঘণ্টাখানেক পর। এক স্পেলে তিন উইকেট নিয়ে ভেঙে দিলেন আফগান ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড।
বাংলাদেশের বিপক্ষে বরাবরই ভালো খেলা সামিউল্লাহ শিনওয়ারি এরপর কিছুটা যন্ত্রণা দিয়েছেন আবারও। নাজিবউল্লাহ জাদরানের সঙ্গে জুটিতে চেষ্টা করেছেন লড়াইয়ের। সাকিব বাধা হয়েছেন সেখানেও। নাজিবউল্লাহকে ফিরিয়ে পূর্ণ করেছেন ৫ উইকেট।
আফগানরা শেষ পর্যন্ত গুটিয়ে গেছে ১৮ বল আগেই। দাপুটে জয়ে বাংলাদেশ জানিয়ে দিয়েছে, শেষ চারের লড়াইয়ে হাল ছাড়া নয় এখনই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৬২/৭ (লিটন ১৬, তামিম ৩৬, সাকিব ৫১, মুশফিক ৮৩, সৌম্য ৩, মাহমুদউল্লাহ ২৭, মোসাদ্দেক ৩৫, সাইফ ২*; মুজিব ১০-০-৩৯-৩, দৌলত ৯-০-৬৪-১, নবি ১০-০-৪৪-১, গুলবাদিন ১০-১-৫৬-২, রশিদ ১০-০-৫২-০, রহমত ১-০-৭-০)।
আফগানিস্তান: ৪৭ ওভারে ২০০ (গুলবাদিন ৪৭, রহমত ২৪, শাহিদি ১১, আসগর ২০, নবি ০, শিনওয়ারি ৪৯*, ইকরাম ১১, নাজিবউল্লাহ ২৩, রশিদ ২, দৌলত ০, মুজিব ০*; মাশরাফি ৭-০-৩৭-০, মুস্তাফিজ ৮-১-৩২-২, সাইফ ৮-০-৩৩-১, সাকিব ১০-১-২৯-৫, মিরাজ ৮-০-৩৭-০, মোসাদ্দেক ৬-০-২৫-১)।
ফল: বাংলাদেশ ৬২ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সাকিব আল হাসান