ফিঞ্চের সেঞ্চুরি আর স্টার্কের তোপে শীর্ষে অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের সময় রাজত্ব করলেন অ্যারন ফিঞ্চ। দাপুটে ব্যাটিংয়ে অধিনায়ক তুলে নিলেন সেঞ্চুরি। রান তাড়ায় শ্রীলঙ্কাকে পথ দেখালেন দিমুথ করুনারত্নে। তবে সেই পথে হাঁটতে পারেননি পরের ব্যাটসম্যানরা। মিচেল স্টার্কের তোপে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা পেয়েছে সহজ জয়।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 June 2019, 01:10 PM
Updated : 15 June 2019, 05:45 PM

লন্ডনের দা ওভালে শনিবার ৮৭ রানে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। পাঁচ ম্যাচে চতুর্থ জয়ে পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে ফিঞ্চের দল।  

বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ফিঞ্চ খেলেন ১৫৩ রানের ইনিংস। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ফিফটি করেন স্টিভেন স্মিথ, অধিনায়কের সঙ্গে গড়েন দেড়শ ছাড়ানো জুটি। অস্ট্রেলিয়া ৭ উইকেটে করে ৩৩৪ রান।

৩ রানের জন্য সেঞ্চুরি না পাওয়ার হতাশা নিয়ে ফিরেন করুনারত্নে। ড্রেসিং রুমে বসে দেখেন বাঁহাতি পেসার স্টার্কের তোপের সামনে সতীর্থদের অসহায় আত্মসমর্পণ। এক উইকেটে দেড়শ ছাড়িয়ে যাওয়া লঙ্কানরা শেষ পর্যন্ত থমকে যায় ২৪৭ রানে।

এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়াকে ভালো শুরু এনে দেয় উদ্বোধনী জুটি। যে কোনো সফল জুটিতে যা হয়, একজন টাইমিং করতে সংগ্রাম করলে অন্য জন দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। বিশ্বকাপে ঠিক তা-ই করে চলেছেন ফিঞ্চ ও ডেভিড ওয়ার্নার। আগের ম্যাচে দাপুটে ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া ওয়ার্নার এদিন ভুগছিলেন, সেদিন শুরুতে সময় নেওয়া ফিঞ্চ এদিন ছিলেন সাবলীল। তিনিই সচল রাখেন রানের চাকা।

ওয়ার্নারকে ফিরিয়ে ৮০ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। স্টাম্পের বল কাট করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান ২৬ রান করা বাঁহাতি ওপেনার। আগের ম্যাচে ছয় নম্বরে ব্যাটিং করা উসমান খাওয়াজা ফিরেন তিনে। তাকে দ্রুত বিদায় করে নিজের দ্বিতীয় উইকেট নেন অফ স্পিনার ধনাঞ্জয়া।

দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর একটু কমে অস্ট্রেলিয়ার রানের গতি। প্রথম ৭ ওভারে ২০ রান দেওয়া ডি সিলভার এক ওভার থেকে ২০ রান তুলে নিয়ে রানের গতিতে দম দেন ফিঞ্চ ও স্মিথ। তাতে আর রাশ টানতে পারেনি লঙ্কানরা।

৫৩ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়া ফিঞ্চ ক্যারিয়ারের চতুর্দশ সেঞ্চুরি তুলে নেন ৯৭ বলে। ১২৮ বলে স্পর্শ করেন দেড়শ। ফিঞ্চকে থামিয়ে ১৭৩ রানের জুটি ভাঙেন ইসুরু উদানা।

বাংলাদেশের বিপক্ষে এবারের আসরে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ইনিংস খেলা জেসন রয়ের ১৫৩ স্পর্শ করে থামেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। তার ১৩২ বলের ইনিংস গড়া পাঁচ ছক্কা ও ১৫ চারে। এই ইনিংস খেলার পথে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এবারের আসরে তিনশ রানে গেছেন ফিঞ্চ।

লাসিথ মালিঙ্গার দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে থামেন স্মিথ। এবারে আসরে তৃতীয় ফিফটি পাওয়া এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান সাত চার ও এক ছক্কায় করেন ৭৩ রান।

দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় শেষে দ্রুত কিছু উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। তবে ২৫ বলে অপরাজিত ৪৬ রানের বিস্ফোরক ইনিংসে দলকে রানের পাহাড়ে নিয়ে যান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। 

বড় রান তাড়ায় শ্রীলঙ্কাকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন কুসল পেরেরা ও করুনারত্নে। দুই বাঁহাতি ওপেনারের সামনে সুবিধা করতে পারছিলেন না অস্ট্রেলিয়ার কোনো বোলার। ঝড় তুলে পঞ্চাশ ছোঁয়া পেরেরাকে বোল্ড করে ১১৫ রানের শুরুর জুটি ভাঙেন স্টার্ক।

৩৬ বলে ৫২ রান করে পেরেরার বিদায়ের পর কমে রানের গতি। থিতু হয়ে ফিরেন লাহিরু থিরিমান্নে। সেঞ্চুরির আগেই করুনারত্নেকে থামান কেন রিচার্ডসন। লঙ্কান অধিনায়ক ১০৮ বলে ৯ চারে করেন ৯৭ রান।

আগের দুই ম্যাচে শূন্য রানে ফেরা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস চার হাঁকিয়ে শুরু করেছিলেন। তবে থেমে যান ৯ রানে। থিতু হয়েও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি কুসল মেন্ডিস।  

শুরুর জুটির পর আর তেমন কোনো জুটি গড়তে পারেনি শ্রীলঙ্কা। কোনো ব্যাটসম্যান টানতে পারেননি দলকে। স্টার্ক, প্যাট কামিন্স ও রিচার্ডসনের তোপে ৪২ রানে শেষ ৭ উইকেট হারিয়ে আড়াইশ রানের আগেই থেমে যায় তারা। পায় দ্বিতীয় হারের তেতো স্বাদ।

৫৫ রানে ৪ উইকেট নেওয়া স্টার্ক ১৩ উইকেট নিয়ে উঠে গেলেন এবারের আসরে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকদের তালিকার শীর্ষে। ৩৮ রানে ২ উইকেট নেওয়া কামিন্স ১১ উইকেট নিয়ে আছেন তার পেছনে। রিচার্ডসন ৩ উইকেট নেন ৪৭ রানে।

দাপুটে ব্যাটিংয়ে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দেওয়া ফিঞ্চ জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ৩৩৪/৭ (ওয়ার্নার ২৬, ফিঞ্চ ১৫৩, খাওয়াজা ১০, স্মিথ ৭৩, ম্যাক্সওয়েল ৪৬*, মার্শ ৩, কেয়ারি ৪, কামিন্স ০, স্টার্ক ৫*; মালিঙ্গা ১০-১-৬১-১, প্রদিপ ১০-০-৮৮-০, উদানা ১০-০-৫৭-২, থিসারা ১০-০-৬৭-০, ডি সিলভা ৮-০-৪০-২, সিরিবর্দনা ২-০-১৭-০)

শ্রীলঙ্কা: ৪৫.৫ ওভারে ২৪৭ (করুনারত্নে ৯৭, কুসল পেরেরা ৫২, থিরিমান্নে ১৬, মেন্ডিস ৩০, ম্যাথিউস ৯, সিরিবর্দনা ৩, থিসারা ৭, ডি সিলভা ১৬*, উদানা ৮, মালিঙ্গা ১, প্রদিপ ০; স্টার্ক ১০-০-৫৫-৪, কামিন্স ৭.৫-০-৩৮-২, বেহরেনডর্ফ ৯-০-৫৯-১, রিচার্ডসন ৯-১-৪৭-৩, ম্যাক্সওয়েল ১০-০-৪৬-০)

ফল: অস্ট্রেলিয়া ৮৭ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: অ্যারন ফিঞ্চ