পরিত্যক্ত ম্যাচের পর বাড়ছে নিউ জিল্যান্ড ম্যাচের আফসোস

ম্যাচ শেষের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা যখন এলো, ব্রিস্টলে তখন তুমুল বৃষ্টি। ব্রডকাস্টারের সঙ্গে অধিনায়কদের কথোপকথনও তাই ছাদের নিচে। মাশরাফি বিন মুর্তজা সেই কক্ষে এলেন মুখে চওড়া হাসি নিয়ে। সম্ভাব্য দুই পয়েন্টের একটি হারিয়ে হাসছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক! “দুঃখে হাসছি ভাই, কপালও আমাদের…”, স্বভাবসুলভ মজার ঢঙয়ে বলতে বলতেই মাশরাফির খেদোক্তি, “ইশ, নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গে যদি জিতে থাকতাম!”

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিব্রিস্টল থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2019, 04:11 PM
Updated : 11 June 2019, 04:11 PM

যন্ত্রণাটা পুরোনো। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরিত্যক্ত ম্যাচ যেন সেই বেদনা আবার জাগিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ অধিনায়কের হৃদয় খুঁড়ে। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি পয়েন্ট পেলে এই এক পয়েন্ট হারানোর হাহাকার করতে হতো না!

বিশ্বকাপে এবার প্রথম তিন ম্যাচ থেকে বাংলাদেশের চাওয়া ছিল অন্তত একটি জয়। সেই জয়টির জন্য নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিই সবচেয়ে সম্ভাব্য ধরে নিয়েছিল দল। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ধরা দেয় সেই জয়। উজ্জীবিত দল এরপর চেয়েছিল নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিও জিতে সামনের সমীকরণের জন্য এগিয়ে থাকতে। ম্যাচ ছিল ওভালে, যেখানকার উইকেট বাংলাদেশ দলের ধরনের সঙ্গে মানিয়ে যায় অনেকটা। কিউইদের বাগেও পেয়েছিলেন মাশরাফিরা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেননি।

দল সংশ্লিষ্ট নানা জনের কাছ থেকে যা জানা যাচ্ছে, পেছন ফিরে তাকিয়ে বাংলাদেশ আফসোস করছে উইকেট ঠিকমতো পড়তে না পারায়। দল যখন ব্যাট করছে, টিম ম্যানেজেমেন্টের কেউ কেউ মনে করছিলেন, ওই উইকেটে অন্তত তিনশ রান করা উচিত জিততে। বিশেষ করে এই কন্ডিশনের সঙ্গে পরিচয় আছে, ম্যানেজমেন্টের এমন একজন মনে করছিলেন, উইকেট সাড়ে তিনশ রানের। ম্যাচ চলার সময় তাই ড্রেসিং রুম থেকে মিডল অর্ডারকে বার্তা দেওয়া হয়েছিল চালিয়ে খেলতে।

সেটিই বুমেরাং হয়ে যায়। চালিয়ে খেলতে গিয়ে পথ হারায় ইনিংস। সাড়ে তিনশ তো বহু দূর, হয়নি আড়াইশ রানও।

সেই রানেই দারুণ লড়াই করে বাংলাদেশ, স্পিনাররা রাখেন বড় ভূমিকা। পরে দল আক্ষেপ করেছে, একটু দেখেশুনে খেলে ২৭০-২৮০ করতে পারলেই সেদিন ধরা দিত জয়!

সেই ২০-২৫ রানের আক্ষেপ আরও তীব্র করে তুলল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পুরো পয়েন্ট না পাওয়া। প্রত্যাশত পয়েন্ট না পেয়ে অল্পের জন্য হারানো পয়েন্টের কথা আবার মনে পড়ল মাশরাফির।

“ইংল্যান্ডে বৃষ্টি যে কোনো সময়ই আসতে পারে। কিছু করার নেই। ওই ম্যাচে জিতে থাকলে আজকে এই পয়েন্ট হারানো নিয়ে এত ভাবতে হতো না। সেদিন সুযোগটা আমরাই হারিয়েছি। আজ বৃষ্টি আমাদের খেলার সুযোগই দিল না। সমীকরণ অনেক কঠিন হয়ে গেল।”

দলের সঙ্গে থাকা নির্বাচক হাবিবুল বাশার অবশ্য এত বেশি ভাবতে নারাজ। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের খেলা আছে সামনে, অন্যতম এই নির্বাচক তাই বুধবার ফিরে যাবেন দেশে। ইংল্যান্ডে আসবেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন। যাওয়ার আগে হাবিবুলের বার্তা, এখন থেকে প্রতিটি ম্যাচকেই আবশ্য জয়ের ম্যাচ ধরে মাঠে নামা।

“দেখুন আক্ষেপ করলে শুধু সেটা বাড়বেই। কিন্তু সেসবে কোনো লাভ নেই। এবার ফরম্যাট অনেক কঠিন, আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জটা বরাবরই কঠিন ছিল। এখানে আসলে কোন দলকে হারাব, কোন দলের সঙ্গে পারব না, এভাবে টার্গেট করার সুযোগ নেই। বিশেষ করে এখন থেকে যদি সামনে তাকাই। সব ম্যাচই জিততে হবে, এই মানসিকতায় মাঠে নামবে হবে।”

সেই মানসিকতার ছাপ রাখতে চান মাশরাফি। বদলে যাওয়া সমীকরণের হিসাব মেলাতে কোনো কমতি রাখতে চান না অধিনায়ক।

“প্রতি ম্যাচেই আমরা জয়ের জন্যই নামি। তার মধ্যেও কিছু হিসাব থাকে, কোন ম্যাচে জয়টা বেশি সম্ভব, কোন ম্যাচে কম। হিসাব থেকে একটি ম্যাচ ছুটে গেল, এখন হিসাবের বাইরে থেকে একটি জিততে হবে। লড়াই হবে ইনশাল্লাহ।”

শ্রীলঙ্কার ম্যাচের পর বাংলাদেশের সম্ভাব্য জয়ের লক্ষ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ। ম্যাচগুলির পাশাপাশি জিততে হবে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দুই ম্যাচের অন্তত একটি।