ক্ষুধার্ত বাংলাদেশের সামনে মরিয়া শ্রীলঙ্কা

ব্রিস্টলে দারুণ এক সুখস্মৃতি আছে বাংলাদেশ দল ও মাশরাফি বিন মুর্তজার। ইংল্যান্ডকে প্রথমবার এই মাঠেই হারিয়েছিল বাংলাদেশ, ২০১০ সালে। টেস্ট খেলুড়ে সব দলের বিপক্ষে ওয়ানডে জয়ের বৃত্ত পূরণও হয়েছিল সেই জয়ে। অধিনায়ক মাশরাফির সেটিই ছিল প্রথম জয়, তাতে ম্যাচ সেরা ছিলেন তিনিই। এবার সেই মাঠেই শুরু বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযানের পরের ধাপ, প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিব্রিস্টল থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 June 2019, 07:59 PM
Updated : 11 June 2019, 07:57 AM

মাশরাফি অবশ্য সেই সুখস্মৃতিতে ডুবে যাওয়া তো বহু দূর, ফিরেও তাকাতে চাইলেন না। এমনকি শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স যে বেশ ভালো, সেটাও মনে করতে চাইলেন না। তার ভাবনার পুরোটা জুড়ে কেবল সামনের লড়াই, লঙ্কানদের বিপক্ষে মঙ্গলবারের ম্যাচ।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দারুণ জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করলেও পরের দুই ম্যাচে সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও হেরেছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেভাবে লড়াই করতেই পারেনি।

টানা দুই হারে দলের মনোবল থাকার কথা পড়তির দিকে। তবে মাশরাফি শোনালেন উল্টো কথা। হারের পর জয়ের ক্ষুধা আরও বেড়েছে দলের, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নামতে তর সইছে না তাদের।

“দলের অবস্থা বেশ ভালো। টানা দুটি ম্যাচে হার অবশ্যই হতাশার, বিশেষ করে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি। তবে এই ধরনের টুর্নামেন্টে, আমরা জানতাম যে শেষের আগে শেষ বলে কিছু নেই। নিশ্চিত বলে কিছু নেই। তাই এখনও আশার অনেক কিছু বাকি। ছেলেরা জয়ের জন্য ক্ষুধার্ত, সবাই মুখিয়ে আছে মাঠে নামতে।”

টানা দুই ম্যাচ হারলেও দল এখনও চাঙা আছে মূলত বাস্তবতার বিচারেই। বিশ্বকাপ অভিযান নিয়ে যখন পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ, প্রথম তিন ম্যাচ থেকে একটি জয় অন্তত প্রত্যাশিত ছিল। সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে।

পরের ধাপে যে দলগুলির বিপক্ষে জয় সম্ভাব্য ধরে নিয়েছে, শ্রীলঙ্কা তাদের একটি। তবে ‌একই বাস্তবতা শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রেও। সম্ভাব্য জয়ের তালিকায় তারাও নিশ্চিতভাবে টার্গেট করেছে বাংলাদেশকে!

প্রথম তিন ম্যাচের বিবেচনায় এই কন্ডিশনে শ্রীলঙ্কা তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ হলেও তাই লড়াইটা হবে কঠিন, বলছেন মাশরাফি।

“আগের দুই ম্যাচেও জয়ের আশা ছিল, পারিনি। পরের ম্যাচেও একই আশা থাকবে। আমরা নিশ্চয়তা দিতে পারি না যে জিতবই। তবে সেরা খেলাটা খেলার চেষ্টা করতে পারি। সেরাটা খেললে জয়ের সুযোগ থাকবে।”

“বিশ্বকাপ কোনো ম্যাচেই স্বস্তির সুযোগ নেই। সব ম্যাচই কঠিন। প্রথম তিনটি ম্যাচ এমন দলের বিপক্ষে খেলেছি, যারা এই কন্ডিশনে অভ্যস্ত। আমাদের সময় লাগছে। এরপরও প্রথম জয়ের পর ভেবেছিলাম পরের দুই ম্যাচের একটি জিততে পারলে সমীকরণ সহজ হতো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পারিনি। এখন এশিয়ার দুই দল যখন খেলছে, দুই দলই ভাবছে যে এই ম্যাচ থেকে দুটি পয়েন্ট নিতে পারি। সে দিক থেকে বলা যায়, দুই দলই সমতায় আছে। এখন মাঠে যে ভালো খেলবে, তারাই জিতবে।”

দুই দলের সবশেষ লড়াইয়ে গত এশিয়া কাপে জিতেছে বাংলাদেশ। ১৯৯৬ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন, ওয়ানডেতে এক সময়ের প্রবল পরাক্রমশালী শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এক সময় পাত্তা না পেলেও সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ টক্কর দিয়েছে সমান তালে। দুই দলের সবশেষ যে ছয়টি ওয়ানডে লড়াই ফল দেখেছে, তাতে জয় সমান তিনটি করে।

তবে শ্রীলঙ্কা বড় মঞ্চের বড় দল, সেটিই দলকে মানসিকভাবে এগিয়ে রাখবে বলে মনে করেন লঙ্কানদের ব্যাটিং কোচ জন লুইস।

“বাংলাদেশ সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বেশ ভালো করেছে। আমাদের কাজটি তাই হবে বেশ কঠিন। তবে এটা বিশ্বকাপ, এখানকার বাস্তবতা ভিন্ন। আপনারা এর মধ্যে নিশ্চয়ই দেখেছেন, বিশ্বকাপ ও দ্বিপাক্ষিক সিরিজ এক নয়।”

“অবশ্যই আমাদের অপেক্ষায় কঠিন চ্যালেঞ্জ। তবে আমাদের ক্রিকেটারদের ওপরও আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস আছে। আমরা দারুণ আত্মবিশ্বাসী।”

১৯৯৬ আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরই থেমে যায়নি শ্রীলঙ্কা। ২০০৩ আসরে তারা খেলেছে সেমি-ফাইনালে, আর ২০০৭ ও ২০১১ আসরে টানা খেলেছে ফাইনাল। শিরোপা জিতেছে ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। মাশরাফি সেই বাস্তবতা জানেন। তাই জানেন, বিশ্বকাপে কাজটা সহজ নয়।

“আগের ম্যাচ বা সাম্প্রতিক ফল, এসব কোনো কাজে দেবে না। নতুন ম্যাচ, নতুন শুরু। আমাদেরকে কঠোর মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামতে হবে এবং ম্যাচ জয়ের সম্ভব সব চেষ্টা করতে হবে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে সব কিছু আমরা যতটা সম্ভব নিখুঁত করছি।”

দুই দলের এই মানসিকতা বা জয়ের তাড়নায় জল ঢেলে দিতে পারে বৃষ্টি। তবে খেলা হলে, রোমাঞ্চকর এক লড়াইয়ের প্রত্যাশা করাই যায়।