বোলিংয়ের চেয়ে হতাশার বাংলাদেশের ফিল্ডিং

ম্যাচের সেটি দ্বিতীয় ডেলিভারি। সাকিব আল হাসানের বলে হালকা পুশ করেছিলেন জেসন রয়। শর্ট মিড উইকেটে বল নাগালে থাকলেও ধরতে পারলেন না মেহেদী হাসান মিরাজ। দলের সেরা ফিল্ডারদের একজন তিনি, পরে দারুণ ক্যাচও নিয়েছেন। কিন্তু ওরকম মিস ফিল্ডিং ইনিংস জুড়েই হয়ে গেল গোটা দলের নিয়মিত চিত্র।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিকার্ডিফ থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 June 2019, 04:24 PM
Updated : 8 June 2019, 08:59 PM

বাংলাদেশের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ৩৮৬ রান তুলে ফেলা খুব বিস্ময়কর নয়। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪৮১ রান তোলে যে দল, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪৪৪, সাড়ে তিনশকে যারা বানিয়ে ফেলেছে স্বাভাবিক, বাংলাদেশের বিপক্ষে তেমন কিছু তারা করতেই পারে। কিন্তু এই ম্যাচে বড্ড দৃষ্টিকটু ছিল বাংলাদেশের গ্রাউন্ড ফিল্ডিং।

বোলিংও এমন কিছু ভালো হয়নি। সীমিত বোলিং সামর্থ্যের দল, ইংল্যান্ডের এই ব্যাটিং লাইন আপকে আটকে রাখতে হলেও প্রয়োজন ছিল সবার একসঙ্গে শতভাগ দিয়ে জ্বলে ওঠা। কিন্তু হয়েছে উল্টো। নিজের কাজটা পুরোপুরি করতে পারেননি কেউই। শুরুতে উইকেট না এলে বা নিয়মিত উইকেট না ধরা দিলে, এই ইংল্যান্ড দলকে বড় স্কোরের কমে থামানো প্রায় অসম্ভব। কিন্তু বোলিংয়ের চেয়েও এই ম্যাচে হতাশার ছিল বাংলাদেশের ফিল্ডিং।

ফিল্ডিংয়ের কারণে অন্তত ৩০-৩৫ রান বেশি করেছে ইংলিশরা। সেই রানগুলো না হলে হয়তো তাদের স্কোর থাকত সাড়ে তিনশর আশেপাশে।

এমনিতেই বাংলাদেশের স্কোয়াডে সাব্বির রহমান ছাড়া বিশ্বমানের ফিল্ডার আর কেউ নেই বললেই চলে। কিন্তু একাদশের যারা ভালো ফিল্ডার বলে বিবেচিত, এ দিন মিস ফিল্ডিংয়ের স্রোতে গা ভাসিয়েছেন তারাও। দলের সেরা ফিল্ডারদের একজন, সাকিব আল হাসানের হাতে বল রেখে দুই রান নিয়েছে ইংলিশরা। বরাবরই নিরাপদ তামিম ইকবালের হাত ফসকে বেরিয়েছে বল।

বেশ কয়েকবার ভালো ফিল্ডিং করার পাশাপাশি মিসও করেছেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন, রান আউটের সুযোগে মোহাম্মদ মিঠুন থ্রো করেছেন ভুল প্রান্তে। সৌম্য সরকার, মোসাদ্দেক হোসেন, মাহমুদউল্লাহ, কার হাত থেকে ছোটেনি বল!

কার্ডিফের মাঠে বিভিন্ন প্রান্ত একেকরকম। কোথাও কোনাকুনি একটু বেশি লম্বা, কোথাও কম। প্রয়োজন ছিল ক্ষিপ্রতা আর দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে বলকে তাড়া করা। সেখানেও ব্যর্থ ফিল্ডাররা। তাই বেশ কবারই সম্ভাব্য সিঙ্গেল হয়ে গেছে ডাবল, দুইয়ের জায়গায় তিন। দৌড়ে চার রানও হয়েছে একবার।

শেষ দিকে তামিসের একটি হাফচান্স মিস করা ছাড়া আর কোনো ক্যাচ পড়েনি। কিন্তু গ্রাউন্ড ফিল্ডিং ছিল একদমই যাচ্ছেতাই।

শুধু এই ম্যাচেই অবশ্য নয়, আগের দুই ম্যাচের একটিতে জয়, আরেকটিতে কাছে গিয়ে হারলেও বাংলাদেশের গ্রাউন্ড ফিল্ডিং ছিল না খুব সন্তোষজনক। ভালো ক্যাচ, ভালো ফিল্ডিংয়ের পাশাপাশি মিস ফিল্ডিং হয়েছে বেশ কবারই। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ ছাড়িয়ে গেছে আগের দুই ম্যাচকে।

ক্রিকেটে একটি কথা বেশ প্রচলিত। ব্যাটিংয়ে খারাপ দিন আসে, বোলিংয়েও বাজে দিন আসে। কোনো কোনোদিন সহজ ক্যাচ পড়ে যায়। কিন্তু গ্রাউন্ড ফিল্ডিং এমন একটি জায়গা, যেখানে খারাপ দিন আসার কারণ নেই। এখানে বড় দলের সঙ্গে বড় পার্থক্য হওয়ার কারণ নেই। কিন্তু বাংলাদেশ এখানে বিবর্ণ বিশ্বকাপের তিন ম্যাচেই।

ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুককে নিয়ে সন্তুষ্টির কথা নানা সময়ে বলেছেন ক্রিকেটাররা ও টিম ম্যানেজমেন্ট। অনুশীলনে এই দক্ষিণ আফ্রিকান কোচকে খাটুনি করতেও দেখা যায় অনেক। এরপরও যখন প্রত্যাশিত উন্নতি হয় না, তখন কোথাও না কোথাও ঘাটতি নিশ্চয়ই আছে!

বিশ্বকাপের প্রাথমিক পর্বে তিন ভাগের দুই ভাগ ম্যাচ এখনও বাকি। দলের সামনে আছে অনেক সম্ভাবনার হাতছানি। কিন্তু ফিল্ডিংয়ের গলদগুলো ঠিক করতে না পারলে, সেই হাতছানি মিলিয়ে যেতে সময় লাগবে না।