এমন লড়াইয়েই লুকিয়ে ভবিষ্যতের জ্বালানি

রস টেইলরের মতে, বাংলাদেশের স্কোর ছিল ‘বিলো পার’। যার মানে বলা যায়, লড়াই করার মতো স্কোরের চেয়ে কম। এরপরও লড়াই জমেছে তুমুল। ম্যাচের শেষ শটের আগ পর্যন্তও জিইয়ে ছিল উত্তেজনা। হারার আগে হার না মানার মানসিকতা - নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে যাওয়া ম্যাচের এই প্রাপ্তিই হতে পারে টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের এগিয়ে চলার পাথেয়।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিলন্ডন থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2019, 03:11 PM
Updated : 6 June 2019, 04:22 PM

দিনটি অবশ্যই বাংলাদেশের ছিল না। তাতে নিজেদের দায় অবশ্যই ছিল। আবার অনেক কিছুই যেন পক্ষে আসছিল না।

একের পর এক ব্যাটসম্যানের থিতু হয়ে উইকেট বিলিয়ে আসা সাম্প্রতিক সময়ে ছিল বিরল। পুরোনো সেই রোগ এ দিন মাথাচাড়া দিয়েছিল আবার। একটি ভালো জুটিই যেখানে গড়ে দিতে পারে বড় স্কোরের ভিত, সেখানে পাঁচটি সম্ভাবনাময় জুটির একটিও ছাড়াতে পারেনি পঞ্চাশ। 

ফিনিশারের ভূমিকায় মাহমুদউল্লাহ শুধু দলের বড় ভরসাই নন, বলা যায় বিশ্বসেরাদেরই একজন। কোনো কারণে এই ম্যাচে তার টাইমিং হচ্ছিল না, গ্যাপ পাচ্ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত উইকেটে থেকে পুষিয়ে দিতেও পারেননি। ক্রিকেটে এ রকম হয়, এমন দিন আসে।

যেমন এ দিন কিউই ব্যাটসম্যানদের ব্যাটের কানায় লেগে থার্ডম্যান বা ফাইন লেগে বল চলে গেছে বেশ কবার। অন্তত চারবার অল্পের জন্য ফিল্ডারের কাছে যায়নি সম্ভাব্য ক্যাচ। সেগুলোর একটি-দুটি নাগালে গেলেও হয়তো অন্যরকম হতে পারত ম্যাচের চিত্র।

বাংলাদেশের সফলতম জুটি যে দুজনের, উইকেটে চোখের ভাষায় যারা পড়ে নেন পরস্পরকে, সেই সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের যোগাযোগেও এ দিন ভুল বোঝাবুঝি ছিল। রান আউটের চেষ্টায় বল গ্লাভসে জমানোর আগে মুশফিকের কনুইয়ের ছোঁয়ায় পড়ে যায় বেলস। সাইফ উদ্দিনের বলে ‘ফিফটি-ফিফটি’ ওয়াইড কল বিপক্ষে চলে যায়। নো বলের সঙ্গে যার বরাবরের আড়ি, সেই মাশরাফি মুর্তজা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নো বল করে বসেন। আগের ম্যাচে জয়ের অন্যতম নায়ক মুস্তাফিজুর রহমান শেষ দিকে তেমন প্রভাব রাখতে পারেন না। তবে কোনো কিছু পক্ষে না যাওয়ার দিনেও যা কিছু করতে পেরেছে বাংলাদেশ, সেটাই বা কজন ভাবতে পেরেছিল! এখানেই ভবিষ্যতের আলোর রেখা।

টেইলর ও কেন উইলিয়ামসনের জুটির সময় কেবল একটি ফলই মনে হচ্ছিল সম্ভাব্য। শেষ পর্যন্ত সেই ফলই হয়েছে ম্যাচে, জিতেছে নিউ জিল্যান্ড। তবে তার আগে বাংলাদেশের অদম্য মানসিকতার সৌজন্যে ম্যাচ পেরিয়েছে রোমাঞ্চ-উত্তেজনার নানা অধ্যায়। কেবল ২ উইকেট হারিয়েই যে ম্যাচে জয়ের পথে ছিল নিউ জিল্যান্ড, সেই ম্যাচ শেষ পর্যন্ত জিততে পেরেছে তারা মাত্র ২ উইকেট বাকি রেখে।

ম্যাচ শেষে নিউ জিল্যান্ডের জয়ের নায়ক টেইলরের তাই অকপট ভাষ্য, “বাংলাদেশকে কৃতিত্ব দিতেই হবে, শেষ পর্যন্ত হাল ছাড়েনি তারা।”

এই ম্যাচে অনায়াসেই উড়ে যেতে পারত বাংলাদেশ। হারতে পারত বড় ব্যবধানে। কিন্তু নিজেদের অনেক ভুলে ভরা বাজে দিনেও যেভাবে লড়ে দল জাগিয়েছিল জয়ের সম্ভাবনা, ভুল শোধরানোর ম্যাচে সেই সম্ভাবনা পূর্ণতা পাবে নিশ্চিতভাবেই। জয়ের এই যে তীব্র তাড়না, সেই মানসিকতাই খুলে দেবে অনেক জয়ের পথ। এই ম্যাচের লড়াই হতে পারে পরের ম্যাচগুলার জ্বালানি।

তাই এক হারেই আতঙ্কিত না হয়ে প্রয়োজন উপলব্ধির। গলদগুলো ধরা ও কাজ করা। জয় কেড়ে নেওয়া ছোট ছোট ছিদ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া। নিজেদের সামর্থ্যে আস্থা রাখা, শক্তির জায়গায় ভরসা রাখা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যে প্রক্রিয়ায় এসেছে আগের অনেক সাফল্য, সেটি ধরে রাখা।

প্রথম ম্যাচের জয় আর দ্বিতীয় ম্যাচে কাছে গিয়ে হার, দুই ম্যাচ থেকে একটি বার্তা স্পষ্ট মিলেছে, দলের প্রক্রিয়া আপাতত ঠিক আছে। প্রয়োজন এখন মাঠের ক্রিকেটে সেই প্রক্রিয়া প্রয়োগে আরও মনোযোগী, আরও ধারাল হওয়া। প্রক্রিয়া থেকে পথচ্যুত না হলে, আবার জয়ের ঠিকানা মিলবে।