কোল্টার-নাইল, স্টার্কের নৈপুণ্যে উইন্ডিজকে হারাল অস্ট্রেলিয়া

দলের বিপদের সময় ত্রাতা হয়ে এলেন লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান ন্যাথান কোল্টার-নাইল। ঝড় তুলে গড়লেন বিশ্বকাপে আট নম্বরে নেমে সর্বোচ্চ রানের কীর্তি। বোলিংয়ে পথ দেখালেন মিচেল স্টার্ক। এবারের আসরে প্রথম বোলার হিসেবে পাঁচ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়াকে এনে দিলেন দারুণ জয়।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2019, 01:31 PM
Updated : 6 June 2019, 06:10 PM

নটিংহ্যামের ট্রেন্ট ব্রিজে বৃহস্পতিবার ক্যারিবিয়ানদের ১৫ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় জয় পেল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ২৮৮ রান তাড়ায় ৯ উইকেটে ২৭৩ রানে থামে জেসন হোল্ডারের দল।

অস্ট্রেলিয়ার জয়ের দুই নায়ক কোল্টার-নাইল ও স্টার্ক। পাল্টা আক্রমণে ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ে কোল্টার-নাইল ৬০ বলে খেলেন ৯২ রানের ঝড়ো ইনিংস। বাঁহাতি পেসার স্টার্ক ৪৬ রানে নেন ৫ উইকেট। ৪৬তম ওভারে জোড়া আঘাতে কার্লোস ব্র্যাথওয়েট ও হোল্ডারকে ফিরিয়ে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেন তিনি।

শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়ার পেসারদের দারুণ বোলিংয়ে রোমাঞ্চকর ম্যাচে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচের শুরুতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান পেসাররা। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় ওভারে গতিময় পেসার ওশান টমাসের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরেন অ্যারন ফিঞ্চ।

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের আগের ম্যাচের নায়ক ডেভিড ওয়ার্নারকে ফেরানোর পর শূন্য রানে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে বিদায় করেন শেলডন কটরেল। তার দুই উইকেটের মাঝে উসমান খাওয়াজাকে কট বিহাইন্ড করেন আন্দ্রে রাসেল। ৩৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।

ক্রিজে গিয়েই শট খেলতে শুরু করেছিলেন মার্কাস স্টয়নিস। তাকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি জেসন হোল্ডার।

শুরু থেকে আস্থার সঙ্গে খেলছিলেন স্মিথ। নড়বড়ে ছিলেন কিপার-ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স কেয়ারি। ১৫তম বলে খোলেন রানের খাতা। প্রথম ২৬ বলে করেন ৩ রান। ধীরে ধীরে নিজেকে ফিরে পেয়ে বাড়ান রানের গতি। ৭ চারে ৪৫ রান করা কেয়ারিকে কট বিহাইন্ড করে ৬৮ রানের জুটি ভাঙেন রাসেল।

ক্রিজে গিয়েই বোলারদের ওপর চড়াও হন কোল্টার-নাইল। স্মিথও ততক্ষণে খেলতে শুরু করেছেন শট। দ্রুত জমে যায় সপ্তম উইকেট জুটি। বিশ্বকাপে এই উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার আগের সেরা ৭০ ছাড়িয়ে তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলেন তারা।

শেলডন কটরেলের দুর্দান্ত এক ক্যাচে স্মিথের বিদায়ে ভাঙে ১০২ রানের জুটি। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৭ চারে ৭৩ রান করেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক।

লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নিয়ে দলকে তিনশ রানের কাছে নিয়ে যান কোল্টার-নাইল। আশা জাগিয়েছিলেন ওয়ানডেতে আট নম্বরে ক্রিস ওকসের রেকর্ড অপরাজিত ৯৫ ছাড়িয়ে যাওয়ার। তবে এর আগেই তাকে থামান ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। ওয়ানডেতে নিজের আগের সেরা ৩৪ ছাড়িয়ে আট চার ও চার ছক্কায় ৯২ রান করেন কোল্টার-নাইল।

জোড়া আঘাতে অস্ট্রেলিয়াকে ৪৯তম ওভারে গুটিয়ে দেওয়া ব্র্যাথওয়েট ৬৭ রানে নেন ৩ উইকেট। রাসেল, কটরেল ও টমাস নেন দুটি করে উইকেট।

রান তাড়ায় শুরুতেই এভিন লুইসকে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তৃতীয় ওভারে দুইবার রিভিউ নিয়ে টিকে যান অন্য ওপেনার ক্রিস গেইল। পঞ্চম ওভারে রিভিউ নিলেও কাজ হয়নি, এবার এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান তিনি।

গেইল আউট হওয়ার আগের বলটিতে ওভারস্টেপ করেছিলেন মিচেল স্টার্ক। নজর এড়িয়ে যাওয়ায় ‘নো’ ডাকেননি আম্পায়ার। তিনি ভুল না করলে আউট হওয়া বলটিতে ফ্রি হিট পেতেন ক্যারিবিয়ান ওপেনার। 

ক্রিজে গিয়েই শট খেলতে শুরু করেন নিকোলাস পুরান। সাবধানী ছিলেন শেই হোপ। বোলারদের ওপর চড়াও হওয়া পুরানকে থামান অ্যাডাম জ্যাম্পা। ভাঙে ৫৮ রানের জুটি।

প্রথম ৫১ বলে ১৬ রান করা হোপ ৫২তম বলে হাঁকান প্রথম বাউন্ডারি। ধীরে ধীরে বাড়ান রানের গতি। তবে মন্থর শুরুটা পুষিয়ে নিতে পারেননি এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। ৭ চারে ফিরেন ১০৫ বলে ৬৮ রান করে। এর আগেই রান আউট হয়ে ফিরে যান শিমরন হেটমায়ার।

দুইবার রিভিউ নিয়ে বেঁচে যাওয়া জেসন হোল্ডার শুরু থেকে খেলছিলেন আস্থার সঙ্গে। রাসেল যখন ক্রিজে আসেন তখন ৯০ বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ছিল ৯৯ রান। ছক্কায় রানের খাতা খুলেছিলেন রাসেল। তবে ঝড় তোলার আগেই তাকে থামান স্টার্ক।

৪৬তম ওভারে বোলিংয়ে ফিরে ব্র্যাথওয়েটকে ফিরিয়ে বাঁহাতি এই পেসার ভাঙেন বিপজ্জনক হয়ে ওঠা জুটি। সেই ওভারে সাত চার ও এক ছক্কায় ৫১ রান করা হোল্ডারকে ফিরিয়ে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন অস্ট্রেলিয়ার দিকে। 

ম্যাচের শেষ চার বলে চারটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে পরাজয়ের ব্যবধান কমান অ্যাশলি নার্স।

বোলিংয়ে ভালো করতে পারেননি কোল্টার-নাইল। ৭০ রান দিয়ে থাকেন উইকেটশূন্য। তবে ৯২ রানের দারুণ ইনিংস তাকে এনে দেয় ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া: ৪৯ ওভারে ২৮৮ (ওয়ার্নার ৩, ফিঞ্চ ৬, খাওয়াজা ১৩, স্মিথ ৭৩, ম্যাক্সওয়েল ০, স্টয়নিস ১৯, কেয়ারি ৪৫, কোল্টার-নাইল ৯২, কামিন্স ২, স্টার্ক ৮, জ্যাম্পা ০*; টমাস ১০-০-৬৩-২, কটরেল ৯-০-৫৬-২, রাসেল ৮-০-৪১-২, ব্র্যাথওয়েট ১০-০-৬৭-৩, হোল্ডার ৭-২-২৮-১, নার্স ৫-০-৩১-০)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ২৭৩/৯ (গেইল ২১, লুইস ১, হোপ ৬৮, পুরান ৪০, হেটমায়ার ২১, হোল্ডার ৫১, রাসেল ১৫, ব্র্যাথওয়েট ১৬, নার্স ১৯*, কটরেল ১, টমাস ০*; স্টার্ক ১০-১-৪৬-৫, কামিন্স ১০-৩-৪১-২, কোল্টার-নাইল ১০-০-৭০-০, ম্যাক্সওয়েল ৬-১-৩১-০, জ্যাম্পা ১০-৫৮-১, স্টয়নিস ৪-০-১৮-০)

ফল: অস্ট্রেলিয়া ১৫ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: ন্যাথান কোল্টার-নাইল