শেষ মুহূর্তে ভাবনায় বদল না এলে ম্যাচের আগের দিন এই সিদ্ধান্ত মোটামুটি চুড়ান্ত করে ফেলেছে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে চোট পাওয়া মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনকে পাওয়া নিশ্চিত নয় এখনও। ম্যাচের দিন সকালে তার অবস্থা বুঝে নেওয়া হবে সিদ্ধান্ত।
মোসাদ্দেককে জায়গা দিতে একাদশের বাইরে থাকতে হচ্ছে সাব্বির রহমানকে। সাইফ না খেললে একাদশে ঢুকেবেন রুবেল হোসেন।
মোসাদ্দেককে একাদশে রাখার পেছনে কাজ করেছে অনেকগুলো ব্যাপার। একই উইকেটে চারদিনের মধ্যে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলা অন্যতম বড় কারণ। সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে স্পিনে আরেকটি বিকল্প চায় দল।
মাহমুদউল্লাহ বোলিং করতে পারলে হয়তো সাব্বিরই থাকতেন একাদশে। তবে কাঁধের চোটের কারণে বোলিং করতে পারছেন না মাহমুদউল্লাহ। গত ২৪ মে কার্ডিফে অনুশীলনে বোলিং করার পর ব্যথা বেড়ে যাওয়ায় অনুশীলনেও আর বল হাতে নেননি তিনি। তাই খুঁজতে হয়েছে স্পিনে বিকল্প।
দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং অর্ডারে বেশ কজন বাঁহাতি বলে অফ স্পিনে শক্তি বাড়াতে চেয়েছে দল। প্রোটিয়াদের ইনিংস শুরু করবেন বাঁহাতি কুইন্টন ডি কক। মিডল অর্ডারে আছেন জেপি দুমিনি, লেট মিডল অর্ডারে আন্দিলে ফেলুকোয়ায়ো। আগের ম্যাচে না খেললেও বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে পারেন আরেক বাঁহাতি ডেভিড মিলার। সব মিলিয়েই মোসাদ্দেক চলে এসেছেন সমীকরণে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মোসাদ্দেককে একাদশে রাখার ভাবনা অবশ্য অনেক আগে থেকেই ছিল। তবে তখন মূলত মিরাজের বিকল্প হিসেবেই ভাবা হয়েছে তাকে। ওভালের উইকেট বিবেচনায় বাড়তি স্পিনারের জন্য মিরাজ ও মোসাদ্দেক দুজনই থাকছেন।
সাব্বিরকে বিশ্বকাপ দলে নেওয়ার পেছনে মূল কারণ ছিল শেষ দিকে ফাস্ট বোলারদের বিপক্ষে ঝড় তোলার সামর্থ্য। এই জায়গায় তিনি মোসাদ্দেকের চেয়ে এগিয়ে পরিষ্কারভাবেই। তবে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ম্যাচ জেতানো ঝড়ো ফিফটিতে মোসাদ্দেক জানিয়ে দিয়েছেন, তিনিও প্রস্তুত। এটিও খানিকটা কাজ করেছে তাকে একাদশে আনার পেছনে।
ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন মোসাদ্দেককে নিয়ে।
“আমরা ব্যবহৃত উইকেটে খেলব। প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ড এখানে খেলেছে। ওভালের উইকেট ব্যাটিং সহায়কই হয়, ইংল্যান্ড তিনশর ওপরে রান করেছে। তবে যেহেতু ব্যবহার হওয়া উইকেট, স্পিনারদের ভূমিকা থাকে কিনা, এটা দেখার ব্যাপার আছে। আগের ম্যাচে বল গ্রিপ করেছে উইকেটে। সেটা আবার হলে আমাদের জন্য ইতিবাচক দিক। আমাদের পেসারদের জন্য, স্পিনারদের জন্যও ইতিবাচক।”
“সেক্ষেত্রে একজন বাড়তি স্পিন অপশন রাখা যায় কিনা, আমরা সেটা ভাবছি। মাহমুদউল্লাহ কিছুদিন আগে অনুশীলনে বল করার পর প্রচণ্ড ব্যথা অনভব করেছে। পরে আর বল করতে পারেনি। তার ব্যাটিং দলের জন্য খুবই জরুরি, সেটিকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না আমরা। তাই একজন বাড়তি স্পিনার রাখা যায় কিনা, আমরা ভাবছি।”
মঙ্গলবার কার্ডিফে ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে পিঠে চোট পাওয়া সাইফের খেলা নিয়ে সংশয় কাটেনি। আগের দিন বিশ্রামে থাকলেও শনিবার অনুশীলনে বোলিং করেছেন সাইফ। তবে আড়ষ্ঠতা কাটেনি বলেই মনে হয়েছে, জড়তা ছিল বোলিংয়ে। তার জন্য ম্যাচের সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবে দল।
তামিম ইকবালের সঙ্গে ইনিংস শুরু করবেন সৌম্য সরকার। তিনে সাকিব আল হাসান। সবশেষ দুটি সুযোগে দারুণ ব্যাটিং করলেও লিটন দাসকে থাকতে হবে বাইরে। অধিনায়ক জানালেন, অনেক বদল করে দলের মানসিকতা অস্থির করে তুলতে চান না তারা।
“যারাই সুযোগ পেয়েছে, ভালো খেলেছে। তার মানে এই না যে পুরো পরিকল্পনা থেকে বের হয়ে যেতে হবে। দলকে অস্থির করার মানে নেই। যেটা আমাদের পরিকল্পনা ছিল, সেটাতেই থাকব। আসলে আমাদের দেশে তো রব ওঠে, যে ভালো খেলে, তাকেই নাও। পজিশন ভাবে না। পজিশন তো খুব গুরুত্বপূর্ণ। পজিশন ঠিক না থাকলে ফর্মে থাকা ক্রিকেটার দিয়ে লাভ নেই। কে কোন পজিশনে বেশি কার্যকর, সেটি ভাবতে হবে।”
“আমরা যে মানসিকতা নিয়ে এসেছিলাম, প্রথম ম্যাচে যাদের চিন্তা করেছিলাম, তাদের নিয়েই খেলছি। টুর্নামেন্ট অনেক লম্বা, সবার সুযোগ আসবে নিজেকে মেলে ধরার।”
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক হোসেন, মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন/রুবেল হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুস্তাফিজুর রহমান।