বিশ্বকাপ না জেতা সেরা ১০ ক্রিকেটার

বিশ্বকাপ জেতা কতটা কঠিন তা শচীন টেন্ডুলকারের চেয়ে ভালো আর কে জানেন! ষষ্ঠবারের চেষ্টায় নিজের শেষ বিশ্বকাপে আকাঙ্ক্ষিত স্বাদ পান সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান। ১৯৯৯ সাল থেকে পাঁচ আসরের চারটিতেই চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। তাই বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন পূরণ না করেই অবসরে গেছেন সময়ের সেরা তারকাদের অনেকেই। সে তালিকায় আছেন ব্রায়ান লারা, কুমার সাঙ্গাকারা, জ্যাক ক্যালিসদের মতো সর্বকালের অন্যতম সেরা সব ক্রিকেটাররাও। বিশ্বকাপ না জেতা তারকাদের থেকে সেরা দশজনকে বেছে নিয়েছে আইসিসি।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2019, 02:37 PM
Updated : 29 May 2019, 05:48 PM

গ্রাহাম গুচ

বিশ্বকাপ জেতার জন্য আর কি করতে পারতেন গ্রাহাম গুচ! ইংল্যান্ডের সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ক্রিকেটার খেলেছেন তিনটি বিশ্বকাপের ফাইনালে, কিন্তু একবারও শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে পারেননি। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের সেরা ইনিংসগুলোর মধ্যে একটি ধরা হয় ১৯৮৭ বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে মুম্বাইয়ে ভারতকে হারানোর ম্যাচে তার সেঞ্চুরিকে। ১৯৯২ সালের আসরে ছিলেন দলের অধিনায়ক। প্রতিপক্ষ পাকিস্তানকে গ্রুপ পর্বে ৭৪ রানে অলআউট করা ইংলিশরা সেবার ফাইনালে হারে ২২ রানে।

আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলেছেন ১৯৭৬ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তার ২২ হাজার ২১১ রান এখনও বিশ্বরেকর্ড। বিশ্বকাপ না জেতা ক্রিকেটারদের তালিকায় তার নাম স্বভাবতই সবার ওপরে থাকবে।

ইয়্ন বোথাম

আরেক ইংলিশ ক্রিকেটার ইয়ান বোথাম দুইবার ফাইনাল খেলে শিরোপার স্বাদ পাননি। ক্যারিয়ার জুড়ে বল হাতে ধারাবাহিক সর্বকালের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার ১৯৯২ বিশ্বকাপে ছিলেন নিজের সেরা ছন্দে। ১০ ম্যাচে নেন ১৬ উইকেট। টপ অর্ডারে পিঞ্চ হিটিং থেকে শুরু করে লোয়ার মিডল অর্ডারে ঝড়ো ব্যাটিং, সবখানেই ছিলেন কার্যকর।

ওয়াকার ইউনিস

ওয়ানডে ক্রিকেটে তার চেয়ে বেশি পাঁচ উইকেট শিকার করতে পারেননি আর কোনো বোলার। পুরোনো বলে রিভার্স সুইংয়ে বোকা বানানোর সঙ্গে নতুন বলে গতিতে পরাস্ত করেছেন ব্যাটসম্যানদের। আরেক তারকা ওয়াসিম আকরামের সঙ্গে জুটি বেঁধে আতঙ্ক ছড়িয়েছেন ক্যারিয়ার জুড়ে। তবে বিশ্বকাপ জিততে না পারার আক্ষেপ নিয়েই শেষ হয়েছে ওয়াকারের ক্যারিয়ার। চোটে পড়ায় ছিলেন না অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের জেতা ১৯৯২ বিশ্বকাপে। এক আসর পর ১৯৯৯ সালে ফাইনালে খেললেও অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে ফিরতে হয় খালি হাতেই।

সৌরভ গাঙ্গুলী

১৯৯৯ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা এই অধিনায়ক। ২০০৩ সালে তার অধিনায়কত্বে ২০ বছর পর বিশ্বমঞ্চের ফাইনালে পা রাখে ভারত। পুরো আসরে তিন সেঞ্চুরি করে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন সৌরভ। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ১২৫ রানের বড় হারে থামে শিরোপা স্বপ্ন। সৌরভের মূল অবদান ছিল ভারতকে একটি লড়াকু দলে পরিণত করা। বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারে ২২ ম্যাচে প্রায় ৫৬ গড়ে ১ হাজার ৬ রান করা সৌরভের শেষ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে যায় ভারত।

ব্রায়ান লারা

ক্রিকেট নিয়ে খুব বেশি খোঁজ রাখেন না এমন সমর্থকদের কাছেও টেস্ট ক্রিকেটে ব্রায়ান লারার রেকর্ডগুলো অপরিচিত নয়। তবে দীর্ঘতম সংস্করণের মতোই পোর্ট অব স্পেনের এই রাজপুত্রের ওয়ানডে ক্যারিয়ারও যথেষ্ট সমৃদ্ধ। তার আগে ওয়ানডেতে ১০ হাজার রান করা ব্যাটসম্যানের সংখ্যা খুব কম। এমনকি এখন পর্যন্ত ক্রিকেটের এই সংস্করণে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় দশে আছেন লারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ২৯৯ ওয়ানডে খেলা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান তিনবার ইনিংসে ১৫০ এর বেশি রান করেছেন।

ল্যান্স ক্লুজনার

মারকুটে ব্যাটিং ও কার্যকর মিডিয়াম ফাস্ট বোলিং মিলে দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার বিশ্বমঞ্চে প্রথম আবির্ভাবেই সাড়া ফেলেন। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে আসরের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন এই ক্রিকেটার। পরের বছর উইজডেনের বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হন ক্লুজনার। ব্যাটিংয়ে ৪১ ও বোলিংয়ে ২৯ গড় নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করেন তিনি।

জ্যাক ক্যালিস

এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ না জেতায় সোনালী এই শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি সর্বকালের অন্যতম সেরা আরেক প্রোটিয়া অলরাউন্ডার ক্যালিসেরও। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২৭৩ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি আছে ১১ হাজারের ওপরে রান। ক্রিকেটের এই সংস্করণের ইতিহাসে ১০ হাজারের বেশি রান ও ২৫০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি আছে আর শুধু সনাৎ জয়াসুরিয়ার।

ওয়ানডেতে ১৭টি সেঞ্চুরি আর ৮৬টি ফিফটির মালিক ক্যালিস বিপর্যয়ে ইনিংস মেরামত থেকে ভালো শুরুর পর ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নেওয়া সব ভূমিকাতেই ছিলেন সফল।

কুমার সাঙ্গাকারা

ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ২০১৫ বিশ্বকাপে টানা চার ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন কুমার সাঙ্গাকারা। ক্যারিয়ারের শুরুতে উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান সাঙ্গাকারা শেষদিকে খেলেছেন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২৫ সেঞ্চুরিতে আছে ১৪ হাজারের বেশি রান। এই সংস্করণে তার চেয়ে বেশি রান আছে শুধু টেন্ডুলকারের। শ্রীলঙ্কার সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান খেলেছেন ২০০৭ ও ২০১১ সালে টানা দুই বিশ্বকাপের ফাইনাল। দুই আসর মিলে তার গড় ছিল পঞ্চাশের ওপরে। তবে শিরোপা জয় করতে না পারার আক্ষেপ ঘোচেনি বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের।

এবি ডি ভিলিয়ার্স

প্রায় ৫৪ গড়ে আর একশর বেশি স্ট্রাইক রেটে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সাড়ে ৯ হাজারের বেশি রান করা ভিলিয়ার্স আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান। ৩১ বলে করা ওয়ানডে ক্রিকেটের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডও তার দখলে। এই সংস্করণে দ্রুততম ফিফটি ও দেড়শ রানের কীর্তিও তার। পরিসংখ্যানের বাইরে ডেথ ওভারে প্রতিপক্ষ বোলারদের ঘুম কেড়ে নেওয়া, একা হাতে ম্যাচ বের করার ক্ষমতাসহ উদ্ভাবনী সব শটের জন্য ক্রিকেট ভক্তরা মনে রাখবেন ডি ভিলিয়ার্সকে। টেনিস, হকি ও গলফে দক্ষ এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য ফিল্ডিং সাজাতে হিমশিম খেয়েছেন প্রতিপক্ষের সব অধিনায়কই।

শহিদ আফ্রিদি

পাকিস্তানের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার প্রথম আলোচনায় এসেছিলেন ১৯৯৬ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩৭ বলে সেসময়ের দ্রুততম সেঞ্চুরি করে। পরবর্তীতে লেগ স্পিনেও যথেষ্ট সফলতা পেয়েছেন ডানহাতি এই ক্রিকেটার। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে আট হাজারের বেশি রানের পাশাপাশি ৩৯৫টি উইকেট আছে তার ঝুলিতে। এই সংস্করণের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীদের তালিকায় পাঁচে আছেন তিনি। তবে পাঁচটি বিশ্বকাপ খেললেও শিরোপা জিততে পারেননি।