বড় হারেও প্রাপ্তি দেখছেন মাশরাফি

লোকেশ রাহুলের রান পাওয়া, কুলদীপ যাদবের ফর্মে ফেরা এবং আরও কিছু। বিরাট কোহলি দারুণ খুশি। ম্যাচ থেকে যা চাওয়ার ছিল, সবকটিতেই টিক চিহ্ন দিতে পেরেছেন ভারত অধিনায়ক। আর মাশরাফি বিন মুর্তজা? এমন বড় হারের ম্যাচে প্রাপ্তি খুব বেশি থাকার কথা নয়। কিন্তু বাংলাদেশ অধিনায়কের ঝুলি পূর্ণ না হলেও শূন্য নয়!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিকার্ডিফ থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2019, 03:24 AM
Updated : 29 May 2019, 03:24 AM

এমনিতে হেরে যাওয়া ম্যাচে ইতিবাচক কিছু খুঁজে বের করার দিন বাংলাদেশের ক্রিকেট অনেক আগেই পেরিয়ে এসেছে। তবে প্রস্তুতি ম্যাচ বলেই সামনের পথচলার সঞ্চয় কিছু পেলেন মাশরাফি।

৯৫ রানের ব্যবধান বলছে, ম্যাচটি ছিল যথেষ্টই একতরফা। আদতে, ম্যাচের প্রথম ইনিংসের প্রথম ভাগে দাপট ছিল বাংলাদেশেরই। ভারতের শক্তিশালী টপ অর্ডারকে যথেষ্টই ভুগিয়েছে বাংলাদেশের পেস আক্রমণ। মুস্তাফিজুর রহমান ও মাশরাফি বিন মুর্তজা নতুন বলে যে সুর বেঁধে দেন, সেই ছন্দেই তাল মিলিয়েছেন বোলার রুবেল হোসেন ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। ২২ ওভার শেষে ভারতের রান ছিল ৪ উইকেটে ১০২। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মাশরাফি জানালেন, ম্যাচ থেকে তার বড় প্রাপ্তি এই সময়টা।

“আয়ারল্যান্ডে নতুন বলে আমরা সেভাবে উইকেট নিতে পারিনি। তাই পেস বোলিংয়ে ভালো শুরুর ইচ্ছে ছিল। মুস্তাফিজ দুর্দান্ত বোলিং করেছে। আমি চেষ্টা করেছি। রুবেল ও সাইফের কাছ থেকে যা চেয়েছি, অনেকটাই পেয়েছি।”

মু্স্তাফিজকে ইদানিং নতুন বলে খুব একটা দেখা না গেলেও এ দিন আনা হয়েছে অধিনায়কের সুনির্দিষ্ট ভাবনা থেকে।

“আমাদের মনে হয়েছে, নতুন বলে উইকেট নেওয়ার মতো একজনকে দরকার। এই জায়গায় ঘাটতি থেকে যাচ্ছিল। মুস্তাফিজ আজ কাজটা দারুণভাবে করেছে। বেশি স্বস্তি পাচ্ছি যে সে তার পুরোনো গতির অনেকটা ফিরে পেয়েছে। ১৪০ কিলোমিটার তুলেছে গতি। মুস্তাফিজ নিজের মতো বোলিং করলে আমাদের বোলিংয়ের ধারই অন্যরকম।”

এই ম্যাচ নিশ্চিত করে দিয়েছে, দুই পেসারে বোলিং শুরু হলে বিশ্বকাপের শুরুর দিকে অন্তত বাংলাদেশের নতুন বল সামলাবেন মাশরাফির সঙ্গে মুস্তাফিজ। এছাড়া তেমন কোনো প্রাপ্তি এই ম্যাচ থেকে সেভাবে ধরা পড়ে না সাধারণ চোখে। তবে অধিনায়কের নজরে এসেছে আরও কিছু।

“মুশফিক ভালো খেলার ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে, যেটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। লিটন নিজের কাজ করে রাখছে। দুজনই সেঞ্চুরি করলে ভালো লাগত। রিয়াদ আর কিছু সময় টিকলে হয়তো আমরা তিনশ করতে পারতাম। তবে খুবই হাই কোয়ালিটি বোলিং খেলেছি আমরা, যে প্র্যাকটিস খুব কাজে দেবে।”

একদমই চাপহীন এই ম্যাচে সাড়ে তিনশ রান তাড়া করার বড় সুযোগ ছিল বাংলাদেশের সামনে। তবে রান তাড়ায় সেভাবে সম্ভাবনাই জাগাতে পারেনি দল। এত বড় রান তাড়ায় যে তাড়না থাকা উচিত মানসিকতায়, সেটির প্রতিফলন পড়েনি ব্যাটিংয়ে। মাশরাফি এখানে মেনে নিলেন নিজেদের ব্যর্থতা।

“জোড়ায় জোড়ায় উইকেট হারালে সাড়ে তিনশ তাড়া করা কঠিন। লিটন ও মুশফিক সেট হওয়ার পর মারতে শুরু করেছিল। তখনই দুজন আউট হয়ে গেছে। সাকিব-মিঠুন দুজনই প্রথম ডেলিভারিটি অসাধারণ পেয়ে আউট হয়ে গেছে।”

ম্যাচের আগে অধিনায়ক বলেছিলেন, ভারতের মতো দলের বিপক্ষে খেলে হারলেও বিশ্বকাপের আড়ালে ঘাটতির জায়গাগুলো ফুটে ওঠে। এই ম্যাচে যেমন প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে স্পিন আক্রমণের দৈন্য। তবে নিজের পরীক্ষিত স্পিন আক্রমণে ভরসা রাখছেন মাশরাফি।

“সাকিবের একটি বাজে দিন গেছে। তবে দারুণভাবে ফেরার মতো অভিজ্ঞতা তার আছে। আমার বিশ্বাস, এবারের বিশ্বকাপে সে দারুণ কিছু করবে। মিরাজও গত কিছুদিনে ভালো করেছে। মোসাদ্দেকের বোলিং ফিগার দেখে খুব খরুচে মনে হলেও ওর শুরুটা খারাপ ছিল না।”

“যদি প্রপার ম্যাচ খেলতাম আমরা, তাহলে অবশ্যই সবাই দায়িত্ব পালন করতাম। তখন আমার মনে হয়, তিনশ মধ্যে হয়তো আটকে রাখতে পারতাম। কিন্তু অনেক ম্যাচেই এমন পরিস্থিতিতে বোলিং করতে হবে স্পিনারদের। ব্যাটসম্যানদের ঝড় থামাতে হবে। সেই প্র্যাকটিসটা স্পিনারদের সবাইকে করাতে চেয়েছি।”

ভারতের বিপক্ষে বড় হার তাই মাশরাফির মতে প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত নয়, বরং সহযোগিতা করছে। অপেক্ষা এবার মূল আসর শুরুর। রোববারই ওভালে বাংলাদেশের সামনে থাকবে দক্ষিণ আফ্রিকান চ্যালেঞ্জ।