ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অবস্থান আট নম্বরে। গত বছর জিম্বাবুয়েতে হয়ে যাওয়া বাছাই পর্বে শিরোপা জিততে পারেনি দলটি, আফগানিস্তানের কাছে হেরে হয় রানার্সআপ। বাছাই পর্ব সহজ ছিল না দলটির জন্য। স্কটল্যান্ডের কাছে হারলে দর্শক হয়ে থাকতে হতো চূড়ান্ত পর্বে। ভাগ্যের ছোঁয়ায় বেঁচে যায় তারা। ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে ৫ রানে জিতে চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করে ক্যারিবিয়ানরা।
যখন দেশকে বিশ্বকাপে নিতে লড়ছিলেন জেসন হোল্ডাররা তখন অনেক তারকা ক্রিকেটার বেছে নিয়েছিলেন পাকিস্তানের ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট পিএসএল। তাদের কেউ কেউ ফিরেছেন বিশ্বকাপ দলে। তবে চিত্রটা তেমন পাল্টায়নি। ভারতে আইপিএলে খেলার জন্য অনেক তারকা ক্রিকেটারই ছিলেন না আয়ারল্যান্ডে স্বাগতিক ও বাংলাদেশের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজের দলে, যে টুর্নামেন্টে খেলে মূল অভিযানের আগে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াটা সেরে নিতে পারতেন তারা।
র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকায় ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্যর্থতার ছাপ পড়েছে ক্রিকেটারদের র্যাঙ্কিংয়েও। ব্যাটসম্যানদের র্যাঙ্কিংয়ে সেরা দশে আছেন কেবল শেই হোপ। সেরা ৭০ এ তাদের খেলোয়াড় আছে মোটে তিন জন। ২৯ নম্বরে শিমরন হেটমায়ার, ৪৬ নম্বরে গেইল। বোলিংয়ে সেরা দশের ধারে কাছে নেই কেউ। সেরা অবস্থান অধিনায়ক জেসন হোল্ডারের, ৩৯তম।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সম্ভাবনা তবুও উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। বিস্ফোরক সব ব্যাটসম্যান আছে তাদের। আছে গতিময় বোলার, কার্যকর অলরাউন্ডার। একটু যা ঘাটতি তা কেবল স্পিন বোলিংয়ে। কারণ, দলে নেই অফ স্পিনার সুনিল নারাইন ও লেগ স্পিনার দেবেন্দ্র বিশু।
অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মারলন স্যামুয়েলস, কাইরন পোলার্ডের অভাব হয়তো অনুভব করবে দলটি। ডোয়াইন ব্রাভো আবার কিছু দিন আগে গেছেন অবসরে।
টেস্ট দলের মূল বোলার গতিময় পেসার শ্যানন গ্যাব্রিয়েলকে ওয়ানডেতে ফিরিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সঙ্গে আছে কেমার রোচ, ওশান টমাস ও শেলডন কটরেল। গতির ঝড় তুলে প্রতিপক্ষকে চমকে দেওয়ার সামর্থ্য আছে ক্যারিবিয়ান পেস ব্যাটারির।
তিন পেস বোলিং অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল, হোল্ডার ও কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের উপস্থিতিতে দলটি দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ। ব্যাটিং ও বোলিং গভীরতা যে কোনো প্রতিপক্ষের জন্যই হতে পারে হুমকি। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন হোল্ডার। গত বিশ্বকাপের পর থেকে দেশের সবচেয়ে বেশি উন্নতি করা ক্রিকেটার তিনিই। এই সময়ে ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ৬২ ম্যাচে নিয়েছেন ৭৫ উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের আর কেউ নিতে পারেননি ৫০ উইকেটও। এই সময়ে হোল্ডারের (১ হাজার ২৫৭) চেয়ে বেশি রান করেছেন কেবল হোপ (২ হাজার ২৪৭)।
নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলার অপেক্ষায় থাকা গেইলের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করতে পারেন এভিন লুইস। পরে আছেন হোপ, ড্যারেন ব্রাভো, হেটমায়ার, নিকোলাস পুরান। ইংল্যান্ডের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে যেকোনো বোলিংকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার সামর্থ্য আছে তাদের।
২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে মাত্র দুটি ওয়ানডে খেলেছেন রাসেল। তবে আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে তার বিস্ফোরক ব্যাটিং আশা দেখাচ্ছে দলকে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবশেষ সিরিজে গেইল দেখিয়েছেন এখনও কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারেন তিনি। বিশ্বকাপের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান মুখিয়ে আছেন শেষটা রাঙাতে।
বিশ্ব জুড়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে রাজত্ব করছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়রা। এই সংস্করণে সবশেষ তিন আসরের দুটিতেই শিরোপা জিতেছে তারা। এখনকার ওয়ানডেতে টি-টোয়েন্টির দারুণ প্রভাব। সেই সংস্করণের সবচেয়ে কুশলী খেলোয়াড়রা এবার নিচ্ছেন দলকে তৃতীয় বিশ্বকাপ জেতানোর চ্যালেঞ্জ।
গুরুত্বপূর্ণ যিনি: ওশান টমাস
স্রেফ গতির জন্য ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন টমাস। নিজের দিনে কি করতে পারেন তা দেখিয়েছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ওয়ানডেতে। ২১ রানে পাঁচ উইকেট নিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন ইংলিশদের। সহায়ক কন্ডিশনে হতে পারেন ধ্বংসাত্মক। ইংল্যান্ডের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটেও গতির ঝড় তুলে কাঁপিয়ে দিতে পারেন ব্যাটসম্যানদের।
কোচ: ফ্লয়েড রেইফার
বিশ্বকাপের দুই মাসেরও কম সময় আগে নতুন কোচকে দায়িত্ব দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট। রিচার্ড পাইবাসের অধীনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জেতে তারা, ড্র করে ওয়ানডে সিরিজ। এরপরও পাইবাসকে সরিয়ে গত এপ্রিলে ফ্লয়েড রেইফারকে বেছে নেয় বোর্ড।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের কোচ ছিলেন সাবেক অধিনায়ক রেইফার। ২০০৯ সালে কম্বাইন্ড ক্যাম্পাস ও কলেজেস দলের কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। দলটি তার কোচিংয়ে গত বছর জিতেছে আঞ্চলিক ওয়ানডে টুর্নামেন্টের শিরোপা। এবার রেইফারের সামনে অপেক্ষা করছে আরও বড় চ্যালেঞ্জ, ক্যারিবিয়ানদের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল: জেসন হোল্ডার (অধিনায়ক), ফ্যাবিয়ান অ্যালেন, ড্যারেন ব্রাভো, কার্লোস ব্র্যাথওয়েট, শেলডন কটরেল, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, ক্রিস গেইল, শিমরন হেটমায়ার, শেই হোপ (উইকেটরক্ষক), এভিন লুইস, অ্যাশলি নার্স, নিকোলাস পুরান (উইকেটরক্ষক), কেমার রোচ, আন্দ্রে রাসেল, ওশান টমাস।
বিশ্বকাপ রেকর্ড:
১৯৭৫: চ্যাম্পিয়ন
১৯৭৯: চ্যাম্পিয়ন
১৯৮৩: রানার্সআপ
১৯৮৭: গ্রুপ পর্ব
১৯৯২: গ্রুপ পর্ব
১৯৯৬: সেমি-ফাইনাল
১৯৯৯: গ্রুপ পর্ব
২০০৩: গ্রুপ পর্ব
২০০৭: সুপার এইট
২০১১: কোয়ার্টার-ফাইনাল
২০১৫: কোয়ার্টার-ফাইনাল
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বকাপ সূচি:
তারিখ, বার | বাংলাদেশ সময় | প্রতিপক্ষ | ভেন্যু |
৩১ মে, শুক্রবার | বেলা সাড়ে তিনটা | পাকিস্তান | ট্রেন্ট ব্রিজ, নটিংহ্যাম |
০৬ জুন, বৃহস্পতিবার | বেলা সাড়ে তিনটা | অস্ট্রেলিয়া | ট্রেন্ট ব্রিজ, নটিংহ্যাম |
১০ জুন, সোমবার | বেলা সাড়ে তিনটা | দক্ষিণ আফ্রিকা | হ্যাম্পশায়ার বৌল, সাউথ্যাম্পটন |
১৪ জুন, শুক্রবার | বেলা সাড়ে তিনটা | ইংল্যান্ড | হ্যাম্পশায়ার বৌল, সাউথ্যাম্পটন |
১৭ জুন, সোমবার | বেলা সাড়ে তিনটা | বাংলাদেশ | কাউন্টি গ্রাউন্ড টনটন, টনটন |
২২ জুন, শনিবার | সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টিা | নিউ জিল্যান্ড | ওল্ড ট্র্যাফোর্ড, ম্যানচেস্টার |
২৭ জুন, বৃহস্পতিবার | বেলা সাড়ে তিনটা | ভারত | ওল্ড ট্র্যাফোর্ড, ম্যানচেস্টার |
০১ জুলাই, সোমবার | বেলা সাড়ে তিনটা | শ্রীলঙ্কা | দা রিভারসাইড ডারহাম, চেস্টার-লি-স্ট্রিট |
০৪ জুলাই, বৃহস্পতিবার | বেলা সাড়ে তিনটা | আফগানিস্তান | হেডিংলি, লিডস |