গত বিশ্বকাপের পর থেকে ওয়ানডেতে সবচেয়ে ব্যর্থ দলগুলোর একটি শ্রীলঙ্কা। অন্তত ২০ ম্যাচ খেলেছে এমন দলগুলোর মধ্যে দ্বীপ দেশটির জয়-পরাজয়ের অনুপাত সবচেয়ে খারাপ। এই সময়ে ৮৫ ম্যাচ খেলে মোটে ২৪টিতে জিতেছে তারা। হেরেছে ৫৫টিতে, একটি হয়েছে টাই, পরিত্যক্ত পাঁচটি।
দলে বারবার পরিবর্তন এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা ছিল নির্বাচকদের। তাতে উল্টো বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ঢালাও পরিবর্তনে ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস ঠেকেছে তলানিতে।
অনেক পরিবর্তন এসেছে লঙ্কান ক্রিকেটে। বদলেছে নির্বাচক, বদলেছে কোচ, বারবার পরিবর্তন এসেছে নেতৃত্বে। তবে মাঠের ক্রিকেটে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে সামান্যই। কোন দলের বিপক্ষে, কোন পরস্থিতিতে এই সময়ে হারেনি শ্রীলঙ্কা?
দেশের মাটিতে সিরিজ হেরেছে জিম্বাবুয়ের কাছে। এশিয়া কাপ থেকে ফিরেছে শূন্য হাতে। বাংলাদেশ, আফগানিস্তানের গ্রুপ থেকে যেতে পারেনি পরের রাউন্ডে। ফল হওয়া সবশেষ নয় ম্যাচের আটটিতেই হেরেছে শ্রীলঙ্কা। একমাত্র জয়টি এসেছে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে।
আগের বিশ্বকাপের পর কোনো ওয়ানডে না খেলা দিমুথ করুনারত্নেকে এবারের আসরে অধিনায়ক হিসেবে বেছে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। টেস্ট দলের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যানের ওয়ানডে রেকর্ড ভীষণ বাজে। ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৮ ওয়ানডে খেলে গড় কেবল ২০.৫৩। তার দুটি ফিফটিই স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। লিস্ট ‘এ’ রেকর্ডও তেমন সমৃদ্ধ নয়।
২০১৫ বিশ্বকাপের পর কোনো ওয়ানডে না খেলা জিবন মেন্ডিসকেও দলে রেখেছে শ্রীলঙ্কা। সাবেক চ্যাম্পিয়নদের দলে আছে এমন আরও অনেক চমক। বোর্ডের সঙ্গে কোচের সম্পর্কের টানাপোড়েন, কোচের সঙ্গে দলের অনেকের সম্পর্ক শীতল, সিনিয়র ক্রিকেটারদের মধ্যেও অন্তর্দ্বন্দ্ব-সব মিলিয়ে লঙ্কান ক্রিকেটে যে টালমাটাল অবস্থা, সেটির প্রভাবই যেন পড়েছে দল গঠনে।
জায়গা পাননি দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান উপুল থারাঙ্গা ও কয়েক মাস আগেও অধিনায়ক থাকা দিনেশ চান্দিমাল। বাদ পড়াদের তালিকায় উল্লেখযোগ্য আরও আছেন নিরোশান ডিকভেলা, দানুশকা গুনাথিলাকা ও আকিলা দনাঞ্জয়া।
২০১৭ সালে সবশেষ ওয়ানডে খেলা লাহিরু থিরিমান্নে, বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার মিলিন্দা সিরিবর্দনা ও লেগ স্পিনার জেফ্রি ভ্যান্ডারসে আছেন বিশ্বকাপ দলে। পাঁচটি ওয়ানডে খেলে কেবল ৭১ রান করলেও দলে জায়গা পেয়েছেন ব্যাটসম্যান আভিশকা ফার্নান্দো।
পেস বোলিংয়ে অবশ্য সম্ভাব্য সেরাদের নিয়েই যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। অভিজ্ঞদের উপর আস্থা রেখেছে তারা। লাসিথ মালিঙ্গা, সুরাঙ্গা লাকমলের সঙ্গে আছেন নুয়ান প্রদিপ ও ইসুরু উদানা। শুধু পেসারদের ওপর নির্ভর করে বিশ্বকাপে চমক দেখানো কঠিনই হবে সাবেক চ্যাম্পিয়নদের জন্য।
গুরুত্বপূর্ণ যিনি: ইসুরু উদানা
ক্রমশই অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে মেলে ধরছেন ৩১ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে ব্যাট হাতে প্রমাণ করেছেন নিজের সামর্থ্য। সীমিত ওভারের দুটি সিরিজে একমাত্র আশার আলো ছিল তার বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে।
বোলার হিসেবে এখন বেশ পরিণত উদানা। দুই দিকে সুইং করাতে পারেন। তবে বাঁহাতি এই পেসারের মূল শক্তি বৈচিত্র্য। দারুণ সব স্লোয়ার ডেলিভারি আছে তার ঝুঁলিতে। ডেথ ওভারে হতে পারেন বেশ কার্যকর।
কোচ: চন্দিকা হাথুরুসিংহে
বাংলাদেশে বেশ সাফল্য পাওয়া হাথুরুসিংহে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন শ্রীলঙ্কায়। দক্ষিণ আফ্রিকায় ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়ের পরও খুব একটা স্বস্তিতে নেই দেশটির প্রধান কোচ। সফরের মাঝপথ থেকে তাকে দেশে ডেকে পাঠায় লঙ্কান বোর্ড। গত এশিয়া কাপে ব্যর্থতায় হাথুরুসিংহে সব দায় চাপান সে সময়ের অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের ওপর। সে সময়ে কোচ-অধিনায়কের দ্বন্দ্বের খবর প্রকাশ্যে আসে। অনেক ক্ষমতা হারিয়ে এখন টিকে আছেন বটে তবে বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে তার অগ্নিপরীক্ষা।
শ্রীলঙ্কা দল: দিমুথ করুনারত্নে (অধিনায়ক), লাসিথ মালিঙ্গা, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, থিসারা পেরেরা, কুসল পেরেরা, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, কুসল মেন্ডিস, ইসুরু উদানা, মিলিন্দা সিরিবর্দানা, আভিশকা ফার্নান্দো, জিবন মেন্ডিস, লাহিরু থিরিমান্নে, জেফ্রি ভ্যান্ডারসে, নুয়ান প্রদিপ, সুরাঙ্গা লাকমল।
বিশ্বকাপ রেকর্ড:
১৯৭৫: গ্রুপ পর্ব
১৯৭৯: গ্রুপ পর্ব
১৯৮৩: গ্রুপ পর্ব
১৯৮৭: গ্রুপ পর্ব
১৯৯২: গ্রুপ পর্ব
১৯৯৬: চ্যাম্পিয়ন
১৯৯৯: গ্রুপ পর্ব
২০০৩: সেমি-ফাইনাল
২০০৭: রানার্সআপ
২০১১: রানার্সআপ
২০১৫: কোয়ার্টার-ফাইনাল
শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ সূচি:
তারিখ, বার | বাংলাদেশ সময় | প্রতিপক্ষ | ভেন্যু |
০১ জুন, শনিবার | বেলা সাড়ে তিনটা | নিউ জিল্যান্ড | কার্ডিফ ওয়েলস স্টেডিয়াম, কার্ডিফ |
০৪ জুন, মঙ্গলবার | বেলা সাড়ে তিনটা | আফগানিস্তান | কার্ডিফ ওয়েলস স্টেডিয়াম, কার্ডিফ |
০৭ জুন, শুক্রবার | বেলা সাড়ে তিনটা | পাকিস্তান | ব্রিস্টল কাউন্টি গ্রাউন্ড, ব্রিস্টল |
১১ জুন, মঙ্গলবার | বেলা সাড়ে তিনটা | বাংলাদেশ | ব্রিস্টল কাউন্টি গ্রাউন্ড, ব্রিস্টল |
১৫ জুন, শনিবার | বেলা সাড়ে তিনটা | অস্ট্রেলিয়া | দা ওভাল, লন্ডন |
২১ জুন, শুক্রবার | বেলা সাড়ে তিনটা | ইংল্যান্ড | হেডিংলি, লিডস |
২৮ জুন, শুক্রবার | বেলা সাড়ে তিনটা | দক্ষিণ আফ্রিকা | দা রিভারসাইড ডারহাম, চেস্টার-লি-স্ট্রিট |
০১ জুলাই, সোমবার | বেলা সাড়ে তিনটা | ওয়েস্ট ইন্ডিজ | দা রিভারসাইড ডারহাম, চেস্টার-লি-স্ট্রিট |
০৬ জুলাই, শনিবার | বেলা সাড়ে তিনটা | ভারত | হেডিংলি, লিডস |