বর্ণবাদের দায়ে প্রথম চার আসরে খেলা হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার। তারপর থেকে প্রতিটি আসরে তারা ছিল অন্যতম ফেভারিট। তবে বিধিবাম; প্রায় প্রতিবারই বিদায় নিতে হয় দুর্ভাগ্যের খাড়ায় কাটা পড়ে। ২০১৫ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো নক আউট পর্বে জয় পাওয়া দলটি নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে যায় সেমি-ফাইনালে।
১৯৯২ আসর দিয়ে বিশ্বকাপ অভিষেক হয় দক্ষিণ আফ্রিকার। ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্টে কখনও দুর্ভাগ্য, কখনও পাগলামী, কখনও নির্বুদ্ধিতায় বিদায় নিতে হয় তাদের। চাপের মুখে বারবার ভেঙে পড়ায় জুটেছে ‘চোকার্স’ তকমা।
অবসর নেওয়ায় এবারের আসরে দক্ষিণ আফ্রিকা পাচ্ছে না এবি ডি ভিলিয়ার্সকে। কোনো সন্দেহ নেই মিডল অর্ডারে বিস্ফোরক এই ব্যাটসম্যানের অভাব অনুভব করবে দলটি।
সময়টা ভালো যাচ্ছে না দেশটির ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান আমলার। তার জায়গায় রিজা হেনড্রিকসকে সুযোগ দেওয়া নিয়ে ছিল আলোচনা। শেষ পর্যন্ত অভিজ্ঞ আমলার ওপরই আস্থা রেখেছেন নির্বাচকরা।
দারুণ ছন্দে আছেন উদ্বোধনী জুটিতে আমলার সঙ্গী কুইন্টন ডি কক। গত বিশ্বকাপের পর থেকে তিনিই দলের সফলতম ব্যাটসম্যান। এই সময়ে ৫০.৩৫ গড়ে ২ হাজার ৯৭১ রান করেছেন ডি কক, স্ট্রাইক রেট ১০০.৮৮। তরুণ এই কিপার-ব্যাটসম্যানের চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই অধিনায়ক দু প্লেসি। ৬০.৩৬ গড়ে তিনি করেছেন ২ হাজার ৭৭৭ রান। ক্যারিয়ার গড়ের (৪৯.৭৪) চেয়ে বেশ পিছিয়ে ৩৯.৬০ গড়ে ২ হাজার ২১৮ রান করেছেন আমলা।
ডেভিড মিলার, এইডেন মারক্রাম, দুমিনির উপস্থিতিতে যথেষ্ট শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং।
অভিজ্ঞ স্টেইনের ওপর অতটা নির্ভরশীল নয় দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং। গত বিশ্বকাপের পর ওয়ানডে অভিষেক হওয়া কাগিসো রাবাদা যেন বোলিংয়ের নেতৃত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এই সংস্করণে ২৬.৪৩ গড়ে নিয়েছেন মোট ১০৬ উইকেট। ইকোনমি ৪.৯৮। এই সময়ে পেসারদের মধ্যে তার চেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন কেবল নিউ জিল্যান্ডের ট্রেন্ট বোল্ট (১০৭)।
তাহির আছেন দারুণ ছন্দে। ২৭.০৩ গড়ে নিয়েছেন ৯২ উইকেট। ইংল্যান্ডের উইকেটে কার্যকর হতে পারেন এই লেগ স্পিনার। আন্দিলে ফেলুকোয়ায়ো, লুঙ্গি এনগিডি, ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসও দেখিয়েছেন নিজেদের সামর্থ্য।
মাঝে চোট ভুগিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারদের। চোট নিয়ে আইপিএলের মাঝ পথ থেকে দেশে ফিরেন স্টেইন ও রাবাদা। চোটের জন্য সেই টুর্নামেন্টে খেলতে পারেননি এনগিডি। সেরে উঠে দলের প্রথম বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ম্যাচে খেলেছেন রাবাদা ও এনগিডি। সেরে ওঠার পথে আছেন অভিজ্ঞ স্টেইন। আরেক পেসার আনরিক নরকিয়া চোটের সঙ্গে লড়াইয়ে হেরে বাদ পড়ে গেছেন বিশ্বকাপ দল থেকে। তার জায়গায় পেস বোলিং অলরাউন্ডার ক্রিস মরিসকে ডেকেছে প্রোটিয়ারা।
ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া-ভারতের চেয়ে এবার সম্ভাবনায় পিছিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। অতটা চাপ নেই দলটির উপর। তবে রোমাঞ্চকর ক্রিকেটারে ঠাসা দলটি পাল্টে দিতে পারে সব হিসাব-নিকাশ। ঘুচিয়ে দিতে পারে অপবাদ।
গুরুত্বপূর্ণ যিনি: রাসি ফন ডার ডাসেন
মাত্র ৯ ম্যাচ খেলেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন ৩০ বছর বয়সী রাসি ফন ডার ডাসেন। দলের প্রয়োজনে টপ অর্ডার থেকে মিডল অর্ডারের যে কোনো পজিশনে ব্যাটিং করতে পারেন সহজাত এই আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান। আট ইনিংসে ৮৮.২৫ গড়ে করেছেন ৩৫৩ রান, সর্বোচ্চ ৯৩। চারবার ছুঁয়েছেন পঞ্চাশ।
দলে ডাক পাওয়ার আগে ক্রিকেট খেলে বেরিয়েছেন বিশ্ব জুড়ে। গত অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়ে হয় আন্তর্জাতিক অভিষেক। দ্রুত কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারা, উদ্ভাবনী শট খেলার সামর্থ্য ওয়ানডেতে বিপজ্জনক ব্যাটসম্যানে পরিণত করেছে তাকে।
কোচ: ওটিস গিবসন
২০১৭ সালের অগাস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান কোচের দায়িত্ব নেন ওটিস গিবসন। অনেক বছর দেশটির ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলায় প্রোটিয়াদের সংস্কৃতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক এই পেসারের।
দুই দফায় ইংল্যান্ডের বোলিং কোচ ছিলেন তিনি। ২০১১ বিশ্বকাপে ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রধান কোচ। দেশের হয়ে খেলেছিলেন ১৯৯৬ আসরে। খেলোয়াড়-কোচ দুই ভূমিকার কোনোটাতেই বিশ্বকাপে নেই তেমন কোনো সাফল্য। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে গিবসনও বিশ্বকাপে ব্যর্থতা ঘোচানোর মিশনে যাচ্ছেন এবার।
দক্ষিণ আফ্রিকা দল: ফাফ দু প্লেসি (অধিনায়ক), হাশিম আমলা, কুইন্টন ডি কক, জেপি দুমিনি, এইডেন মারক্রাম, ডেভিড মিলার, ক্রিস মরিস, লুঙ্গি এনগিডি, আন্দিলে ফেলুকোয়ায়ো, ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস, কাগিসো রাবাদা, তাবরাইজ শামসি, ডেল স্টেইন, ইমরান তাহির, রাসি ফন ডার ডাসেন।
বিশ্বকাপ রেকর্ড:
১৯৯২: সেমি-ফাইনাল
১৯৯৬: কোয়ার্টার-ফাইনাল
১৯৯৯: সেমি-ফাইনাল
২০০৩: গ্রুপ পর্ব
২০০৭: সেমি-ফাইনাল
২০১১: কোয়ার্টার-ফাইনাল
২০১৫: সেমি-ফাইনাল
দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ সূচি:
তারিখ, বার | বাংলাদেশ সময় | প্রতিপক্ষ | ভেন্যু |
৩০ মে, বৃহস্পতিবার | বেলা সাড়ে তিনটা | ইংল্যান্ড | দা ওভাল, লন্ডন |
০২ জুন, রোববার | বেলা সাড়ে তিনটা | বাংলাদেশ | দা ওভাল, লন্ডন |
০৫ জুন, বুধবার | বেলা সাড়ে তিনটা | ভারত | হ্যাম্পশায়ার বৌল, সাউথ্যাম্পটন |
১০ জুন, সোমবার | বেলা সাড়ে তিনটা | ওয়েস্ট ইন্ডিজ | হ্যাম্পশায়ার বৌল, সাউথ্যাম্পটন |
১৫ জুন, শনিবার | সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা | আফগানিস্তান | কার্ডিফ ওয়েলস স্টেডিয়াম, কার্ডিফ |
১৯ জুন, বুধবার | বেলা সাড়ে তিনটা | নিউ জিল্যান্ড | এজবাস্টন, বার্মিংহ্যাম |
২৩ জুন, রোববার | বেলা সাড়ে তিনটা | পাকিস্তান | লর্ডস, লন্ডন |
২৮ জুন, শুক্রবার | বেলা সাড়ে তিনটা | শ্রীলঙ্কা | দা রিভারসাইড ডারহাম, চেস্টার-লি-স্ট্রিট |
০৬ জুলাই, শনিবার | সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা | অস্ট্রেলিয়া | ওল্ড ট্র্যাফোর্ড, ম্যানচেস্টার |