সবাইকে চমকে দিয়ে ২০১৭ সালে ইংল্যান্ড থেকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে দেশে ফিরে পাকিস্তান। ৮ দলের টুর্নামেন্টে তারা ছিল র্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে। ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বিধ্বস্ত হয়েছিল ভারতের বিপক্ষে। পরের সব ম্যাচ সরফরাজদের জন্য ছিল বাঁচা-মরার। বিদায়ের দুয়ার থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতে নেয় শিরোপা, যা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তাদের প্রথম।
অনেকটাই যেন ১৯৯২ বিশ্বকাপের পুনরাবৃত্তি। প্রথম পাঁচ ম্যাচে জয় ছিল মোটে একটি, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। আর একটি পয়েন্ট ঝুলিতে ছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ থেকে; ৭৪ রানে অলআউট হলেও বৃষ্টি বাঁচিয়ে দেয় পাকিস্তানকে। কোণঠাসা অবস্থা থেকে বাঘের মতো লড়াই করে কোনোমতে উঠে যায় সেমি-ফাইনালে। টুর্নামেন্টের সেরা দল নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়ে পৌঁছায় ফাইনালে। প্রাথমিক পর্বে ব্যাট হাতে যাদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি সেই ইংল্যান্ডকে হারিয়ে জিতে নেয় শিরোপা। ইমরান খানের দলের সেই অর্জন হয়ে গেছে ক্রিকেটীয় রূপকথার অংশ।
২০১৮ সালের শুরু থেকে সময়টা ভালো কাটছে না পাকিস্তানের। বিশ্বকাপের নয় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে এই সময়ে ২৭ ম্যাচ খেলে মোটে চারটিতে জিতেছে তারা। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশড দিয়ে শুরু, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফল হওয়া সব ম্যাচে হার দিয়ে শেষ। মাঝে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে এশিয়া কাপ থেকে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে। তবে বিশ্বকাপের জন্য সেরা প্রস্তুতি নিতে পেরেছে এই দলই।
বিশ্বকাপের স্বাগতিক ও বিশ্বের শীর্ষ ওয়ানডে দল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে খেলেছে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে শক্তিশালী ইংলিশ দলটির বিপক্ষে নিজেদের কম্বিনেশন পরীক্ষা করে নিয়েছেন কোচ মিকি আর্থার। সিরিজের পর আগে ঘোষণা করা বিশ্বকাপ দলে তিনটি পরিবর্তনও আনে পাকিস্তান। দলে ফেরানো হয় ওয়াহাব রিয়াজ, মোহাম্মদ আমির ও আসিফ আলিকে। বাদ পড়ে যান জুনাইদ খান, ফাহিম আশরাফ ও আবিদ আলি।
পেস বোলিং আক্রমণের নেতৃত্ব থাকছে হাসান আলীর কাঁধে। আমির ও ওয়াহাবেরও থাকবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ১৯ বছর বয়সী পেসার আছেন দুই জন, শাহিন শাহ আফ্রিদি ও গতির ঝড় তুলে আলোচনায় উঠে আসা মোহাম্মদ হাসনাইন।
পাকিস্তানের দুই মূল স্পিনার শাদাব খান ও ইমাদ ওয়াসিম। ব্যাট হাতেও দুই জন রাখতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। অসুস্থতার জন্য ইংল্যান্ড সিরিজে না খেললেও বিশ্বকাপে খেলার জন্য ফিট শাদাব। তিনি ফেরায় বোলিং নিয়ে দুর্ভাবনা একটু কমেছে আর্থারের।
ওপেনিংয়ে ফখর জামানের সঙ্গী তরুণ ইমাম-উল-হক। তিনে আছেন দলটির সেরা ব্যাটসম্যান বাবর আজম। মিসবাহ-উল-হক, ইউনুস খানের অবসরের পর তিনিই পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড। অভিজ্ঞ মোহাম্মদ হাফিজ, শোয়েব মালিক দিতে পারেন স্থিতি। মিডল অর্ডারে কার্যকর হতে পারেন হারিস সোহেল।
পাকিস্তানের জন্য দুর্ভাবনার কারণ অধিনায়কের ব্যাটিং। সেভাবে রানে নেই কিপার-ব্যাটসম্যান সরফরাজ। দারুণ ছন্দে ছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই সেঞ্চুরির পরও দলে জায়গা পাননি।
কোনো ধরনের মোমেন্টাম ছাড়াই বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছে পাকিস্তান। ফল হওয়া সবশেষ ১০ ম্যাচে হেরেছে তারা। এতে সবচেয়ে বড় দায় তাদের ফিল্ডিংয়ের। প্রায় প্রতি ম্যাচেই হাতছাড়া হয়েছে সুযোগ। দলকে দিতে হয়েছে তার মাশুল। অভিজ্ঞতার কমতি নেই পাকিস্তান দলে। আছে তারুণ্যের উচ্ছ্বাসও। দুইয়ে মিলে তারা কতদূর যেতে পারবে সেটা বলে দেবে সময়ই।
গুরুত্বপূর্ণ যিনি: ওয়াহাব রিয়াজ
সরফরাজের মতে, পাকিস্তানের ১৫ ক্রিকেটারই তুরুপের তাস। তাদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেন হঠাৎ করে দলে ফেরা ওয়াহাব। বছর খানেক আগে তার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার আভাস মিলেছিল কোচ আর্থারের কথায়। পুরান বলে বোলিং ইউনিটের ব্যর্থতায় সেই ওয়াহাবের দিকেই এখন তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে পাকিস্তানকে।
রিভার্স সুইংয়ের সামর্থ্য ক্যারিয়ারকে পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ করে দিয়েছে ওয়াহাবকে। তার অভিজ্ঞতা আর পুরান বল ব্যবহারে দক্ষতা ডেথ ওভারে পাকিস্তানের বোলিংয়ে উন্নতির পথ দেখাতে পারে।
কোচ: মিকি আর্থার
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও ঘরোয়া ক্রিকেটে কোচিংয়ের অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ আর্থার। দক্ষিণ আফ্রিকাকে কোচিং করিয়েছেন পাঁচ বছর। ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রথম বিদেশি কোচ, যদিও বিদায়টা সুখকর হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা আছে তার।
পাকিস্তানের কোচ হওয়ার পর আর্থার সবচেয়ে বেশি জোর দেন শৃঙ্খলা ও ফিটনেসের দিকে। ২০১৬ সালের মেতে দায়িত্ব নিয়ে পরের বছর দলকে জেতান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। এবার বিশ্বকাপ চাই তার।
পাকিস্তান: সরফরাজ আহমেদ (অধিনায়ক), আসিফ আলি, বাবর আজম, ফখর জামান, হারিস সোহেল, হাসান আলি, ইমাদ ওয়াসিম, ইমাম-উল-হক, ওয়াহাব রিয়াজ, মোহাম্মদ আমির, মোহাম্মদ হাফিজ, মোহাম্মদ হাসনাইন, শাদাব খান, শাহিন শাহ আফ্রিদি, শোয়েব মালিক।
বিশ্বকাপ রেকর্ড:
১৯৭৫: গ্রুপ পর্ব
১৯৭৯: সেমি-ফাইনাল
১৯৮৩: সেমি-ফাইনাল
১৯৮৭: সেমি-ফাইনাল
১৯৯২: চ্যাম্পিয়ন
১৯৯৬: কোয়ার্টার-ফাইনাল
১৯৯৯: রানার্সআপ
২০০৩: গ্রুপ পর্ব
২০০৭: গ্রুপ পর্ব
২০১১: সেমি-ফাইনাল
২০১৫: কোয়ার্টার-ফাইনাল
পাকিস্তানের বিশ্বকাপ সূচি:
তারিখ, বার | বাংলাদেশ সময় | প্রতিপক্ষ | ভেন্যু |
৩১ মে, শুক্রবার | বেলা সাড়ে তিনটা | ওয়েস্ট ইন্ডিজ | ট্রেন্ট ব্রিজ, নটিংহ্যাম |
০৩ জুন, সোমবার | বেলা সাড়ে তিনটা | ইংল্যান্ড | ট্রেন্ট ব্রিজ, নটিংহ্যাম |
০৭ জুন, শুক্রবার | বেলা সাড়ে তিনটা | শ্রীলঙ্কা | ব্রিস্টল কাউন্টি গ্রাউন্ড, ব্রিস্টল |
১২ জুন, বুধবার | বেলা সাড়ে তিনটা | অস্ট্রেলিয়া | টনটন কাউন্টি গ্রাউন্ড, টনটন |
১৬ জুন, রোববার | বেলা সাড়ে তিনটা | ভারত | ওল্ড ট্র্যাফোর্ড, ম্যানচেস্টার |
২৩ জুন, রোববার | বেলা সাড়ে তিনটা | দক্ষিণ আফ্রিকা | লর্ডস, লন্ডন |
২৬ জুন, বুধবার | বেলা সাড়ে তিনটা | নিউ জিল্যান্ড | এজবাস্টন, বার্মিংহ্যাম |
২৯ জুন, শনিবার | বেলা সাড়ে তিনটা | আফগানিস্তান | হেডিংলি, লিডস |
০৫ জুলাই, শুক্রবার | বেলা সাড়ে তিনটা | বাংলাদেশ | লর্ডস, লন্ডন |