এমনিতে নিউ জিল্যান্ডের বিশ্বকাপ রেকর্ড যথেষ্টই সমৃদ্ধ। ১১ বিশ্বকাপে সাতবারই সেমি-ফাইনালের চৌকাঠ মাড়ানো চাট্টিখানি কথা নয়। নিয়মিত সেমি-ফাইনাল খেলাও তো কম অর্জন নয়! কিন্তু বারবার শেষ চারে কাটা পড়ে নিউ জিল্যান্ডের জন্য সেটিই হয়ে উঠেছিল এক রকম অভিশাপ। গত বিশ্বকাপে নিজ আঙিনায় তারা প্রথমবার পৌঁছেছিল ফাইনালের মহামঞ্চে। কিন্তু শিরোপা স্বপ্ন পূরণ হয়নি।
অথচ ফাইনালের আগ পর্যন্ত তাদের মনে হচ্ছিল অপ্রতিরোধ্য। গ্রুপ পর্বের সবকটি ম্যাচসহ টানা ৮ ম্যাচ জিতে কিউইরা উঠেছিল ফাইনালে। শুধু একের পর এক ম্যাচ জয়ই নয়, বিশ্বকাপ রাঙিয়ে ছিল ‘কিউই ব্র্যান্ডের’ ক্রিকেটও। যেটির মূলমন্ত্র ছিল আগ্রাসী ও ভয়ডরহীন ক্রিকেট। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। শুধু ব্যাট হাতে দলকে উড়ন্ত শুরু এনে দেওয়াই নয়, অনুপ্রেরণাদায়ী নেতৃত্ব, মাঠের ভেতরে-বাইরে দারুণ ব্যক্তিত্ব ও তুমুল জনপ্রিয়তায় হয়ে উঠেছিলেন দলটির সমার্থক।
গত আসরের আগে ১৯৯২ বিশ্বকাপেও শিরোপার সুবাস পেয়েছিল নিউ জিল্যান্ড। সেবারও অগ্রযাত্রার নায়ক ছিলেন তাদের অধিনায়ক। ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ধারাবাহিকতা আর উদ্ভাবনী ও প্রেরণাদায়ী নেতৃত্বে চমকে দিয়েছিলেন মার্টিন ক্রো।
ওই দুই আসরের মতো এবার নিউ জিল্যান্ড সহ-আয়োজক নয়। তবু সম্ভাবনায় কমতি নেই। মূল কারণ, এবারও অধিনায়ক এমন একজন, নেতৃত্বের দর্শনে অনুসারী যিনি মার্টিন ক্রো-ম্যাককালামদের। কেন উইলিয়ামসনও একই ঘরানার অধিনায়ক। যথেষ্ট রসদও আছে তার হাতে।
ওপেনিংয়ে মার্টিন গাপটিলের সঙ্গে জুটি গড়বেন হেনরি নিকোলস কিংবা কলিন মানরো। তিনে উইলিয়ামসন, চার-পাঁচে রস টেইলর ও টম ল্যাথাম। ইংল্যান্ডের ব্যাটিং সহায়ক উইকেট ও ছোট মাঠে এই ব্যাটিং লাইন আপ হয়ে উঠতে পারে ধ্বংসাত্মক।
ওয়ানডেতে অসাধারণ ধারাবাহিকতায় টেইলর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন হিসেবে। গত বিশ্বকাপের পর এখনও পর্যন্ত ৫৬ ইনিংস খেলে ৮ সেঞ্চুরি ও ১৭ ফিফটিতে ২ হাজার ৮৯২ রান করেছেন ৬৮.৮৫ গড়ে। আইসিসি ওয়ানডে ব্যাটসম্যানদের র্যাঙ্কিংয়ে আছেন তিনে। সেরা দশে আছেন গাপটিলও, ১২ নম্বরে উইলিয়ামসন।
গত বিশ্বকাপের পর থেকে টেইলর ও উইলিয়ামসনের জুটিতে রান এসেছে ৬২.৫৫ গড়ে; গাপটিল ও উইলিয়ামসনের জুটিতে ৫০.৮১ করে। মিডল অর্ডারে টেইলর ও ল্যাথামের জুটির গড় এই সময়ে ৭২.৪৭! তারকায় ঠাসা না হলেও দলের ব্যাটিং লাইন আপ অনেক কার্যকর ও সফল।
বরাবরই কিউইদের বড় শক্তি অলরাউন্ডাররা। এবারও আছেন জিমি নিশাম, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের মতো পেস বোলিং অলরাউন্ডার, স্পিনিং অলরাউন্ডার মিচেল স্যান্টনার। বাঁহাতি স্পিনার স্যান্টনারের সঙ্গে স্পিন আক্রমণে আছে লেগ স্পিনার ইশ সোধির বৈচিত্র।
গত আসরের মতো এবারও নিউ জিল্যান্ডের পেস আক্রমণ দুর্দান্ত। গত বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ট্রেন্ট বোল্ট যথারীতি থাকছেন তার স্কিলের পসরা নিয়ে। এবারও আছেন টিম সাউদি ও ম্যাট হেনরি। সঙ্গে যোগ হয়েছে লকি ফার্গুসনের গতি।
নিউ জিল্যান্ডের বিশ্বকাপ পরিকল্পনায় অবশ্য বড় একটি ধাক্কা লেগেছিল গত বছর। বিশ্বকাপের যখন বছরখানেকও বাকি নেই, কোনোরকম আভাস ছাড়াই দায়িত্ব ছেড়ে দেন সফল কোচ মাইক হেসন। তবে দারুণ পেশাদার ও থিতু দল বলেই হয়তো পথচলায় খুব একটা হোঁচট খেতে হয়নি তাদের। নতুন কোচ গ্যারি স্টেডের অধীনে নিউ জিল্যান্ড আছে প্রায় একই রূপে।
ইংল্যান্ডে সবশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অবশ্য বাংলাদেশের কাছে হেরে গ্রুপ থেকেই বিদায় নিয়েছিল কিউইরা। তবে ইংল্যান্ডে আগের চার বিশ্বকাপের তিনটিতেই তারা খেলেছে সেমি-ফাইনালে।
বিশ্বকাপে সেমি-ফাইনালের গেরো কিভাবে পার হতে হয়, সেটি এখন জানে কিউইরা। কে জানে, হয়তো ফাইনাল জয়ের পথও তারা খুঁজে নেবে এবার!
গুরুত্বপূর্ণ যিনি: জিমি নিশাম
ব্যাট হাতে খুনে, বল হাতে কার্যকর। এমন একজন অলরাউন্ডার, যিনি ঠিক রাখেন দলের ভারসাম্য। নিজের দিনে গড়ে দিতে পারেন পার্থক্য। ওয়ানডেতে তার স্ট্রাইক রেট ১০৫.০৭, সবশেষ ৫ ইনিংসে যেটি দুইশর কাছে।
কোচ: গ্যারি স্টেড
মাইক হেসন দায়িত্ব ছাড়ার পর যখন দায়িত্ব নিলেন স্টেড, বিশ্বকাপের বাকি ছিল না এক বছরও। দল অবশ্য তৈরিই ছিল, তিনি চেষ্টা করছেন এগিয়ে নিতে। সাবেক এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের কোচিংয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে চার মৌসুমে চার শিরোপা জিতেছিল ক্যান্টারবুরি। তার কোচিংয়েই দুটি বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে কিউই মেয়েরা। দুবারই অবশ্য হারতে হয়েছে। নিউ জিল্যান্ড দলের সঙ্গে তার নিজেরও তাই এবার আক্ষেপ ঘোচানোর অভিযান।
বিশ্বকাপের নিউ জিল্যান্ড দল: কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), মার্টিন গাপটিল, হেনরি নিকোলস, রস টেইলর, টম ল্যাথাম, কলিন মানরো, টম ব্লান্ডেল, জিমি নিশাম, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, মিচেল স্যান্টনার, ইশ সোধি, টিম সাউদি, ম্যাট হেনরি, লকি ফার্গুসন, ট্রেন্ট বোল্ট।
বিশ্বকাপ রেকর্ড:
১৯৭৫: সেমি-ফাইনাল
১৯৭৯: সেমি-ফাইনাল
১৯৮৩: গ্রুপ পর্ব
১৯৮৭: গ্রুপ পর্ব
১৯৯২: সেমি-ফাইনাল
১৯৯৬: কোয়ার্টার-ফাইনাল
১৯৯৯: সেমি-ফাইনাল
২০০৩: সুপার সিক্স
২০০৭: সেমি-ফাইনাল
২০১১: সেমি-ফাইনাল
২০১৫: রানার্সআপ
নিউ জিল্যান্ডের বিশ্বকাপ সূচি:
তারিখ, বার | বাংলাদেশ সময় | ম্যাচ | ভেন্যু |
০১ জুন, শনিবার | বেলা সাড়ে তিনটা | শ্রীলঙ্কা | কার্ডিফ ওয়েলস স্টেডিয়াম, কার্ডিফ |
০৫ জুন, বুধবার | সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা | বাংলাদেশ | দা ওভাল, লন্ডন |
০৮ জুন, শনিবার | সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা | আফগানিস্তান | কাউন্টি গ্রাউন্ড টনটন, টনটন |
১৩ জুন, বৃহস্পতিবার | বেলা সাড়ে তিনটা | ভারত | ট্রেন্ট ব্রিজ, নটিংহ্যাম |
১৯ জুন, বুধবার | বেলা সাড়ে তিনটা | দক্ষিণ আফ্রিকা | এজবাস্টন, বার্মিংহ্যাম |
২২ জুন, শনিবার | সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টিা | ওয়েস্ট ইন্ডিজ | ওল্ড ট্র্যাফোর্ড, ম্যানচেস্টার |
২৬ জুন, বুধবার | বেলা সাড়ে তিনটা | পাকিস্তান | এজবাস্টন, বার্মিংহ্যাম |
২৯ জুন, শনিবার | সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা | অস্ট্রেলিয়া | লর্ডস, লন্ডন |
০৩ জুলাই, বুধবার | বেলা সাড়ে তিনটা | ইংল্যান্ড | দা রিভারসাইড ডারহাম, চেস্টার-লি-স্ট্রিট |