দলের সেরা দুই ব্যাটসম্যান স্মিথ ও ওয়ার্নারকে হারিয়ে কক্ষপথ থেকে ছিটকে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। এক পর্যায়ে ফল হওয়া ২৬ ম্যাচের মধ্যে জয় ছিল মাত্র চারটিতে। এক সময়ে কালে-ভদ্রে হারা দলটির জন্য জয় যেন হয়ে ওঠে সোনার হরিণ।
বিশ্বকাপ এগিয়ে আসতেই পাল্টে গেছে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা। নিজেদের সবশেষ সিরিজে উড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তানকে। এর আগের সিরিজে তারা জিতেছে ভারতের মাটিতে। যেখানে প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর ঘুরে দাঁড়িয়ে শেষ তিন ম্যাচ জিতে নেয় অ্যারন ফিঞ্চের দল। সব মিলিয়ে টানা আট ম্যাচে জিতে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্টে খেলতে যাচ্ছে শিরোপাধারীরা।
স্মিথ-ওয়ার্নারের ফেরা নিয়ে খুব একটা সংশয় ছিল না। সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা কাটানো দুই ব্যাটসম্যান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরছেন বিশ্বকাপ দিয়ে। শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে তাদের থাকা অনুমিতই ছিল।
প্রায় সবাই ছন্দে থাকায় দল নির্বাচন নিয়ে মধুর সমস্যায় পড়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচকরা। কাকে রেখে কাকে বাদ দেবেন! ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি সিরিজে দারুণ ব্যাটিং করা উসমান খাওয়াজা ধরে রাখেন জায়গা। তবে একাদশে জায়গা পাওয়া কঠিন হবে বাঁহাতি এই ওপেনারের জন্য। বাজে সময় পিছনে ফেলে ছন্দ ফিরে পেয়েছেন অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। ওয়ার্নারের সঙ্গে তিনি করতে পারেন ইনিংস উদ্বোধন।
ভারতের বিপক্ষে সিরিজে ভালো করেও বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাননি পিটার হ্যান্ডসকম। এ বছর ১৩ ওয়ানডেতে এক সেঞ্চুরি ও তিন ফিফটিতে তার গড় ৪৩.৫৪, স্ট্রাইক রেট ৯৮.১৫। গত মাসে ভারত সফরে ৩৫৯ রান তাড়া করে অস্ট্রেলিয়ার জেতা ম্যাচে খেলেছিলেন ১০৫ বলে ১১৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। অস্ট্রেলিয়ার শেষ আট ওয়ানডেতে টানা জয়ে একশর বেশি স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করা তিন ব্যাটসম্যানের একজন তিনি। বিশ্বকাপ দলে নেই তবুও। তার অনুপস্থিতিই বোঝায় দলে জায়গা পাওয়ার লড়াই কতটা তীব্র।
মোহালিতে ৩৫৯ রান তাড়া করে পাওয়া সেই জয়ে ৪৩ বলে ৮৪ রান করা অ্যাশটন টার্নারও জায়গা পাননি স্কোয়াডে।
সুযোগ পাননি জশ হেইজেলউডও। চোটের কারণে গত নভেম্বরের পর থেকে কোনো ওয়ানডে খেলেননি এই পেসার। এ বছর ওয়ানডে খেলতে না পারলেও এই সংস্করণে বোলারদের র্যাঙ্কিংয়ে এখনও অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় সেরা বোলার তিনি (প্যাট কামিন্স ছয়ে, হেইজেলউড দ্বাদশ)।
বিস্ফোরক উদ্বোধনী জুটি, প্রতিভাবান ব্যাটসম্যানে ঠাসা মিডল অর্ডার; ইংল্যান্ডের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে যে কোনো বোলিংয়ের বিপক্ষে তাণ্ডব চালাতে পারে অস্ট্রেলিয়া। স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, শন মার্শ, অ্যালেক্স কেয়ারি, মার্কাস স্টয়নিস মিলে স্কোর নিয়ে যেতে পারেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। দুই অলরাউন্ডার স্টয়নিস ও ম্যাক্সওয়েলের উপস্থিতিতে বেড়েছে ব্যাটিং গভীরতা, বোলিংয়ে বেড়েছে বিকল্প।
গত আসরে অস্ট্রেলিয়ার জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল তিন বাঁহাতি পেসারের। তাদের একজন মিচেল স্টার্ক আছেন এবারও। চোটের কারণে লম্বা সময় ধরে খেলার বাইরে আছেন তিনি। চোটের জন্য ছিটকে গেছেন জাই রিচার্ডসন। তার জায়গায় দলে এসেছেন কেন রিচার্ডসন। বিশ্বকাপের আগে স্টার্ককে প্রমাণ করতে হবে ফিটনেস।
গতিময় পেসার কামিন্স কাঁপিয়ে দিতে পারেন যে কোনো ব্যাটিং লাইন আপকে। স্টার্ক-রিচার্ডসন-কামিন্সের সঙ্গী বাঁহাতি পেসার জেসন বেহরেনডর্ফ ও ডানহাতি পেসার ন্যাথান কোল্টার-নাইল। বিশেষজ্ঞ স্পিনার দুই জন, অভিজ্ঞ অফ স্পিনার ন্যাথান লায়ন ও তরুণ লেগ স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পা। বোলিংয়ে বৈচিত্র্যের কমতি নেই অস্ট্রেলিয়ার স্কোয়াডে।
বিশ্বকাপ শিরোপা কি করে জিততে হয় অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে ভালো করে জানে না আর কেউ। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার পথে স্মিথ-ওয়ার্নার, চোট কাটিয়ে ওঠার পথে স্টার্ক। দল ফিরেছে ছন্দে। তাই সফলতম দলটির আশার পালে লেগেছে নতুন হাওয়া।
গুরুত্বপূর্ণ যিনি: মার্কাস স্টয়নিস
সতীর্থরা ভালোবেসে ডাকেন ‘বিটি’ মানে ‘বিগেস্ট থ্রেট’। মিডল অর্ডারে মেটাতে পারেন সময়ের দাবি। সঙ্গে কার্যকর মিডিয়াম পেস। বিগব্যাশে তার পারফরম্যান্স ছিল চোখ ধাঁধানো। সেই টুর্নামেন্ট ৫৩.৩০ গড় ও ১৩০.৬৩ স্ট্রাইক রেটে ৫৩৩ রান করেছিলেন স্টয়নিস।
দলে সেভাবে নিজের জায়গা পাকা করতে পারছিলেন না স্টয়নিস। ২০১৭ সালে আবার দলে ফেরার পর নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে নেন তিন উইকেট। পরে সাত নম্বরে নেমে অপরাজিত ১৪৬ রানের বিস্ফোরক ইনিংসে দলকে প্রায় অসম্ভব এক জায়গা থেকে জয়ের পথে নিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। এবারের আসরে তিনি হতে পারেন অস্ট্রেলিয়ার ‘ল্যান্স ক্লুজনার’।
কোচ: জাস্টিন ল্যাঙ্গার
অস্ট্রেলিয়ার টেস্টের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান ল্যাঙ্গারের ওয়ানডে ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায় মাত্র ৮ ম্যাচ খেলেই। অবসরের পর ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলের ব্যাটিং কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে কাজ করেন ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ও বিগব্যাশ দল পার্থ স্করচার্সের সঙ্গে। বল টেম্পারিং কাণ্ডের পর ড্যারেন লেম্যান সরে গেলে ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার কোচের দায়িত্ব পান ল্যাঙ্গার।
দায়িত্ব পাওয়ার পর তার মূল দায়িত্ব ছিল দলটিকে কক্ষপথে ফেরানো। প্রচণ্ড চাপের মধ্যেও ভেঙে না পড়ে দলকে ঠিকই ফিরিয়েছেন পথে। তার হার না মানা মানসিকতা কঠিন সময়ে দৃঢ় রেখেছে দলকে। ওয়ানডেতে সেভাবে সাফল্য না পাওয়া ল্যাঙ্গারের সামনে একটি আক্ষেপ ঘোচানোর সুযোগ। বিশ্বকাপ জয়- হোক না কোচ হিসেবে।
অস্ট্রেলিয়া দল: অ্যারন ফিঞ্চ (অধিনায়ক), ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথ, উসমান খাওয়াজা, শন মার্শ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিস, অ্যালেক্স কেয়ারি, প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, কেন রিচার্ডসন, ন্যাথান কোল্টার-নাইল, জেসন বেহরেনডর্ফ, অ্যাডাম জ্যাম্পা, ন্যাথান লায়ন।
বিশ্বকাপ রেকর্ড:
১৯৭৫: রানার্সআপ
১৯৭৯: গ্রুপ পর্ব
১৯৮৩: গ্রুপ পর্ব
১৯৮৭: চ্যাম্পিয়ন
১৯৯২: গ্রুপ পর্ব
১৯৯৬: রানার্সআপ
১৯৯৯: চ্যাম্পিয়ন
২০০৩: চ্যাম্পিয়ন
২০০৭: চ্যাম্পিয়ন
২০১১: কোয়ার্টার-ফাইনাল
২০১৫: চ্যাম্পিয়ন
অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ সূচি:
তারিখ, বার | বাংলাদেশ সময় | প্রতিপক্ষ | ভেন্যু |
০১ জুন, শনিবার | সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা | আফগানিস্তান | ব্রিস্টল কাউন্টি গ্রাউন্ড, ব্রিস্টল |
০৬ জুন, বৃহস্পতিবার | বেলা সাড়ে তিনটা | ওয়েস্ট ইন্ডিজ | ট্রেন্ট ব্রিজ, নটিংহ্যাম |
০৯ জুন, রোববার | বেলা সাড়ে তিনটা | ভারত | দা ওভাল, লন্ডন |
১২ জুন, বুধবার | বেলা সাড়ে তিনটা | পাকিস্তান | টনটন কাউন্টি গ্রাউন্ড, টনটন |
১৫ জুন, শনিবার | বেলা সাড়ে তিনটা | শ্রীলঙ্কা | দা ওভাল, লন্ডন |
২০ জুন, বৃহস্পতিবার | বেলা সাড়ে তিনটা | বাংলাদেশ | ট্রেন্ট ব্রিজ, নটিংহ্যাম |
২৫ জুন, মঙ্গলবার | বেলা সাড়ে তিনটা | ইংল্যান্ড | লর্ডস, লন্ডন |
২৯ জুন, শনিবার | সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা | নিউ জিল্যান্ড | লর্ডস, লন্ডন |
০৬ জুলাই, শনিবার | সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা | দক্ষিণ আফ্রিকা | ওল্ড ট্র্যাফোর্ড, ম্যানচেস্টার |