২০১১বিশ্বকাপ হাহাকার ঘুঁচিয়ে দেয় ভারতের কিংবদন্তি এই ব্যাটসম্যানের। ১৯৮৩ বিশ্বকাপে ভারতের শিরোপা জয়ের পর মুম্বাইয়ের রাস্তায় রঙখেলায় মেতে ওঠা ছেলেটি ২০১১ সালে একই শহরের স্টেডিয়ামে উৎসবের মধ্যমণি।
প্রথমদল হিসেবে দেশের মাটিতে ফাইনালে জিতে ভারত। ১৯৯২ সালের পর প্রথম ফাইনাল হয় অস্ট্রেলিয়াকেছাড়া।
অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডকে পেছনে ফেলে ২০১১ বিশ্বকাপের স্বাগতিক হয় উপমহাদেশের চার দেশ। এই অঞ্চলেরসেটি ছিলতৃতীয় বিশ্বকাপ আয়োজন। ১৯৮৭ সালের প্রথম আসরের যৌথ-আয়োজক ছিল ভারত ও পাকিস্তান। ১৯৯৬সালে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় শ্রীলঙ্কা। ২০১১ সালে এসেযোগ হয় বাংলাদেশ।
তবে শেষ পর্যন্ত চার দেশে হয়নি বিশ্বকাপ। সহ-স্বাগতিকদেরতালিকা থেকে কাটা পড়ে পাকিস্তানের নাম। ২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের বাসেহামলার পর থেকে সে দেশে হয়নি আর কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। সেখানে বিশ্বকাপ খেলতে যাবেকেন দলগুলো! ভারত-শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশে বসে তাই বিশ্বকাপের মেলা।
আয়োজককমিটির প্রধান কার্যালয় লাহোর থেকে সরে যায় মুম্বাইয়ে। পাকিস্তানে হতে যাওয়া ১৪ ম্যাচেরআটটি হয় ভারতে, চারটি শ্রীলঙ্কায় ও দুটি বাংলাদেশে। সব মিলিয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২এপ্রিল ১৩ ভেন্যুতে হয় ৪৯ ম্যাচ।
প্রথমবারেরমতো বিশ্বকাপে ব্যবহার করা হয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা পদ্ধতি, ডিআরএস। প্রথমবারেরমতো বিশ্ব মঞ্চে দেখা মেলে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে ও বোলিং পাওয়ার প্লে। দক্ষিণ আফ্রিকারবিপক্ষে ১ উইকেটে ২৬৭ রানের দৃঢ় অবস্থানে থাকা ভারত ব্যাটিং পাওয়ার প্লের সুবিধা নিতেগিয়ে উল্টো তালগোল পাকিয়ে ২৯৬ রানে গুটিয়ে যায়। আবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রান তাড়ায়নাগালের বাইরে চলে যাওয়া ‘আস্কিং রেট’ ঠিক করতে আয়ারল্যান্ড দারুণভাবে কাজে লাগায় পাওয়ারপ্লে। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে নেওয়ার ক্ষেত্রে দলগুলোর প্রবণতা ছিল যত সম্ভব দেরিতে নেওয়ার।অন্য দিকে বোলিং পাওয়ার প্লে দলগুলো যত দ্রুত সম্ভব শেষ করে ফেলতে চাইতো। প্রায়ই পাওয়ারপ্লের শুরুতে মিলতো উইকেট। বেশিরভাগ সময় সেটা ম্যাচের সুর বেঁধে দিতো।
২০১১বিশ্বকাপে এসে ফরম্যাটের বদল হয় আরেক দফা। ২০০৭ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে ভারত-পাকিস্তানেরবিদায় সে পথে হাঁটতে এক রকম বাধ্য করে আইসিসিকে। কারণ একটিমাত্র হারেই টুর্নামেন্টথেকে পরাশক্তিদের ছিটকে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে নারাজ তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপের চারগ্রুপ উপমহাদেশে এসে হয়ে যায় দুই গ্রুপ। দলসংখ্যাও ১৬ থেকে কমে ১৪-তে। টেস্ট খেলুড়ে১০টি পূর্ণ আইসিসি সদস্যের সঙ্গে চার আইসিসি সহযোগী সদস্য- আয়ারল্যান্ড, কানাডা, নেদারল্যান্ডসও কেনিয়া। দুই গ্রুপের সেরা চারটি করে দল ওঠে কোয়ার্টার-ফাইনালে।
দেশেরমাটিতে প্রথম বিশ্বকাপের আয়োজন রাঙিয়ে তুলতে বাংলাদেশের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। মাঠেরক্রিকেট এর সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি। আয়ারল্যান্ড-নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জিতে সাকিবআল হাসানের দল। আর চার পরাশক্তির মধ্যে একটিকে হারানোর লক্ষ্য পূরণ হয় ইংল্যান্ডেরবিপক্ষে। চট্টগ্রামের ওই রোমাঞ্চকর জয় ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে আঁকা থাকবে দীর্ঘকাল।কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৮ রানে অলআউট হয় স্বাগতিকরা।আরেকটি হার ভারতের কাছে।
কোনোবড় দল প্রথম রাউন্ডে বাদ পড়েনি সেবার। ‘এ’ গ্রুপ থেকে কানাডা-কেনিয়ারসঙ্গে বিদায় জিম্বাবুয়ের। পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা-অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ড ওঠে কোয়ার্টারফাইনালে। এর মধ্যে পাকিস্তানের কাছে অস্ট্রেলিয়ার হার আলাদা উল্লেখের দাবি রাখে। ১৯৯৯বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের পর সেই প্রথম বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচে হারে অস্ট্রেলিয়া!
ওদিকে‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরেও ইংল্যান্ড উঠে যায় কোয়ার্টার-ফাইনালে।ছয় ম্যাচের পাঁচ জয়ে সবার উপরে থাকে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের সঙ্গী ভারত-ইংল্যান্ড-ওয়েস্টইন্ডিজ। নিজের শেষ বিশ্বকাপে ঝলসে ওঠে টেন্ডুলকারের ব্যাট। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডেরবিপক্ষে অবিস্মরণীয় দুটো সেঞ্চুরি করেন তিনি। অবশ্য এ ম্যাচ দুটিতে জিততে পারেনি ভারত।প্রোটিয়াদের বিপক্ষে তারা যায় হেরে আর ইংলিশদের বিপক্ষে ৩৩৮ করার পরও ম্যাচ হয় টাই।
কোয়ার্টার-ফাইনালেশ্রীলঙ্কা-ইংল্যান্ড এবং পাকিস্তান-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ দুটো হয়েছে একেবারে একপেশে।উপমহাদেশের দুই দল তাতে জেতে ১০ উইকেটের ব্যবধানে। দক্ষিণ আফ্রিকা নিউ জিল্যান্ডেরকাছে হয় নকআউট। তুলনায় আহমেদাবাদে ভারত-অস্ট্রেলিয়া কোয়ার্টার-ফাইনালটি ছিল অনেক রোমাঞ্চকর।যেখানে আগে তিন আসরের চ্যাম্পিয়নকে বিদায় করে দিয়ে শেষ চারে যায় ভারত।
উপমহাদেশেরআগের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার-ফাইনালে দেখা হয়ে গিয়েছিল ভারত-পাকিস্তানের। ২০১১ সালে হয়সেমি-ফাইনালে। বিশ্বকাপে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে শতভাগ জয়ের রেকর্ড ধরে রেখেএবারও জেতে ভারত। অন্যদিকে ষষ্ঠবারের মতো সেমি-ফাইনালে ওঠা নিউ জিল্যান্ড শেষ চার থেকেবিদায় নেয় ষষ্ঠবারের মতো। তাদের হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে ওঠে শ্রীলঙ্কা।বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফাইনালে মুখোমুখি হয় এশিয়ার দুই দল।
২এপ্রিল ২০১১। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের আবহে সেদিন শুধুই টেন্ডুলকার। বিশ্বকাপেনিশ্চিতভাবে নিজের শেষ ম্যাচ খেলতে যাচ্ছেন ‘ভারতীয় ক্রিকেট ঈশ্বর’। অধরা বিশ্বকাপস্পর্শ করেই কি বিদায়টা হবে না তার?
আগেব্যাটিং করে মাহেলা জয়াবর্ধনের অপরাজিত সেঞ্চুরিতে ছয় উইকেটে ২৭৪ রান তোলে শ্রীলঙ্কা।এরপর লাসিথ মালিঙ্গা যখন দ্রুতই টেন্ডুলকার-শেবাগকে আউট করেন, ম্যাচের পাল্লা তখন কিছুটাহলেও হেলে লঙ্কানদের দিকে। কিন্তু গৌতম গাম্ভীর, বিরাট কোহলি, মহেন্দর সিং ধোনিরা ম্যাচেরনিয়ন্ত্রণ ফেরান আবার ভারতের দিকে। লং অনের উপর দিয়ে ছক্কা মেরে ধোনি যখন ভারতের ছয়উইকেটের জয় নিশ্চিত করে, ডাগআউটে তখন আনন্দাশ্রু একজনের চোখের কোণে।
সবচেয়ে বেশি রান:
ব্যাটসম্যান/দেশ | ম্যাচ | রান | সেরা | গড় | ১০০/৫০ |
তিলকারত্নে দিলশান/শ্রীলঙ্কা | ৯ | ৫০০ | ১৪৪ | ৬২.৫০ | ২/২ |
শচীন টেন্ডুলকার/ভারত | ৯ | ৪৮২ | ১২০ | ৫৩.৫৫ | ২/২ |
কুমার সাঙ্গাকারা/শ্রীলঙ্কা | ৯ | ৪৬৫ | ১১১ | ৯৩.০০ | ১/৩ |
জোনাথন ট্রট/ইংল্যান্ড | ৭ | ৪২২ | ৯২ | ৬০.২৮ | ০/৫ |
উপুল থারাঙ্গা/শ্রীলঙ্কা | ৯ | ৩৯৫ | ১৩৩ | ৫৬.৪২ | ২/১ |
সবচেয়ে বেশি উইকেট:
বোলার/দেশ | ম্যাচ | উইকেট | সেরা | গড় | ইকোনমি |
শহিদ আফ্রিদি/পাকিস্তান | ৮ | ২১ | ৫/১৬ | ১২.৮৫ | ৩.৬২ |
জহির খান/ভারত | ৯ | ২১ | ৩/২০ | ১৮.৭৬ | ৪.৮৩ |
টিম সাউদি/নিউ জিল্যান্ড | ৮ | ১৮ | ৩/১৩ | ১৭.৩৩ | ৪.১৩ |
রবিন পিটারসন/দক্ষিণ আফ্রিকা | ৭ | ১৫ | ৪/১২ | ১৫.৮৬ | ৪.২৫ |
মুত্তিয়া মুরালিধরন/শ্রীলঙ্কা | ৯ | ১৫ | ৪/২৫ | ১৯.৪০ | ৪.০৯ |
যুবরাজ সিং/ভারত | ৯ | ১৫ | ৫/৩১ | ২৫.১৩ | ৫.০২ |