শঙ্কা উড়িয়ে স্বপ্নের মঞ্চে মোসাদ্দেক

বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন ছেলেবেলা থেকেই। সেই স্বপ্নকে ছোঁয়ার তাড়না আরও তীব্র হয় ২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে। পরের বিশ্বকাপকে লক্ষ্য হিসেবে ধরেছিলেন তখনই। কিন্তু বিশ্বকাপের মাত্র কয়েক মাস আগে ঘিরে ধরেছিল শঙ্কা। শেষ পর্যন্ত শঙ্কার জাল ছিঁড়ে স্বপ্ন পূরণের মঞ্চে ওঠার অপেক্ষায় মোসাদ্দেক হোসেন।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 April 2019, 02:08 PM
Updated : 16 April 2019, 05:38 PM

মঙ্গলবার দুপুরে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে যখন এবারের বিশ্বকাপের বাংলাদেশ দল ঘোষণা হয়, মোসাদ্দেক তখন পাশেই একাডেমি ভবনে। দলে জায়গা পাওয়ার খবরটি জানার পর থেকে তার মুখে হাসি লেগেই ছিল।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে এবার মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গে আবাহনী লিমিটেডে খেলছেন মোসাদ্দেক, বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়কের কাছ থেকে আগেই আভাস পেয়েছিলেন। এর পরও অপেক্ষা ছিল চূড়ান্ত খবরটি শোনার। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন, দল ঘোষণার পর থেকেই ভাসছেন রোমাঞ্চের দোলায়।

“বিশ্বকাপ আমার কাছে স্বপ্নের মতো। অনেক স্বপ্ন ছিল যে একদিন বিশ্বকাপ খেলব। লক্ষ্যও ছিল। ২০১৫ সালে যখন আমি প্রিমিয়ার লিগ খেলি, এখনকার মতোই বিশ্বকাপের আগে হয়েছিল। তখন দেখছিলাম বিশ্বকাপ দল নিয়ে অনেকের রোমাঞ্চ। তখন থেকেই ইচ্ছে ছিল পরে বিশ্বকাপে খেলব। নিজের ভেতর প্রস্তুতি সেই সময় ছিল।”

২৩ বছর বয়সী অলরাউন্ডার সবশেষ জাতীয় দলে খেলেছেন গত সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপে। তিনটি ম্যাচ খেলেছেন, মোটেও সুবিধে করতে পারেননি। দল থেকে বাদ পড়েন এরপর। মোসাদ্দেক ভেবেছিলেন, বিশ্বকাপটাও বুঝি হাত থেকে ফসকে গেল! তবে হাল ছাড়েননি। অপেক্ষায় ছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটে সুযোগ কাজে লাগানোর।

“এশিয়া কাপের পরের কথা বললে, আমার সম্ভাবনা ৫০-৫০ ছিল। আমি তখন ভেবেছি, সামনে যে টুর্নামেন্টগুলো আছে, সেগুলোতে ভালো খেললে সুযোগ আসবে। আমার সেদিকেই মন ছিল এবং অনেক চেষ্টা করেছি ভালো করতে।”

এবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্বে ৫৩.৫০ গড়ে ৪২৮ রান করেছেন মোসাদ্দেক, উইকেট নিয়েছেন ৭টি। এই পরিসংখ্যানের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ দলের প্রয়োজনে তার ব্যাটিং। বেশ কয়েকটি ম্যাচেই কঠিন উইকেট, বিপর্যয় থেকে দলকে উদ্ধার করেছেন পরিণত ব্যাটিংয়ে।

বিশেষ করে গত বুধবার শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের বিপক্ষে ১৪ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর নেমে যে অসাধারণ অপরাজিত সেঞ্চুরি করেছেন, সেটি নিশ্চিতভাবেই তাকে বিশ্বকাপ দলে জায়গা দিতে রেখেছে বড় ভূমিকা।

প্রিমিয়ার লিগে মাশরাফির সঙ্গে একই দলে খেলার সুযোগ তার জন্য এসেছে আশীর্বাদ হয়ে। আবাহনীর অধিনায়ক যদিও মোসাদ্দেক, তবু লিগ জুড়ে তাকে ভালো খেলার অনুপ্রেরণা জুগিয়ে গেছেন মাশরাফি। দলে ডাক পাওয়ার পর তাই কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুললেন না তিনি।

“আমি সবশেষ যে সেঞ্চুরি করলাম, দলের জন্য, আমার নিজের জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেই ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সময় মাশরাফি ভাই আমার সঙ্গে উইকেটে ছিল কিছুক্ষণ। তখন তিনি একটা কথা বলছিলেন যে, ‘দ্যাখ, লড়াইয়ে হাল ছেড়ে দেওয়া খুব সহজ। কিন্তু লড়াই করে টিকে থাকা কঠিন। চেষ্টা কর ম্যাচটা বাঁচাতে।”

“শুধু ওই ম্যাচে নয়, পুরো প্রিমিয়ার লিগেই উনার কাছ থেকে এত অনুপ্রেরণা পেয়েছি, আমার ভালো খেলার পেছনে উনার অবদান অনেক বেশি।”

তার বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়ার পেছনে বোলিং সামর্থ্যের বড় ভূমিকাও আছে। দল তাকে ভাবতে অফ স্পিনিং অলরাউন্ডারের ভূমিকায়। মোসাদ্দেকও সেটা জানেন। তাই বিশ্বকাপে খুব বড় কিছু করার স্বপ্ন না দেখে ভাবছেন শুধু নিজের ভূমিকা পালন করা নিয়ে।

“বোলিং নিয়ে আমি সবসময়ই প্রস্তুত থাকি। যখনই সুযোগ পাই, বোলিং করার চেষ্টা করি। প্রিমিয়ার লিগ খেলার সময় মাশরাফি ভাই বারবার বলেছেন যে তোর বোলিংয়ের ভূমিকা কী, সেটা মাথায় রেখে বল করার চেষ্টা করবি। আমি সেটাই চেষ্টা করেছি।”

“নিজের ভূমিকা আমি খুব ভালোভাবে জানি যে কোন পজিশনে ব্যাট করব বা কতটুকু বোলিং করতে পারব। এর চেয়ে বেশি কিছু চিন্তা করতে চাইলে আমার জন্যই ক্ষতি হবে। আমি সেভাবেই প্রস্তুতি নেব।”