সেমি-ফাইনালে দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ের পর ফাইনালেও ফিল্ডিংয়ে নিজেদের জাত চেনালেন অস্ট্রেলিয়ানরা।
Published : 19 Nov 2023, 06:42 PM
ম্যাচের বয়স তখন মোটে ১০ ওভার। ভারতের রান হয়ে গেছে ৮০। তারপরও রোহিত শার্মার আউট দেখে ধারাভাষ্যকক্ষে ইয়ান স্মিথ বললেন, “ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে এটিই।” রোহিত যেভাবে ব্যাট করছিলেন, তাকে থামানো অস্ট্রেলিয়ার জন্য জরুরি ছিল। তবে যেভাবে তিনি আউট হলেন, ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হয়ে ওঠার মূল কারণ সেটিই। কী অসাধারণ এক ক্যাচই না নিলেন ট্রাভিস হেড!
এবারের বিশ্বকাপে আগের ম্যাচগুলির মতোই খুনে মেজাজে ব্যাট করছিলেন রোহিত। শুরুতে শুবমান গিলকে হারালেও ভারতের রানের রথ ছুটছিল দারুণ গতিতে। ভিন্ন কিছু টেষ্টা করে দেখতেই পাওয়ার প্লের মধ্যে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের হাতে বল তুলে দেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। এই অফ স্পিনারের দ্বিতীয় ওভারেই রোহিতের সেই আউট।
পরপর দুই বলে চার-ছক্কা মেরে রোহিতই ছড়ি ঘোরাচ্ছিলেন। পাওয়ার প্লের শেষ ওভার বলেই কি না, আরও আগ্রাসী হওয়ার চেষ্টা করলেন ভারতীয় অধিনায়ক। পরের বলটিও ক্রিজে ছেড়ে বেরিয়ে এসে উড়িয়ে মারলেন। এবার টাইমিংয়ের গড়বড়, ব্যাটের কানায় লেগে বল গেল কাভারের দিকে। হেড বলের পিছু নিলেন কাভার পয়েন্ট থেকে। গুলির বেগে ছুটে পেছন থেকেই সামনে অনেকটা ঝাঁপিয়ে দারুণ দক্ষতায় মুঠোবন্দি করলেন বল। এরপর ধপাস করে মাটিতে পড়লেও বল হাতছাড়া করলেন না।
১৯৮৩ সালে অনেকটা একইভাবে ভিভ রিচার্ডসের ক্যাচ নিয়েছিলেন কাপিল দেব। ভারতীয় অধিনায়কের সেই ক্যাচ স্মরণীয় হয়ে আছে এখনও। হেডকে অবশ্য এতটা ছুটতে হয়নি বলের পিছু, তবে বলের নিচে যাওয়ার সময়ও তুলনামূলক কম পেয়েছেন তিনি। হেডের ক্যাচ মনে করিয়ে দিল কাপিলের সেই ক্যাচ।
হেডের ক্যাচ একটি নমুনা মাত্র। ইনিংসজুড়েই অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডিং ছিল দুর্দান্ত, বিশেষ করে গ্রাউন্ড ফিল্ডিং। প্রথম ১০ ওভারেই অন্তত ১০-১৫ রান বাঁচায় তারা ফিল্ডিংয়ে। এরপরও ধরে রাখে সেই ধারা।
সেমি-ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে ফিল্ডিং দিয়েই বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে ভারতের বিপক্ষেও দেখা গেল সেই অস্ট্রেলিয়াকেই। ফিল্ডিংয়ে যারা ছাড় দেয় না এক বিন্দু।
বলা হয়, ক্রিকেটে ব্যাটিং বা বোলিংয়ে বাজে দিন আসতেই পারে, কিন্তু ফিল্ডিংয়ে খারাপ দিন আসার কারণ নেই। এটিকে সবচেয়ে বেশি অনুসরণ করে বুঝি অস্ট্রেলিয়াই। ফিল্ডিংয়ে তাদের বিবর্ণ দিন আসে খুব কমই। তবে ফিল্ডিংয়ে সেরা ফর্মে থাকলে তারা যেমন করেন, সেই চেহারাতেই দেখা গেল বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় দুই ম্যাচে, সেমি-ফাইনাল ও ফাইনালে।
দলের সবচেয়ে ‘বুড়ো’ যিনি, সেই ডেভিড ওয়ার্নারই মাঠে সবচেয়ে ক্ষুরধার। চিতার গতিতে দৌড়, দুর্দান্ত রিফ্লেক্স, ডাইভিংয়ের নিখুঁত টাইমিং, একটি রান বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়া, কে বলবে তার বয়স পেরিয়ে গেছে ৩৭!
ধারাভাষ্যকক্ষে হার্শা ভোগলে তো বললেন, “ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর ওয়ার্নার চাইলে স্প্রিন্টার হতে পারেন।”
অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি ফিল্ডারই অবশ্য একেকজন হেড বা ওয়ার্নার। প্রতিটি রান বাঁচানোর যে প্রতিজ্ঞা তাদের, যে নিবেদন, তাদের প্রচেষ্টা দেখলে মনে হয় যেন ওই একটি রানের ওপর নির্ভর করছে ম্যাচের ভাগ্য!
একটু গভীরে গেলে, আসলেও কিন্তু তা-ই। একটি-দুটি করেই তো বাঁচানো হয়ে যায় অনেক রান। ইনিংস শেষে সেটিই গড়ে দেয় বড় পার্থক্য। ভারতের বিপক্ষে ফাইনালেও যেমন ২০-২৫ রান নিশ্চিতভাবেই ফিল্ডিংয়ে বাঁচিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। কিংবা হতে পারে আরও বেশি।
অস্ট্রেলিয়ার বোলিং অবশ্যই এ দিন দুর্দান্ত ছিল। বিশেষ করে তিন পেসার দারুণ বোলিং করেছেন। মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্স তো শুরু থেকেই ছিলেন ছন্দে। জশ হেইজেলউড শুরুতে খরুচে হলেও পরে ফিরে আসেন ঠিকই। স্পিনাররাও তাদের দায়িত্ব পালন করে ঠিকঠাক। সেই বোলারদের দারুণভাবে সহায়তা করেন অস্টেলিয়ার ফিল্ডাররা। ফিল্ডিংয়ের কারণে ভারতের ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপটা ধরে রাখা যায় টানা।
বোলিং তো অবশ্যই বড় ব্যাপার, সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার এমন ফিল্ডিংয়ের কারণেই মূলত অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্যটা ২৬৫ না হয়ে ২৪১ হয়েছে।