হাই স্কোরিং ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডকে ৫ রানে হারাল অস্ট্রেলিয়া।
Published : 28 Oct 2023, 07:20 PM
দুই বলে প্রয়োজন ৭ রান। মিচেল স্টার্কের ফুল টস ডেলিভারিতে টাইমিং করতে পারলেন না জিমি নিশাম। ডিপ মিড উইকেটে দ্রুত বল ধরে স্ট্রাইকিং প্রান্তে থ্রো করলেন মার্নাস লাবুশেন। দুই রানের চেষ্টায় নিশাম ক্রিজে ফেরার আগেই দারুণ ক্ষিপ্রতায় স্টাম্প ভেঙে দিলেন জশ ইংলিস। তাতেই যেন নিশ্চিত হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়ার রোমাঞ্চকর জয়।
তারপরও সুযোগ ছিল নিউ জিল্যান্ডের, শেষ বলে হাঁকাতে হতো ছক্কা। কোনো রানই নিতে পারেনি তারা। জয়োল্লাসে ফেটে পড়ে অস্ট্রেলিয়া।
ধারামশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে শনিবার হাই স্কোরিং ম্যাচে একদম শেষ বলে গড়ানো রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে ৫ রানে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। ৩৮৯ রানের বিশাল লক্ষ্যে শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ে থেকে ৩৮৩ রান করেছে গত দুই আসরের রানার্স-আপরা।
শেষ ওভারে তাদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৯ রান। দ্বিতীয় বলে ওয়াইডসহ বাউন্ডারি দেন মিচেল স্টার্ক। পরের তিন বলে টানা তিনটি ডাবলস নেন নিশাম। সমীকরণ ২ বলে ৭ রানে নেমে আসার পর নিশামের ওই রান আউট এবং কিউদের হার।
পরপর দুই পরাজয়ে আসর শুরু করা অস্ট্রেলিয়ার টানা চতুর্থ জয় এটি। ছয় ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থ স্থান আরেকটু পোক্ত করল তারা। নিউ জিল্যান্ড টানা চার জয়ের পর হারল দুই ম্যাচ। পয়েন্ট টেবিলে তাদের অবস্থান তিন নম্বরে।
শেষটা আক্ষেপে হলেও পাহাড়সম রান তাড়ায় অসাধারণ লড়াই করেছে নিউ জিল্যান্ড; বিশ্বকাপে দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের কীর্তি গড়েছে তারা। আগের সর্বোচ্চ চলতি আসরেই পাকিস্তানের করা ৩৪৫ রান। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওই ম্যাচে ৩৪৪ রান টপকে জয় পায় বাবর আজমের দল।
ধারামশালায় এদিন দুই ইনিংস মিলিয়ে হয়েছে ৭৭১ রান। বিশ্বকাপের এক ম্যাচে এটিই সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। আগের রেকর্ডও চলতি আসরে। দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে হয়েছিল ৭৫৪ রান। প্রোটিয়াদের ৪২৮ রানের জবাবে লঙ্কানরা করেছিল ৩২৬ রান।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে অস্ট্রেলিয়াকে রান পাহাড়ে তোলার বড় কারিগর দুই ওপেনার ট্র্যাভিস হেড ও ডেভিড ওয়ার্নার। উদ্বোধনী জুটিতে স্রেফ ১১৭ বলে দুজন যোগ করেন ১৭৫ রান।
আগের দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করা ওয়ার্নার এবার থামেন ৫ চার ও ৬ ছক্কায় ৮১ রানে।
হাতের চোট কাটিয়ে ফিরে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচেই ১০৯ রান করেছেন হেড। ৬৭ বলে ১০ চার ও ৭ ছক্কার ইনিংসের সৌজন্যে তার হাতেই উঠেছে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
গ্লেন ফিলিপসের বলে দুই ওপেনার ফেরার পর হতাশ করেন মিচেল মার্শ, স্টিভেন স্মিথ ও মার্নাস লাবুশেনরা। ফলে কিছুটা কমে আসে রানের গতি।
আগের ম্যাচে স্রেফ ৪০ বলে সেঞ্চুরি ছোঁয়া গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ফের হাওয়া দেন রানের পালে। ৫ চার ও ২ ছক্কায় ২৪ বলে তিনি করেন ৪১ রান।
এরপর জশ ইংলিস ও প্যাট কামিন্স জুটি গড়ে স্রেফ ২২ বলে যোগ করেন ৬২ রান। ৪টি চার ও ১ ছক্কায় ২৮ বলে ৩৮ রান করেন ইংলিস। কামিন্স খেলেন ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১৪ বলে ৩৭ রানের ইনিংস।
শেষ দিকে স্রেফ ১ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে চার বল বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।
ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা মারে মোট ২০টি ছক্কা। বিশ্বকাপে এক ইনিংসে এর চেয়ে বেশি ছক্কার নজির আছে শুধু ইংল্যান্ডের। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ২০১৯ সালের আসরে তারা হাঁকিয়েছিল ২৫ ছক্কা।
অবশ্য ওয়ানডেতে এক ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড এটি। আগের রেকর্ড বেঙ্গালোরে ২০১৩ সালে ভারতের বিপক্ষে ১৯টি।
অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড গড়া ইনিংসে কিউই বোলারদের মধ্যে সমীহ আদায় করতে পারেন শুধু ফিলিপস। ক্যারিয়ারে প্রথমবার ১০ ওভার বোলিং করে স্রেফ ৩৭ রানে ৩ উইকেট নেন অনিয়মিত এই অফ স্পিনার।
বিশাল রান তাড়ায় যা করণীয়, শুরু থেকেই তাতে মনোযোগ দেয় নিউ জিল্যান্ড। ষষ্ঠ ওভারেই স্কোরবোর্ডে পঞ্চাশ রান তুলে ফেলে তারা, পাওয়ার প্লেতে ৭৩ রান। তবে ১০ ওভারের মধ্যে দুটি উইকেটও হারায় তারা। ডেভন কনওয়ে ১৭ বলে ২৮ ও আরেক ওপেনার উইল ইয়াং ৩৭ বলে ৩২ রান করেন।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে রানের চাকা সচল রাখেন রাচিন রবীন্দ্র ও ড্যারেল মিচেল। দুজন মিলে ৮৬ বলে যোগ করেন ৯৬ রান। এই জুটি ভাঙেন অ্যাডাম জ্যাম্পা। চলতি আসরে তৃতীয় পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসে ৫১ বলে ৫৪ রান করে ফেরেন মিচেল।
একপ্রান্ত ধরে রেখে দলকে এগিয়ে নেন রবীন্দ্র। ৪৯ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর স্রেফ ২৮ বলে নেন পরের পঞ্চাশ রান। চলতি আসরে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচে সফল রান তাড়ায় তিনি খেলেছিলেন ১২৩ রানের অপরাজিত ইনিংস।
তরুণ এই অলরাউন্ডারকে থামান কামিন্স। ছক্কা মারতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ দেন রবীন্দ্র। ৯ চার ও ৫ ছক্কায় তিনি ৮৯ বলে খেলেন ১১৬ রানের ইনিংস।
তখনও জয় থেকে ৯৬ রান দূরে নিউ জিল্যান্ড। হাতে বাকি ছিল ৫৮ বল। সেখান থেকে শুরু হয় নিশামের লড়াই। শেষ ওভারে আক্ষেপ নিয়ে ড্রেসিং রুমে ফেরার আগে ৩টি করে চার-ছক্কায় ৩৯ বলে ৫৮ রান করেন নিশাম।
অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন জ্যাম্পা। কামিন্স, জশ হেইজেলউড ধরেন ২টি করে শিকার।
৯ ওভারে ৮৯ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন স্টার্ক। বিশ্বকাপে আগের ২৩ ইনিংসে ৫৬ উইকেট পাওয়া বাঁহাতি পেসার এবারই প্রথম কোনো ম্যাচে পেলেন না উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ৪৯.২ ওভারে ৩৮৮ (ওয়ার্নার ৮১, হেড ১০৯, মার্শ ৩৬, স্মিথ ১৮, লাবুশেন ১৮, ম্যাক্সওয়েল ৪১, ইংলিস ৩৮, কামিন্স ৩৭, স্টার্ক ১, জ্যাম্পা ০, হেইজেলউড ০*; হেনরি ৬.২-০-৬৭-১, বোল্ট ১০-০-৭৭-৩, ফার্গুসন ৩-০-৩৮-০, স্যান্টনার ১০-০-৮০-২, ফিলিপস ১০-০-৩৭-৩, রবীন্দ্র ৮-০-৫৬-০, নিশাম ২-০-৩২-১)
নিউ জিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৮৩/৯ (কনওয়ে ২৮, ইয়াং ৩২, রবীন্দ্র ১১৬, মিচেল ৫৪, ল্যাথাম ২১, ফিলিপস ১২, নিশাম ৫৮, স্যান্টার ১৭, হেনরি ৯, বোল্ট ১০*, ফার্গুসন ০*; স্টার্ক ৯-০-৮৯-০, হেইজেলউড ৯-০-৭০-২, কামিন্স ১০-০-৬৬-২, ম্যাক্সওয়েল ১০-০-৬২-১, জ্যাম্পা ১০-০-৭৪-৩, মার্শ ২-০-১৮-০)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৫ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ট্র্যাভিস হেড