সেদিন ছিলো বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন

বিশ্বকাপ ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য কোনটি?

নির্মলেন্দু গুণবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 March 2015, 06:34 PM
Updated : 17 March 2015, 06:34 PM

১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে- ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ জয়ী পাকিস্তানকে হারানো?

অথবা, ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপ-পর্বে ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ জয়ী ভারতকে এবং সুপার-৮ পর্বে উঠে একই বিশ্বকাপ আসরের অন্যতম ফেভারিট দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো? 

অথবা, বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ-২০১১-তে এবং চলমান বিশ্বকাপ-এ ( ২০১৫) দু’বারের ( ১৯৮৭ ও ১৯৯২) বিশ্বকাপ রানার্স আপ ইংল্যান্ডকে পরপর দু’বার হারানো?

আমরা কোন অর্জনটিকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা অর্জন বলবো?

এ-ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুবিধের জন্য আমি বাংলাদেশের ঐ পাঁচটি সফল বিশ্বকাপ ম্যাচের স্কোর কার্ড আপনাদের সামনে উপস্থিত করছি। অনেক পরিশ্রম করে আন্তর্জাল ঘেঁটে এই বিরক্তিকর কাজটি আমাকে করতে হয়েছে, কিছুটা আপনাদের জন্য এবং কিছুটা আমার নিজের জন্য।

১৯৯৭ সালে আইসিসি কাপ জেতার পর, ১৯৯৯ সালেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ লাভ করে।

৩১ মে ১৯৯৯ ইংল্যান্ডের নর্দাম্পটনে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় ।

টস জিতে পাকিস্তান বাংলাদেশকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠায়।  বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২২৩ রান তোলে। আকরাম খান করেন ৬৬ বলে ৪২ রান। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪০ রান আসে পাকিস্তানের দেয়া একস্ট্রা থেকে।

স্পিনার সাকলায়েন মোশতাক ৩৫ রানে পান ৫ উইকেট ।

রান তাড়া করতে নেমে পাকিস্তান ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে। শেষ-পর্যন্ত ১৬১ রানে পাকিস্তান অল আউট হলে, ১৯৭১-এর পর রুশ-ভারতের সাহায্য ছাড়াই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আরও একটি বড় বিজয় হাসিল করে।

২৭ রান ও ৩১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দি ম্যাচ নির্বাচিত হন খালেদ মাহমুদ সুজন।

কিন্তু এই বিজয়ের পরও বাংলাদেশ সুপার সিক্স-এ উঠতে পারেনি।

এবার ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত ৯ম বিশ্বকাপে বাংলাদেশ বনাম ভারত এবং বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার খেলার স্কোর কার্ডটা দেখুন।

সেবার মোট ৪ গ্রুপে ভাগ হয়ে ১৬টি দল বিশ্বকাপে অংশ নেয়। এতো বেশি সংখ্যক দেশ পূর্বে বা পরেও কখনও বিশ্বকাপে অংশ নেয়নি।

বি-গ্রুপে বাংলাদেশ ভারত, শ্রীলংকা ও বারমুডার সঙ্গী হয়।

পোর্ট অব স্পেনে টসে জিতে ভারত ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। এবং সব কটি উইকেট হারিয়ে ৪৯.৩ ওভারে মাত্র ১৯১ রান সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়। সৌরভ গাঙ্গুলী ১২৯ বলে  ৬৬ রান করেন। যুবরাজ করেন ৪৭ রান।  

মাশরাফি ৩৫ রানে ৪ উইকেট পান। ৩টি করে উইকেট পান স্পিনার আবদুর রাজ্জাক ও মোহাম্মদ রফিক।

রান তাড়া করতে নেমে ৪৮.৩ ওভারে বাংলাদেশ ৫ উইকেটে ১৯২ রান তুলে নিলে ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ এক ঐতিহাসিক জয় অর্জন করে। তামিম, সাকিব ও মুশফিক প্রত্যেকেই অর্ধশত রান করেন। মুশফিকুর রহমান নট আউট থাকেন ৫৬ রান নিয়ে, তামিম করেন ৫১ রান এবং এবং সাকিব ৫৩।

ম্যান অব দি ম্যাচ নির্বাচিত হন মাশরাফি বিন মর্তুজা ।

আগে শ্রীলংকা ও পরে বাংলাদেশের কাছে হেরে যাবার ফলে ভারত পরবর্তী রাউন্ডে উঠতে ব্যর্থ হয়। সেবারের মতো শেষ হয়ে যায় ভারতের বিশ্বকাপ মিশন।

বাংলাদেশ ৪ পয়েন্ট নিয়ে সুপার-৮ স্টেজে উঠে। সুপার-৮ স্টেইজে উঠে বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৬৭ রানে আরও একটি ঐতিহাসিক জয় পায়। তারিখ ৭ এপ্রিল ২০০৭।

গায়ানায় অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় প্রথমে ব্যাটিং করে ৮ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ  তোলে ২৫১ রান। আশরাফুল ৮৩ বলে ৮৭ রান পান। আর রান চেইজ করতে গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা মাত্র ১৮৪ রানে অল আউট হয়। আবদুর রাজ্জাক পান ২৫ রানে ৩ উইকেট। ম্যান অব দি ম্যাচ হন আশরাফুল।

২০১১ সালে বাংলাদেশের চট্রগ্রামে এবং চলতি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডেলাইড ওভালে ক্রিকেটর জন্মদাতা ইংল্যান্ড পরপর দুইবার বাংলাদেশের কাছে হার মানে। ২০১১ সালে প্রথমে বাট করে ইংল্যান্ড সব ক’টি উইকেট হারিয়ে ৪৯.৪ বলে ২২৫ রান সংগ্রহ করে। রান তাড়া  করতে নেমে বাংলাদেশ ৪৯ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২২৭ রান তুলে ম্যাচ জিতে নেয়। ইমরুল কায়েস করেন ৬০ রান। তামিম করেন ৩৮। ইমরুল কায়েস ম্যান অব দি ম্যাচ নির্বাচিত হন। 

ইংল্যান্ডকে হারিয়েও ২০১১ সালের বিশ্বকাপে আমাদের একটা বড় জয় পাওয়া হয় বটে, কিন্তু ৬ পয়ন্টে পেয়েও আমরা পরবর্তী রাউন্ডে উঠতে পারিনি। নীট রান রেটে একই পয়েন্ট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পরবর্তী রাউন্ডে উঠে।

২০১৫

এবারের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে আমাদের অনেক বড় লাভ হয়েছে। আমরা ইংল্যান্ডকে সরিয়ে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইন্যালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছি। অ্যাডেলাইড ওভালের নখ-কামড়ানো ম্যাচে বাংলাদেশের ২৭৫ রান তাড়া করতে গিয়ে ইংল্যান্ড তার সবক’টি উইকেট হারিয়ে ২৬০ রান করতে সমর্থ হলে বাংলাদেশের কাছে ১৫ রানে হার মানে ইংল্যান্ড।

এবারের জয়ের নায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও বোলার রুবেল হোসেন।

প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথম শতরান করেন।

আর বিষাক্ত বোলিং করে রুবেল পান ৪ উইকেট।

ম্যান অব দি ম্যাচ হন রিয়াদ।

বাংলাদেশের এই পাঁচটি জয়কে বিশ্লেষণ করে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, ২০০৭ বিশ্বকাপে শচীন, দ্রাবিড়, সেবাগ ও সৌরভ গাঙ্গুলীর শক্তিশালী ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয় লাভের ঐ ম্যাচটিই ছিলো বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা অর্জন। এবারের বিশ্বকাপে যার পুনরাবৃত্তির অপেক্ষায় প্রহর গুণছে বাংলাদেশ। 

ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ। আমরা তখন খুব ভালো করে খেয়ালও করিনি যে,  দিনটি ছিলো বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৮৭ তম জন্মদিন।

শুভ জন্মদিন, বঙ্গবন্ধু, জাতির জনক। এবারও আমরা আপনার আশিস প্রার্থনা করি।

রাত ১১-৪৫ মি.

১৬ মার্চ ২০১৫