৬ মাস নিষিদ্ধ সাকিব

অনেক 'সহ্য' করেছে বিসিবি, শেষ পর্যন্ত শক্ত হতেই হলো। একের পর এক শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনায় সাকিব আল হাসানকে সব ধরণের ক্রিকেট থেকে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করেছে দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2014, 10:52 AM
Updated : 8 July 2014, 10:46 AM

এছাড়া শাস্তি হিসেবে আগামী দেড় বছর দেশের বাইরে কোনো টুর্নামেন্টে খেলার জন্য সাকিবকে অনাপত্তিপত্র (এনওসি) না দেয়ারও ঘোষণা দিয়েছে তারা।

সোমবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) বৈঠকের পর বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান সাকিবকে এই 'দৃষ্টান্তমূলক' শাস্তি দেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।

“বোর্ড মনে করে ওর মারাত্মক আচরণগত সমস্যা রয়েছে। এর আগে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এমন কেউ আসেনি, যার এতো আচরণগত সমস্যা ছিল। ওর আচরণ এমন, যা আমাদের দলকে সরাসরি প্রভাবিত করছে। এটা আমাদের ক্রিকেটের জন্য সর্বনাশ ডেকে নিয়ে আসছে, তাই আমরা মনে করি অবশ্যই তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।”

অনাপত্তিপত্র না নিয়েই সিপিএল খেলতে ঢাকা ছেড়েছিলেন সাকিব। বিসিবির নির্দেশে রোববার দেশে ফিরে নিজের মতো করে ব্যাখ্যা দেন তিনি। সাকিবের দাবি, ভুল বোঝাবুঝির কারণে অনুমতি ছাড়াই দেশ ছাড়তে হয়েছিল।

এখন বিসিবির এই সিদ্ধান্তের ফলে আগামী বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বাইরে কোনো টুর্নামেন্টে খেলার জন্য ছাড়পত্র পাবেন না সাকিব। আর কিছু টুর্নামেন্টের জন্য আগে থেকে দেয়া অনাপত্তিপত্রও বাতিল করে দিয়েছে বিসিবি।

অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডে ওয়ানডে বিশ্বকাপ শুরুর আগেই সাকিবের ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে।

নিষেধাজ্ঞা চলার সময় জাতীয় দলের হয়ে অনুশীলন করতে পারবেন না সাকিব। তবে আলাদাভাবে বিসিবির সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করে অনুশীলনে কোনো বাধা নেই তার।

শুধু অনাপত্তি নিয়ে খেলতে যাওয়াই নয়, ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ চলার সময় সাজঘর ছেড়ে গ্যালারিতে গিয়েও শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্যও এই শাস্তি পেলেন সাকিব। ওই ঘটনার জন্যও পরে ভুল স্বীকার করেছিলেন তিনি।

গত ১৫ জুন মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে চলার সময় সাকিবের স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশিরকে কয়েকজন যুবক উত্ত্যক্ত করলে সাকিব সাজঘর থেকে এসে তাদের মারধর করেন।

পরে সাকিবের ব্যাখ্যা জানতে তাকে ডেকে পাঠায় জাতীয় ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। ম্যাচ চলার সময় গ্যালারিতে যাওয়া যাবে না- এমন কোনো নিয়ম তার জানা ছিল না বলে দাবি করেন তিনি। এ ব্যাখ্যা মেনে নেয়নি বিসিবি।

বোর্ডের ডেকে পাঠানোয় জবাবে জাতীয় দলের প্রধান কোচ হাথুরুসিংহেকে টেস্ট ও ওয়ানডে থেকে অবসর নিতে চাওয়ার 'হুমকি'ও দিয়েছিলেন সাকিব। কোচের সঙ্গে সাকিবের খারাপ ব্যবহারের কথাও সোমবারের প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান বোর্ড সভাপতি।

সাকিবের এই আচরণে বিরক্ত নাজমুল। তার মতে, এটা সাকিবের 'ড্যাম কেয়ার' ভাব। দলের শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে তার এমন উদ্ধত আচরণ আর প্রশ্রয় দেয়া ঠিক হবে না বলে মনে করেন তিনি।

“এজন্য অনেক কঠিন, অত্যন্ত দুঃখজনক, সকলের জন্যই অত্যন্ত কষ্টকর শাস্তিটা দিতে আমরা বাধ্য হয়েছি। এমনকি এর পুনরাবৃত্তি ঘটলে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা আছে তার।”

বিসিবির মত, সাকিবের এমন ব্যবহারের কারণে জাতীয় দলের মধ্যেও শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা শুরু হয়েছে। সাকিবের দেখাদেখি দলের অনেকেই নাকি তার মতো কথা বলা শুরু করেছে।

এভাবে চলতে থাকলে এবং এখনই কোনো ব্যবস্থা না নেয়া হলে আর কিছুদিন পর দলের অনেকেই আর কারো কথা শুনবে না বলে মনে করছে বিসিবি। তাই নতুন বড় কোনো সমস্যা এড়াতে সাকিবকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বোর্ড।

এর আগে দেশের উন্নতির জন্য বড় কোনো পরিবর্তন করতেও দ্বিধা করবেন না বলে জানিয়েছিলেন বোর্ড সভাপতি। সাকিব একের পর এক শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনা ঘটানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তিনি।

এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ চলার সময় অশোভন অঙ্গভঙ্গি করে তিন মাচে নিষিদ্ধ ছিলেন সাকিব।