৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আকসুর

মোট নয় জনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) ম্যাচ ফিক্সিং ও স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকাসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনেছে আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী ও নিরাপত্তা ইউনিট বা আকসু।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2013, 09:47 AM
Updated : 14 August 2013, 08:34 AM

মঙ্গলবার বিকালে হোটেল রেডিসনে আইসিসি ও বিসিবির যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আইসিসির প্রধান নির্বাহী ডেভ রিচার্ডসন এ কথা জানান। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান এ সময় তার পাশেই ছিলেন।

এই নয় জনের মধ্যে সাত জনের বিরুদ্ধে সরাসরি ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।

রিচার্ডসন জানান, বিসিবির দুর্নীতি বিরোধী নীতিমালা অনুযায়ী দোষী প্রমাণিত হওয়ার পর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার আগ পর্যন্ত অভিযুক্ত নয় জনের নাম প্রকাশ করা হবে না।

অভিযুক্তদের প্রত্যেকেই ক্রিকেটার কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানোর কোনো সুযোগ নেই, তবে এ ঘটনায় জড়িত হিসেবে যাদের সন্দেহ করা হচ্ছে তাদের সবাই ক্রিকেটার নন।”

গত বছরের ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া বিসিবির ক্রিকেটার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য দুর্নীতি বিরোধী নীতিমালার আওতায় এই অভিযোগগুলো আনা হয়েছে।

অভিযোগগুলোর মধ্যে আছে, বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স-এর দলে ম্যাচ পাতানোর ষড়যন্ত্র, ম্যাচ ফিক্সিং ও স্পট ফিক্সিং করা এবং ম্যাচ বা স্পট ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েও যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে এ সম্পর্কে না জানানো।

অভিযোগগুলো এরই মধ্যে অভিযুক্তদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে রিচার্ডসন জানান। তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের ‘নিরাপরাধ’ হিসেবে বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

আইসিসির প্রধান নির্বাহী জানান, নয় জনের মধ্যে সাত জন বিরুদ্ধে ম্যাচ বা স্পট ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার সরাসরি অভিযোগ আনা হয়েছে। এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের ওপরে বিসিবির নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৬ অনুযায়ী ৫ বছর থেকে আজীবন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।

বাকি দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পাওয়া বা জানার পরও তারা নিয়ম অনুযায়ী কর্তৃপক্ষকে জানাননি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তারা এক থেকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিমর্ষ বিসিবি সভাপতি বলেন, “এই ঘটনায় দেশবাসীর মতো আমিও ব্যথিত, হতাশ। আজ (মঙ্গলবার) আমাদের ক্রিকেটের একটি কালো দিন। যাদের নাম এসেছে তাদের মধ্যে আমাদের প্রিয় তারকারা আছেন। তাদের আমরা বিশ্বাস করেছিলাম। সেই বিশ্বাস ভেঙ্গে যাওয়ায় আমি ভীষণ হতাশ।”

“তবে আমি একদিক দিয়ে আনন্দিতও। আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছিলাম। নইলে ক্রিকেটে দুর্নীতি আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যেতো। এটা প্রত্যেকের জন্যই একটা বার্তা। দুর্নীতি করলে কেউই ছাড় পাবে না”, যোগ করেন তিনি।

বিপিএলের দ্বিতীয় আসরকে বাজিকরদের কালো থাবা থেকে বাঁচাতে আকসুকে তলব করে বিসিবি। ফাইনালের পরদিনই কয়েকটি ম্যাচ এবং ক্রিকেটারসহ কয়েকজনের আচরণ সন্দেহজনক বলে প্রতিবেদন জমা দেয় তারা। সেই প্রতিবেদন পাওয়ার পর এক কোটি ৬৪ লক্ষ টাকায় তদন্তের জন্য আকসুর সঙ্গে চুক্তি করে বিসিবি।

আকসুর প্রতিবেদন দেয়ার সময়সীমা বেশ কয়েকবার বাড়ানো হয়। নতুন নাম যোগ হওয়ায় বাড়ে তদন্তের ব্যপ্তিও। তদন্তের জন্য অন্তত ছয় বার বাংলাদেশ সফর করে আকসুর প্রতিনিধি দল। আইসিসির বোর্ড সভায়ও ভালোভাবে তদন্তের পরামর্শ দেয়া হয়।

বিসিবি তদন্ত অব্যাহত রাখার কথা জানালে কাজ চালিয়ে যেতে থাকে আকসু। দ্বিতীয় দফা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারোক্তি দেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল।

স্বীকারোক্তি দেয়ার পর গত ৪ জুন সব ধরনের ক্রিকেট থেকে আশরাফুলকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করে বিসিবি। সেদিনই ম্যাচ পাতানোয় জড়িত থাকার অভিযোগ স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমা চান টেস্ট ক্রিকেটে সর্বকনিষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে শতক করা আশরাফুল।