ম্যাচ হেরে মাহমুদউল্লাহর যত আক্ষেপ

শুরুর বোলিং ভালো হয়নি, শেষের বোলিং ভালো হয়নি। ব্যাটিংয়েরও শুরুটা ভালো হয়নি, সাকিব আল হাসানকে কেউ সঙ্গ দিতে পারেননি। ছোট ছোট জায়গায় অনেক ঘাটতি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে হারার পর পারফরম্যান্সের কাটাছেঁড়ায় এরকম অনেক কিছুই খুঁজে পাচ্ছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 July 2022, 06:52 AM
Updated : 4 July 2022, 08:18 AM

সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিং ব্যর্থতার পরও বাংলাদেশ রক্ষা পেয়েছিল বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায়। দ্বিতীয় ম্যাচে শনিবার বোলিং ছিল এলোমেলো ও ধারহীন, ব্যাটিং তো একদমই দিশাহীন। ৩৫ রানের জয়ে তাই সিরিজে এগিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

টি-টোয়েন্টিতে ৩৫ রানের জয় এমনিতেও বেশ বড়। তবে এই ব্যবধানও আসলে বোঝাতে পারছে না কতটা অনায়াস ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়। ওপেনার ব্র্যান্ডন কিংয়ের ফিফটি ও রভম্যান পাওয়েলের ২৮ বলে ৬১ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে ক্যারিবিয়ানরা ২০ ওভারে তোলে ১৯৩ রান।

রান তাড়ায় ৩ ওভারের মধ্যে বাংলাদেশ হারায় ৩ উইকেট। এরপর তাদের ব্যাটিংয়ে লড়াই করা বা চ্যালেঞ্জ নেওয়ার তাড়নাই আর দেখা যায়নি। একসময় যেভাবে সম্মানজনক পরাজয়ের জন্য খেলত বাংলাদেশ, সেই দিনগুলি যেন ফিরে আসে আবার।

ম্যাচ শেষে মাহমুদউল্লাহর বিশ্লেষণে শুরুতেই উঠে এলো বোলিংয়ের ঘাটতি। শুরুর বোলিং নিয়ে অধিনায়ক জানালেন আফসোস। ১৫ থেকে ১৭, এই তিন ওভারে ৫৫ রান তোলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মাহমুদউল্লাহ তুলে ধরলেন সেটিও।

“শুরুটা যথেষ্ট ভালো করতে পারিনি আমরা। শুরুর দিকে অনেক বেশি আলগা বল করেছি, যা ওদের মোমেন্টাম দিয়ে দেয়। মাঝের ওভারগুলোতে উইকেট নিয়ে আবার মোমেন্টাম আমরা ফিরে পাই। তবে রভম্যান তা আবার আমাদের কাছ থেকে নিয়ে নেয়। অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলেছে সে।”

“বোলিংয়ে আমরা কয়েকটি ওভারে বেশি রান দিয়ে ফেলেছি। ওটাতেও সমস্যা নেই, টি-টোয়েন্টিতে কয়েকটি ওভারে বেশি রান হতেই পারে। তবে যেভাবে আমাদের পরিকল্পনা ছিল, যে জায়গায় বল করার কথা, সেখানে আমরা করিনি। ওটা সম্ভবত একটা দিক।”

বোলিং যেমন একটি দিক, আরেকটি দিক তেমনি ব্যাটিং। দ্বিতীয় ওভারেই বাংলাদেশ হারায় দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস ও এনামুল হককে। তৃতীয় ওভারে একটি ছক্কা ও চারের পর বিদায় নেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও।

সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দল। সাকিব আল হাসান ফিফটি ও আফিফ হোসেন ৩৪ রান করলেও তা কেবল ম্যাচে একটু দীর্ঘায়িত করে, কিন্তু কখনোই মনে হয়নি জিততে পারে বাংলাদেশ।

সাকিবের রান এক পর্যায়ে ছিল ৩৭ বলে ৩৫! শেষ দিকে কয়েকটি চার-ছক্কায় ৫২ বলে ৬৮ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।

অধিনায়ক এখানে কাঠগড়ায় তুললেন সাকিব ছাড়া দলের অন্য ব্যাটসম্যানদের।

“ব্যাটিংয়েও আমরা যথেষ্ট ভালো ছিলাম না। সাকিব ভালো ব্যাট করেছে, তবে অন্য প্রান্তে আর কারও অবদান রাখা জরুরি ছিল। পাওয়ার প্লের সুবিধা নিতে হতো। এরপর সেই মোমেন্টাম বয়ে নিয়ে যেতে হতো। কিন্তু সাকিব ছাড়া… আফিফ ভালো খেলেছে, আর কোনো ব্যাটার কিছু করতে পারেনি।”

 “১৯০ তাড়া করতে হলে ভালো একটা শুরু খুব গুরুত্বপূর্ণ। পাওয়ার প্লেতে ৫৫-৬০ রান লাগবে, তাহলে হয়তো ম্যাচে থাকা যায়। আমরা প্রথম ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেললাম, রান করেছি সম্ভবত ৪৪। ওখানে আমরা কিছুটা পিছিয়ে পড়েছি।”

টি-টোয়েন্টিতে শুরুতে উইকেট হারালেও একটা গতি ধরে রাখতে হয়, রান তাড়া করে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে চোখ রাখতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে সেসবের কিছুই ছিল না। ইনিংসের মাঝপথে টানা ৪৫ বলে কোনো বাউন্ডারি আসেনি, দুইশর কাছাকাছি রান তাড়ায় এই পরিসংখ্যান প্রায় অবিশ্বাস্য। ব্যাটিং দেখে মনে হয়নি, দল জিততে চায়।

মাহমুদউল্লাহ যদিও বললেন, জয়ই ছিল তাদের ভাবনায়। দায় দিলেন তিনি দল হিসেবে খেলতে না পারাকে।

“সবসময় একটাই লক্ষ্য থাকে, ম্যাচ জেতা। টি-টোয়েন্টিতে আমরা যেরকম দল, ভালো করতে হলে দল হিসেবে ভালো খেলতে হবে। ছোট ছোট প্রতিটি জায়গায় যার যা ভূমিকা, সুনির্দিষ্টভাবে তা পালন করতে হবে। তাহলে দল হিসেবে আমরা ভালো পারফর্ম করি। এটাই আমাদের শক্তির জায়গা।”

“সবসময় খেয়াল করে দেখবেন, কোনো সিরিজের প্রথম বা দ্বিতীয় ম্যাচে যদি আমরা ভালো খেলি, তাহলে অনেক উজ্জীবিত থাকি ও সিরিজটিকে এগিয়ে নিতে পারি। অনেক সময় যদি পিছিয়ে থাকি… আমি বলছি না, তাহলে পারব না। তবে শুরুটা (ভালো হলে) আমাদের বাড়তি সুবিধা দেয়। যেখানে আমরা সবশেষ অনেক ম্যাচ ধরে ধুঁকছি।”