গলে সিরিজের প্রথম টেস্ট আড়াই দিনেই শেষ হয়ে গেছে। ১০৯ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ১১৩ রানেই গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। ৫ রানের লক্ষ্য ৪ বলের মধ্যে ছুঁয়ে ফেলে ১০ উইকেটের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে অস্ট্রেলিয়া।
২০১১ সালের পর এই প্রথম শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্ট জিতল অস্ট্রেলিয়া, সেবারও এই গলেই জিতেছিল দলটি। একই সঙ্গে দ্বীপ দেশটিতে এই প্রথম পরে ব্যাট করে জিতল অস্ট্রেলিয়া। এখানে তাদের আগের সাতটি জয় ছিল প্রথমে ব্যাট করে।
গলে টস জিতে প্রথম ব্যাট করা-এমন ২১ টেস্টের মধ্যে এটি লঙ্কার মাত্র চতুর্থ হার। আর এই চারের তিনটিই তারা হারল গত ১৮ মাসে।
প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়ে টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর তালিকায় সেরা দশে ঢুকেছেন লায়ন। কিংবদন্তি কপিল দেবকে (১৩১ ম্যাচে ৪৩৪ উইকেট) ১১ নম্বরে ঠেলে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন দশম স্থানে, লায়নের উইকেট হলো ১০৯ ম্যাচে ৪৩৬টি।
আর অনিয়মিত অফ স্পিনার হেড ক্যারিয়ার সেরা পারফরম্যান্সে ১০ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও এটাই তার সেরা পারফরম্যান্স।
ম্যাচ সেরা অবশ্য হয়েছেন ক্যামেরুন গ্রিন। প্রথম ইনিংসে দলের বিপদে সময় অতি মূল্যবান ৭৭ রানের ইনিংস খেলে এবং গুরুত্বপূর্ণ দুটি জুটি গড়ে দলকে লিড পাইয়ে দেন তিনি।
আট উইকেটে ৩১৩ রান নিয়ে খেলতে নেমে দিনের ১১ বলের মধ্যে শেষ হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস। ১৩৭ কি:মি: গতির দুটি রিভার্স সুইং ইয়র্কারে প্যাট কামিন্স ও মিচেল সোয়েপসনকে ফিরিয়ে তাদের ইনিংস গুটিয়ে দেন পেসার আসিথা ফের্নান্দো।
বড় ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে লঙ্কানদের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা ছিল বেশ দাপুটে। পাথুম নিশানকার চার দিয়ে ইনিংস শুরুর পর মিচেল স্টার্কের ওই ওভারেই শেষ তিন বলে বাউন্ডারি হাঁকান দিমুথ করুনারত্নে। ওভার থেকে আসে ১৭ রান, টেস্ট ক্রিকেটে গত ১০ বছরে ইনিংসে এটি সবচেয়ে খরুচে প্রথম ওভার।
১৭ রানের শুরুর ওভারে যে আভাস দিয়েছিল তারা, তা মিলিয়ে যায় খুব দ্রুত। ঘটনাবহুল দুই ঘণ্টায় স্টার্ক আর এক ওভার বল হাতে পান, তার দুই ওভারের স্পেল শেষ হয় ২৩ রান খরচায়। আরেক পেসার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স তো বল হাতেই নেননি।
শ্রীলঙ্কার উইকেট পতনের শুরু ষষ্ঠ ওভারে; লায়নের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন করুনারত্নে। ২০ বলে ৫ চারে ২৩ রান করেন তিনি, এটিই তাদের ইনিংসের সর্বোচ্চ। পরের ওভারে আরেক ওপেনার নিশানকাকে ফেরান সোয়েপসন।
সেই যে শুরু, এরপর আর প্রতিরোধ গড়তে পারেনি ওয়ানডে সিরিজ জিতে আসা দলটি। এদিন খেলা শুরুর একটু আগে কোভিড পজিটিভ হয়ে ছিটকে যান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। তার জায়গায় সুযোগ পাওয়া ওশাদা ফার্নান্দোও টিকতে পারেননি, ফিরে যান ১২ রান করে।
ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার খেলায় শেষে লাসিথ এম্বুলদেনিয়াকে ফিরিয়ে তাদের ইনিংস গুটিয়ে দেন হেড।
৪ রানের লক্ষ্যে নেমে প্রথম দুই বল ডট দিয়ে তৃতীয় বলে চার মারেন ওয়ার্নার। পরের বলেই রমেশ মেন্ডিসকে ছক্কায় উড়িয়ে ম্যাচ শেষ করে দেন তিনি।
গলে আগামী শুক্রবার শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ২১২
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৩১৩/৮) ৭০.৫ ওভারে ৩২১ (খাওয়াজা ৭১, ওয়ার্নার ২৫, লাবুশেন ১৩, স্মিথ ৬, হেড ৬, গ্রিন ৭৭, কেয়ারি ৪৫, স্টার্ক ১০, কামিন্স ২৬, লায়ন ১৫*, সোয়েপসন ১; আসিথা ৮.৫-১-৩৭-২, ধনাঞ্জয়া ৫-০-৮-১, এম্বুলদেনিয়া ১৫-০-৭৩-০, রমেশ ৩২-০-১১২-৪, ভ্যান্ডারসে ১০-০-৬৮-২)
শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: ২২.৫ ওভারে ১১৩ (নিশানকা ১৪, করুনারত্নে ২৩, মেন্ডিস ৮, ফার্নান্দো ১২, ধনাঞ্জয়া ১১, চান্দিমাল ১৩, ডিকভেলা ৩, রমেশ ০, ভ্যান্ডারসে ৮, এম্বুলদেনিয়া ০, আসিথা ৫*; স্টার্ক ২-০-২৩-০, লায়ন ১১-১-৩১-৪, সোয়েপসন ৭-০-৩৪-২, হেড ২.৫-০-১০-৪)
অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: ০.৪ ওভারে ১০/০ (ওয়ার্নার ১০*, খাওয়াজা ০*; রমেশ ০.৪-০-১০-০)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ১০ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: অস্ট্রেলিয়া দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ এ এগিয়ে
ম্যাচ সেরা: ক্যামেরন গ্রিন