টেস্ট সংস্কৃতি না গড়লে উন্নতির সম্ভাবনা দেখেন না সাকিব

বাংলাদেশের ক্রিকেটে টেস্ট সংস্কৃতি গড়ে না ওঠার হাহাকার কোচের পর শোনা গেল অধিনায়কের কণ্ঠেও। শূন্যতাটাকে বোঝাতে সাকিব আল হাসান টানলেন বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটের প্রতি এদেশের মানুষের উদাসীনতার কথা। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট ম্যাচে নিয়মিত চিত্র, সমর্থকে কানায় কানায় পরিপূর্ণ থাকে গ্যালারি, কিন্তু বাংলাদেশে সংখ্যাটা হাতে গোনার মতো। তার মতে, এতেই ফুটে উঠছে দেশের টেস্ট সংস্কৃতির করুণ অবস্থা। এর উন্নতি না হলে লাল বলে ভালো করার সম্ভাবনা দেখেন না বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2022, 10:07 AM
Updated : 28 June 2022, 10:07 AM

২০০০ সালের ২৬ জুন আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশ হিসেব স্বীকৃতি পেয়েছিল বাংলাদেশ। টেস্টে প্রায় দুই যুগের পথচলায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে, বারবার হোঁচট খেয়ে এগিয়েছে এই দল। গৌরবের মুহূর্ত এসেছে কমই। এখনও সেভাবে গড়ে উঠেনি টেস্ট সংস্কৃতি।

শক্তি-সামর্থ্য, অভিজ্ঞতা, এসব দিক থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর বাংলাদেশের বর্তমান দলের পার্থক্য খুব একটা নেই। তারপরও চলতি সফরে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে হোয়াইটওয়াশড হলো দল। অ্যান্টিগায় হারে তারা ৭ উইকেটে। সেন্ট লুসিয়ায় বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে সোমবার চতুর্থ দিন হেরে যায় ১০ উইকেটে।

দ্বিতীয় টেস্ট চলাকালীন বাংলাদেশের টেস্ট সংস্কৃতির ঘাটতির কথা বলেছিলেন প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। ম্যাচ শেষে সাকিবও বললেন একই কথা।

চলতি সিরিজ দিয়ে তৃতীয় দফায় বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়কের দায়িত্ব পান সাকিব। এর আগে তিনিই এই সংস্করণে ছিলেন না নিয়মিত। টেস্ট নিয়ে দলের আরও অনেকের অনীহা আছে বলেও শোনা যায় গুঞ্জন। টেস্ট খেলার সঠিক মানসিকতা খেলোয়াড়দের মধ্যে আছে কিনা, এর প্রভাবে দলের এই বাজে হাল কিনা, এমন সব প্রশ্নের জবাবে সাকিব উল্টো প্রশ্ন তুললেন দেশের টেস্ট সংস্কৃতি নিয়ে।

“খেলোয়াড়দের এখানে খুব বেশি দোষ দেওয়াটা ঠিক হবে না। শুধু খেলোয়াড়দেরই দোষ দিলে হবে না। আমাদের দেশের সিস্টেমটাই কিন্তু এমন। আপনি কবে দেখেছেন বাংলাদেশে ৩০ হাজার দর্শক টেস্ট ম্যাচ দেখছে বা ২৫ হাজার দর্শক মাঠে এসেছে টেস্ট দেখতে? ইংল্যান্ডে তো প্রতি ম্যাচে (টেস্ট) এরকম দর্শক থাকে। টেস্টের সংস্কৃতিটাই আমাদের দেশে ছিল না কখনও, এখনও নেই।”

ক্রিকেটারদের পাশাপাশি সমর্থকদের মিলে এই সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে বলে মনে করেন সাকিব। তা না হলে, টেস্ট বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এর চেয়ে খুব বেশি ভালো দেখেন না তিনি।

“টেস্ট সংস্কৃতি নেই বলে যে হবেও না, সেটাও কিন্তু নয়। এই জিনিসটা পরিবর্তন করাই আমাদের বড় দায়িত্ব। সবাই মিলে যদি একসঙ্গে পরিকল্পনা করে আগানো যায় তাহলেই হয়তো কিছু সম্ভব। নইলে আসলে খুব বেশি দূর আগানো সম্ভব হবে না। কারণ আমাদের টেস্টের সংস্কৃতিই নেই।”

১৫ বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলে আসছেন সাকিব। অভিজ্ঞতায় ঠাসা এই ক্রিকেটার মনে করেন, টেস্টকে সেভাবে মূল্যায়নই করা হয় না এই দেশে। তবে এখানে নিজেদের খারাপ পারফরম্যান্সের দায়ও দেখছেন তিনি।

“আমরা যে টেস্ট ক্রিকেটকে খুব বেশি মূল্যায়ন করি, তা নয়। হ্যাঁ, হতে পারে আমরা ফলাফল ভালো করিনি, এ কারণে মূল্যায়নও হয়নি। তবে একটার সঙ্গে আরেকটার সম্পর্ক আছে। একটার সঙ্গে আরেকটাকে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাহলেই ভালো কিছু সম্ভব।”

আপাতত লম্বা একটা সময় টেস্ট সিরিজ নেই বাংলাদেশের। আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে খেলবে তারা। মাঝের এই সময়টা কাজে লাগাতে চান বাংলাদেশ অধিনায়ক। দলের সবাই মিলে পরিকল্পনা করে এগোতে চান উন্নতির পথে।

“দেখুন, উন্নতি আসলে সব বিভাগেই করতে হবে। আমরা যদি টেস্ট ম্যাচ জিততে চাই, সব বিভাগেই উন্নতি করতে হবে। ভালো দিক হলো, এখন অনেক বড় একটা বিরতি আছে। যারা টেস্ট খেলতে আগ্রহী তারা হয়তো যার যার জায়গা থেকে উন্নতি করার চেষ্টা করবে। উন্নতি ছাড়া আর কোনো পথ নেই ভালো করার।”

“আমাদের এমন কোনো সেট অব প্লেয়ারও নেই যাদের আনলে তারাও ভালো করে ফেলবে। যারা আছি বা বাইরে আর যে দুই–চারজন আছে, সবাই মিলে যদি একসঙ্গে পরিকল্পনা করে এগোতে পারি, তাহলেই ভালো কিছু সম্ভব হবে। তা না হলে এতদিন ধরে যা হয়ে আসছে তা থেকে খুব বেশি একটা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।”

টেস্টে ভালো করার জন্য দলের সবার মানসিকতার পরিবর্তনও খুব করে দরকার বলে মনে হচ্ছে সাকিবের।

“আমাদের নিজেদের চিন্তার পরিবর্তনটা খুব জরুরি। এই জায়গায় কাজ করার আছে। এখন পাঁচ মাসের মতো একটা সময় আছে। সবাই বসে, কথা বলে, চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া যাবে বলে আমি মনে করি।”

“একজনকে ছাড়া আরেকজনকে নিয়ে পরিকল্পনা করে আসলে সফল হওয়া সম্ভব নয়। সবাই মিলে বসে যদি আমরা একটা পরিকল্পনা ধরে এগিয়ে যাই তাহলে অন্তত এক–দেড় বছর পর ধারাবাহিক পারফর্ম করা সম্ভব।”

হুট করেই সব ম্যাচে জেতা কিংবা প্রতিপক্ষের সঙ্গে তুমুল লড়াই করা সম্ভব নয়, ভালো করেই জানেন সাকিব। আগামীতে ঘরের মাঠের সিরিজগুলো অন্তত হারতে চান না তিনি।

“আমি বলব না যে টেস্ট জিততেই হবে। বিদেশে সব দলই আন্ডারডগ থাকে। নিউজিল্যান্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়ন দল। ওরাও যখন বাইরে খেলতে যায়, হেরে যায়। অন্য দেশে গেলে নিউ জিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত সব দলই হারে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে আমরা যেন ঘরের মাঠে না হারি। হয় ড্র করব, অথবা জিতব।”

“তখনও হয়তো আমরা নিয়মিত নাও জিততে পারি। তবে অন্তত প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ ক্রিকেটটা খেলব। যেটা আমাদের জন্য খুবই জরুরি। দেশের সিরিজগুলোতে খুব ভালো পরিকল্পনা করে খেলাটা তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করি, আমরা যেন জিতি, না জিতলেও সিরিজটা যেন ড্র ছাড়া অন্য কোনো ফল না হয়।”