চার দিনেই হেরে হোয়াইটওয়াশড বাংলাদেশ

বৃষ্টির সহায়তা নিয়েও সেন্ট লুসিয়া টেস্ট পঞ্চম দিনে নিতে পারল না বাংলাদেশ। নুরুল হাসান সোহান ছাড়া আর কেউ দেখাতে পারলেন না লড়াইয়ের মানসিকতা। ৫০ মিনিটের মধ‍্যে সফরকারীদের দ্বিতীয় ইনিংস গুটিয়ে দিয়ে অনায়াসে জিতে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফের ক‍্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশড হলো বাংলাদেশ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2022, 08:41 PM
Updated : 27 June 2022, 08:41 PM

ড‍্যারেন স‍্যামি ইন্টারন‍্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সোমবার বৃষ্টির জন‍্য নির্ধারিত সময়ের পাঁচ ঘণ্টা পর শুরু হয় খেলা। দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট পঞ্চম দিনে নিতে আড়াই ঘণ্টায় ৩৮ ওভার কাটিয়ে দিতে হতো সফরকারীদের। এর ধারে কাছেও যেতে পারেনি তারা। তবে সোহানের বিস্ফোরক ফিফটিতে এড়াতে পারে ইনিংস ব‍্যবধানে হারের চোখ রাঙানি।

দ্বিতীয় টেস্ট ১০ উইকেটে জেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৩ রানের ছোট লক্ষ‍্য ছুঁয়ে ফেলে কেবল ১৭ বলে।

২০১৮ সালে সবশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ একইভাবে দুই ম‍্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশড হয় বাংলাদেশ। এবার অনেক আশা নিয়ে এসেও সেই ব‍্যর্থতার বৃত্তেই আটকে থাকল দল। রাখতে পারল না উন্নতির ছাপ। ব‍্যাটিং, টেকনিক আর মানসিকতা নিয়ে এক গাদা প্রশ্নের জন্ম দিয়ে শেষ করল হতাশায় ভরা টেস্ট সিরিজ। 

লম্বা সময় অপেক্ষার পর স্থানীয় সময় বেলা তিনটায় খেলা শুরু হয়। সব ঠিক থাকলে সে সময় শুরু হতো তৃতীয় সেশন। এদিন পুরনো ও পরীক্ষিত কৌশল- বাউন্সার দিয়ে বাংলাদেশকে পরীক্ষায় ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অনায়াসেই তাতে উতরে যান সোহান। দিনের দ্বিতীয় বলেই কেমার রোচকে তিনি মারেন বাউন্ডারি। পরে খেলে যেতে থাকেন একইভাবে।

কিন্তু অন‍্যরা পারেননি তাকে সঙ্গ দিতে। ১৯তম বলে বাউন্ডারিতে রানের খাতা খোলা মেহেদী হাসান মিরাজ পরের বলেই হয়ে যান কট বিহাইন্ড। আলজারি জোসেফের নিখুঁত বাউন্সারের কোনো জবাব জানা ছিল না তার। জানা ছিল না শরীর তাক করে আসা এমন বাউন্সার সামলানোর কৌশল। 

মিরাজের বিদায়ের পর টি-টোয়েন্টি ঘরানার ব‍্যাটিংয়ে দ্রুত রান তোলেন সোহান। রোচকে পুল করে ওড়ান ছক্কায়, পরে দারুণ স্ট্রেইট ড্রাইভে মারেন চার। পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যেতে থাকেন সোহান, আসতে থাকে রান। কমতে থাকে ব‍্যবধান।

প্রথম ইনিংসে দৃঢ়তা দেখানো ইবাদত হোসেন এবার রানের খাতাই খুলতে পারেননি। দিনে প্রথমবারের মতো বোলিংয়ে এসে দ্বিতীয় বলেই তাকে বিদায় করেন জেডেন সিলস। বাউন্সার ঠিক মতো সামলাতে পারেননি ইবাদত, শর্ট লেগের ফিল্ডার রেমন রিফার কিছুটা দৌড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে চমৎকার ক‍্যাচ নেন।

সেই ওভারে হোয়াইড-বাউন্ডারিতে নিশ্চিত হয়ে যায় ফের ব‍্যাটিংয়ে নামতে হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। সিলসের পরের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান শরিফুল ইসলাম। তিনিও রানের খাতা খুলতে পারেননি।

৪০ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন সোহান। টেস্টে এটি তার তৃতীয় ফিফটি, তিনটিই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। সরাসরি থ্রোয়ে খালেদ আহমেদ রান আউট হয়ে গেলে ১৮৬ রানে থেমে যায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস।

৫০ বলে দুই ছক্কা ও ছয় চারে ৬০ রানে অপরাজিত থাকেন সোহান।

সিলস, রোচ ও জোসেফ নেন তিনটি করে উইকেট।

এরপর বাকিটা সারেন দুই ক‍্যারিবিয়ান ওপেনার ক্রেইগ ব্র‍্যাথওয়েট ও জন ক‍্যাম্পবেল। তবে তাদের বিচ্ছিন্ন করার একটা সুযোগ তৈরি করেছিলেন সৈয়দ খালেদ আহমেদ। সিরিজ জুড়ে দারুণ বোলিং করা এই পেসারের বলে ক‍্যাম্পবেলের ক‍্যাচ নিতে পারেননি ইবাদত হোসেন।

সেন্ট লুসিয়ায় অসাধারণ সেঞ্চুরি ও সিরিজে ছয় উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরার পুরস্কার জেতেন কাইল মেয়ার্স। ১৪৬ রানের ইনিংসের জন‍্য ম‍্যাচ সেরাও তিনিই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৩৪

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ৪০৮

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (আগের দিন ১৩২/৬) ৪৫ ওভারে ১৮৬ (সোহান ৬০*, মিরাজ ৪, ইবাদত ০, শরিফুল ০, খালেদ ০; রোচ ১৩-১-৫৪-৩, জোসেফ ১৪-২-৫৭-৩, ফিলিপ ৫-১-২৩-০, সিলস ৮-২-২১-৩, মেয়ার্স ৫-১-২১-০)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: (লক্ষ‍্য ১৩) ২.৫ ওভারে ১৩/০ (ব্র‍্যাথওয়েট ৪*, ক‍্যাম্পবেল ৯*; ইবাদত ১.৫-০-৯-০, খালেদ ১-০-৪-০)

ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১০ উইকেটে জয়ী

সিরিজ: ২ ম‍্যাচের সিরিজে ২-০তে জয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ

ম‍্যান অব দা ম‍্যাচ: কাইল মেয়ার্স

ম‍্যান অব দা সিরিজ: কাইল মেয়ার্স