গতবার ৪৩, এবার ১০৩, বিসিবি সভাপতি দেখছেন ‘উন্নতি’

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথম টেস্টে হেরেছে বাংলাদেশ, দ্বিতীয় টেস্টেও হার কেবল সময়ের ব্যাপার। তবে দলের খুব খারাপ অবস্থা, তা মানতে নারাজ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। তার মতে, ক্যারিবিয়ায় গতবারের সফরের চেয়ে এবার বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নিশ্চিতভাবেই ভালো।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2022, 07:32 AM
Updated : 27 June 2022, 08:03 AM

ওয়েস্ট ইন্ডিজে ২০১৮ সালের সফরে প্রথম টেস্টে অ্যান্টিগায় প্রথম ইনিংসে ৪৩ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। পরে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৪ রানে অলআউট হয়ে ম্যাচ হেরে যায় ইনিংস ও ২১৯ রানে।

এবারের সফরে প্রথম টেস্টে সেই অ্যান্টিগাতেই প্রথম ইনিংসে ১০৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। পরে বোলারদের সৌজন্যে লড়াই কিছুটা করতে পারে দল। যদিও ম্যাচ শেষ পর্যন্ত হেরে যায় ৭ উইকেটে।

অঙ্কের হিসেবে আর ফলাফলের ব্যবধানে তাই এবারের পারফরম্যান্সে উন্নতির ছোঁয়া আছে বটে। তবে বাস্তবে ক্রিকেটীয় মানে কতটা উন্নতি হয়েছে, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে লড়াইয়ের ছাপ খুব একটা দেখা যায়নি। শক্তি-সামর্থ্য আর অভিজ্ঞতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের এবারের দলও বেশ পিছিয়ে। গতবারের দল থেকে জেসন হোল্ডার, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, কাইরান পাওয়েল, দেবেন্দ্র বিশু, রোস্টন চেইসের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার এবার নেই।

গতবার দ্বিতীয় টেস্টে ১৬৬ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। এবার ইনিংস পরাজয়ের শঙ্কা এখনও আছে তৃতীয় দিন শেষে।

তবে বিসিবি সভাপতির কোনো সংশয়ই নেই যে দল এবার আগের চেয়ে ভালো করেছে। রোববার রাতে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগসহ অন্যান্য লিগের জমে থাকা বেশ কয়েক বছরের ট্রফি প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি বললেন দলের উন্নতির কথা।

“এই যে আমাদের দল ওয়েস্ট ইন্ডিজে গেল, আমরা অবশ্যই চাইব আমাদের দল জিতুক। কিন্তু আমরা যদি মনে করি ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে দল হেরে গেলে দলের খুব খারাপ অবস্থা, এটায় কিন্তু আমি একমত নই। সারাজীবন তো হেরেই আসছি! বরং প্রথম টেস্টের কথা যদি বলি, শেষবার যখন গিয়েছি ২০১৮-তে, তার চেয়ে এবারের পারফরম্যান্স ভালো। অবশ্যই এটা আমার কাছে একটা উন্নতি।”

বিসিবি সভাপতি এমন একটি দিনে এই কথা বললেন, যেদিন বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ২২ বছর পূর্ণ হয়েছে। তিনি অবশ্য অকপটে স্বীকার করে নিলেন, এই সংস্করণে বাংলাদেশ ভালো দল নয়। তবে অন্যান্য দলের উদাহরণ টেনে বললেন, তাদেরও ভালো করতে সময় লেগেছে।

“আমাদের সবচেয়ে দুর্বল দিক এখনও টেস্ট। সত্যি বলতে, টি-টোয়েন্টিতেও আমরা আহামরি কোনো দল নই। তবে অনেক দেশ, যারা এখন অনেক অনেক ভালো করছে টেস্টে, তাদের ইতিহাস যদি দেখেন, ২০-২২ বছরে তাদের পারফরম্যান্সও ভালো ছিল না।”

“আমাকে যদি ২২ বছরের কথা বলেন, আমরা দেশের মাটিতে জেতা শুরু করেছি। তার মানে সবগুলি যে জিতে যাব, তা নয়। আমরা কয়েকটি টেস্ট ম্যাচ জিতেছি দেশের মাঠে, শক্তিশালী দলের সঙ্গে। এটা একটা উন্নতি। বিদেশে গিয়েও যে আমরা জিততে পারি, সেটার একটা আভাস পেয়েছি। কিন্তু তাই বলে আপনারা যদি মনে করেন, অলরেডি আমরা ভালো দল হয়ে গেছি, প্রশ্নই আসে না। এখনও অনেক পথ যেতে হবে টেস্টে, অনেক পথ বাকি। সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।”

চলতি সেন্ট লুসিয়া টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বলেন, বাংলাদেশের টেস্ট সংস্কৃতি যেখানে থাকা দরকার, সেখানে এখনও পৌঁছতে পারেনি। টেস্ট সংস্কৃতি গড়ে না ওঠা নিয়ে আলোচনা আরও অনেকেই অনেক সময় করেছেন।

এই ২২ বছরের প্রায় ১০ বছরই বোর্ড সভাপতি হিসেবে কাজ করে আসছেন নাজমুল হাসান। ২০১২ সালের অক্টোবরে প্রথম দফায় বোর্ড প্রধানের দায়িত্ব নিয়েই তিনি বলেছিলেন, জোর দিতে চান টেস্ট ক্রিকেটে। প্রায় ১০ বছর পর তিনি এখনও বলছেন, টেস্ট সংস্কৃতি গড়ে উঠতে সময় লাগবে। এখানেও তিনি আবার টেনে আনলেন অন্য দেশগুলোকে।

“সংস্কৃতি গড়ে উঠতে সময় লাগবে। ভারতের প্রায় ২৬ বছর লেগেছিল প্রথম ম্যাচ জিততে… এত অস্থির হলে হবে না। আপনারা আরেকটা ব্যাপার দেখেন, টেস্টের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নিউ জিল্যান্ড। তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে ৮টার মধ্যে মাত্র ২টি সিরিজ জিততে পেরেছে (আদতে সিরিজ নয়, ম্যাচ)। তার মানে কি নিউ জিল্যান্ড খারাপ দল হয়ে গেল?”

আদতে ২৬ বছর নয়, প্রথম টেস্ট জিততে ভারতের সময় লেগেছিল সাড়ে ১৯ বছরের মতো। তবে সেসময় খেলা হতো অনেক কম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধর জন্য প্রায় ১০ বছর তারা কোনো ম্যাচই খেলেনি। প্রথম জয়ের ওই সাড়ে ১৯ বছরে স্রেফ ২৫টি ম্যাচ খেলেছিল তারা। বাংলাদেশ ২২ বছরে খেলে ফেলেছে ১৩৪ টেস্ট!

প্রথম টেস্ট জিততে ২৬ বছর লেগেছিল নিউ জিল্যান্ডের। তবে সেটিও ছিল তাদের কেবল ৪৬তম টেস্ট। গত বছর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের পর তাদের সময়টা ভালো যাচ্ছে না বটে। তবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ, র‌্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরের উচ্চতায় তো তারা উঠেছে। বাংলাদেশ কখনোই পারেনি ধারাবাহিক হতে।

বাংলাদেশের মতো এত দ্রুত এত বেশি টেস্ট খেলতে পারেনি আর কোনো দলই। সেন্ট লুসিয়া টেস্ট হারলে মাত্র ১৩৪ টেস্ট খেলেই ১০০ হার পূর্ণ হবে বাংলাদেশের। টেস্ট ইতিহাসে এত বাজে শুরু হয়নি আর কোনো দলের।