ব্যাটিং ধসে বিপদে নিউ জিল্যান্ড

শুরুতেই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া দলকে পথ দেখালেন টম ল্যাথাম ও কেন উইলিয়ামসন। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে গড়ে দিলেন শক্ত ভিত। পঞ্চাশ ছাড়ানো ইনিংস খেলা ল্যাথামের বিদায়ের সঙ্গে যেন পথ হারিয়ে ফেলল নিউ জিল্যান্ড। পরে আরও কয়েকটি উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে গেল সফরকারীরা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2022, 06:17 PM
Updated : 25 June 2022, 06:48 PM

হেডিংলি টেস্টের তৃতীয় দিন প্রথম সেশনে ইংল্যান্ডকে ৩৬০ রানে থামিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করছে নিউ জিল্যান্ড। ৫ উইকেট হারিয়ে ১৬৮ রান তুলে শনিবার দিন শেষ করেছে তারা। প্রথম ইনিংসে ৩২৯ রান করা দলটি এখন এগিয়ে আছে ১৩৭ রানে।

একটা সময় ১ উইকেটে ১২৫ রান ছিল কিউইদের। এরপর ব্যাটিং ধসে তাদের স্কোর দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১৬১। পুরো সিরিজ জুড়ে দারুণ ছন্দে থাকা ড্যারিল মিচেলের সঙ্গে আবারও দলের হাল ধরার চেষ্টা করছেন টম ব্লান্ডেল।

৮ ইনিংস পর পঞ্চাশের দেখা পাওয়া ল্যাথাম ১২ চারে করেন ৭৬ রান। স্লিপে জো রুট সহজ ক্যাচ ছাড়ায় ৭২ রানে একবার বেঁচেও যান তিনি। অধিনায়ক উইলিয়ামসন ৮ চারে ফেরেন ৪৮ রান করে।

৫৫ রানে ৬ উইকেট হারানো ইংল্যান্ডকে ৩১ রানের লিড এনে দেওয়ার কারিগর জনি বেয়ারস্টো ও জেমি ওভারটন। ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মতো দেড়শ ছাড়িয়ে বেয়ারস্টো থামেন ১৬২ রানে। অল্পের জন্য সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ সঙ্গী হয় অভিষিক্ত ওভারটনের। ফেরেন ৯৭ রান করে।

ইংলিশদের লিড বড় করতে না দেওয়ার স্বস্তি দ্রুতই উবে যায় নিউ জিল্যান্ডের। ব্যাটিংয়ে নেমে অষ্টম ওভারেই হারায় উইকেট। ম্যাথু পটসের বেরিয়ে যাওয়া বল ড্রাইভ করে তৃতীয় স্লিপে ধরা পড়েন উইল ইয়াং (৮)।

আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে এরপর দলকে এগিয়ে নেন উইলিয়ামসন ও ল্যাথাম। তাদের জুটিতে একশ ছাড়িয়ে যায় কিউইদের রান। কিন্তু জুটির রান শতক ছোঁয়ার আগে ল্যাথামকে কট বিহাইন্ড করে ফেরান ওভারটন।

কয়েক ওভার পর বৃষ্টির বাধায় খেলা বন্ধ থাকে কিছুক্ষণ। পরে খেলা শুরু হলে ডেভন কনওয়েকে প্রথম বলেই ফিরিয়ে দেন রুট। লেগ স্লিপে এক হাতে দারুণ ক্যাচ নেন অলিভার পোপ।

এক ওভার পর পটসের বাড়তি বাউন্সে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন উইলিয়ামসন। সিরিজে কিউই ব্যাটসম্যানকে এনিয়ে তিনবার আউট করলেন ইংলিশ এই তরুণ পেসার। জ্যাক লিচকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন হেনরি নিকোলস।

৩৬ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দলকে টানছেন প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মিচেল ও ফিফটি করা ব্লান্ডেল। পরে আরেক দফা বৃষ্টি নামলে আগেভাগেই দিনের খেলা শেষ ঘোষণা করেন আম্পায়াররা।

এর আগে বেয়ারস্টো ও ওভারটনের আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে ৬ উইকেটে ২৬৪ রান নিয়ে খেলতে নামা ইংল্যান্ডের দিনের শুরুটা হয় ভালোই। ১৩০ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা বেয়ারস্টো দেড়শতে পৌঁছাতে খুব বেশি দেরি করেননি।

ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় দ্রুততম ১৫০ রানের কীর্তি গড়েন তিনি ১৪৪ বলে। ২০১৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কেপ টাউন টেস্টে ১৩৫ বলে দেড়শ রানে পা রেখে রেকর্ডটি বেন স্টোকসের।

আট নম্বরে নেমে দারুণ ব্যাটিংয়ে টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরি সম্ভাবনা জাগিয়ে ওভারটন শেষ পর্যন্ত হন হতাশ। ট্রেন্ট বোল্টের বলে স্লিপে ধরা পড়ে শেষ হয় তার ২ ছক্কা ও ১৩ চারে গড়া ৯৭ রানের ইনিংস।

টেস্ট অভিষেকে আট নম্বরে নেমে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ ইনিংস এখন ওভারটনের। ২০১৬ সালে চেন্নাইয়ে ভারতের বিপক্ষে লিয়াম ডসনের করা অপরাজিত ৬৬ রান ছিল আগের রেকর্ড।

ওভারটনের বিদায়ে ভাঙে ২৪১ রানের জুটি। সপ্তম উইকেটে যা ইংল্যান্ডের প্রথম দুইশ রানের জুটি ও সব দল মিলিয়ে নবম সর্বোচ্চ।

মুখোমুখি হওয়া প্রথম ৭ বলে কোনো রান করতে না পারা স্টুয়ার্ট ব্রড এরপর চালান তাণ্ডব। বোল্টকে চার মেরে রানের খাতা খুলে পরের দুই বলে হাঁকান একটি করে চার ও ছক্কা। নিল ওয়্যাগনারকে তিন বলের মধ্যে চারের পর ওড়ান ছক্কায়। পরের ওভারেই লিড নিয়ে ফেলে ইংল্যান্ড।

টিম সাউদিকে দুই চার মারার পর বোল্ড হন ২ ছক্কা ও ৬ চারে ৩৮ বলে ৪২ রান করা ব্রড। বেয়ারস্টোর ফিরতি ক্যাচ নিতে পারেননি মাইকেল ব্রেসওয়েল। ১৬১ রানে জীবন পেয়ে অবশ্য এই স্পিনারের পরের ওভারেই বিদায় নেন তিনি ২৪ চারে ১৬২ রান করে।

লিচকে এলবিডব্লিউ করে ইংল্যান্ডের ইনিংস গুটিয়ে দেন সাউদি। ইংলিশরা শেষ তিন উইকেট হারায় ৯ রানে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩২৯

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৬৭ ওভারে ৩৬০ (আগের দিন ২৬৪/৬) (বেয়ারস্টো ১৬২, ওভারটন ৯৭, ব্রড ৪২, পটস ১*, লিচ ৮; বোল্ট ২২-৪-১০৪-৪, সাউদি ২৩-২-১০০-৩, ওয়্যাগনার ১২-১-৭৫-২, ব্রেসওয়েল ৭-০-৫৪-০১ মিচেল ৩-০-১৬-০)

নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৫১.৫ ওভারে ১৬৮/৫ (ল্যাথাম ৭৬, ইয়াং ৮, উইলিয়ামসন ৪৮, কনওয়ে ১১, নিকোলস ৭, মিচেল ৪*, ব্লান্ডেল ৫*; ব্রড ১৪-২-৪৫-০, লিচ ১৩-৫-২৬-১, পটস ৯.৫-২-২০-২, ওভারটন ৯-২-৩৪-১, স্টোকস ৪-০-৩০-০, রুট ২-০-৭-১)