বাংলাদেশের হতাশার ব্যাটিংয়ের পর ব্র্যাথওয়েট-ক্যাম্পবেলের দৃঢ়তা

ভালো শুরু পেয়েও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা পারলেন না বড় ইনিংস খেলতে। উইকেট ছুঁড়ে আসার প্রতিযোগিতায় যেন নেমেছিলেন তারা। তাতে শক্ত ভিত পেলেও বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি দল। পরে সফরকারীদের হতাশ করলেন বোলাররাও। আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ভালো শুরু এনে দিলেন দুই ওপেনার ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ও জন ক্যাম্পবেল।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2022, 08:44 PM
Updated : 24 June 2022, 09:59 PM

ড‍্যারেন স‍্যামি ইন্টারন‍্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম দিন বাংলাদেশকে ২৩৪ রানে গুটিয়ে দিয়ে ব্যাটিং করছে ক্যারিবিয়ানরা। বিনা উইকেটে ৬৭ রান নিয়ে শুক্রবার দিন শেষ করেছে স্বাগতিকরা। এখনও ১৬৭ রানে পিছিয়ে তারা।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েট খেলছেন ৪ চারে ৫৫ বলে ৩০ রানে। ক্যাম্পবেল অপরাজিত ৫ চারে ৪১ বলে ৩২ রান করে।

হতাশার ব্যাটিংয়ের পর বাংলাদেশের বোলাররা মেলে ধরতে ব্যর্থ হন নিজেদের। প্রতিপক্ষের দুই ওপেনারকে একেবারেই ভাবাতে পারেননি তারা। এলোমেলো বোলিংয়ে রান বিলিয়ে যান অকারতে।

ব্র্যাথওয়েট ও ক্যাম্পবেলের বিপক্ষে কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেননি শরিফুল ইসলাম, খালেদ আহেমদরা। লম্বা একটা সময় ধরে ক্যারিবিয়ানদের রান রেট ছিল ছয়ের কাছে।

এর আগে টস হেরে ব‍্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা ছিল আগের ম্যাচের তুলনায় বেশ ভালো। যদিও প্রথম ওভারে আউট হতে হতে বেঁচে যান তামিম ইকবাল। কেমার রোচের বলে আম্পায়ার্স কলের জন‍্য এলবিডব্লিউ হননি বাঁহাতি এই ওপেনার। তবে এরপর দারুণ সব শটে দ্রুত গতিতেই এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি।

সপ্তম ওভারে পরপর দুই বলে রিভিউ নিয়ে বাঁচেন মাহমুদুল হাসান জয়। দুইবারই রোচের বল লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে যেত। নড়বড়ে শুরুর পর একটু একটু করে নিজেকে ফিরে পেতে শুরু করেছিলেন তরুণ ওপেনার। তবে নিজের দ্বিতীয় বলেই তাকে বোল্ড করে দেন অভিষিক্ত পেসার অ‍্যান্ডারসন ফিলিপ।

ড্রাইভ করার চেষ্টায় ব‍্যাট-প‍্যাডের মাঝে অনেকটা ফাঁক রাখেন জয়। তার জন‍্য কাল হয় সেটাই। ফাঁক গলে বল আঘাত হানে স্টাম্পে। ভাঙে ৪১ রানের জুটি। প্রথম ঘণ্টায় সেটাই ছিল শেষ ওভার।

এক প্রান্তে সাবলীল ছিলেন তামিম, অন‍্য প্রান্তে সাবধানী ব‍্যাটিংয়ে এগোচ্ছিলেন শান্ত। আর কোনো ক্ষতি ছাড়াই প্রথম সেশন কাটিয়ে দেওয়ার পথে ছিল বাংলাদেশ। এমন সময় আচমকা আলজারি জোসেফের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল তাড়ায় সহজ ক‍্যাচ তুলে দেন তামিম। বাজে এক শটে শেষ হয় তার ৯ চারে ৬৭ বলে খেলা ৪৬ রানের ইনিংস।

একাদশে জায়গা পেয়েই রেকর্ড হয়ে গিয়েছিল এনামুল হকের। বাংলাদেশের হয়ে দুই টেস্টের মধ‍্যে সবচেয়ে দীর্ঘ বিরতির রেকর্ড গড়েন তিনি। ৭ বছর ৯ মাস ১১ দিন পর টেস্টে ফিরলেন তিনি। এই সময়ে বাংলাদেশ খেলেছে ৪৮ টেস্ট। এর আগে বাংলাদেশের দীর্ঘতম বিরতি ছিল পেসার নাজমুল হোসেনের। ২০০৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর অভিষেক টেস্ট খেলার পর নিজের দ্বিতীয় টেস্ট খেলেছিলেন তিনি ১৭ ডিসেম্বর ২০১১ সালে, ঠিক ৭ বছর পর।

এনামুলকে জায়গা দিতে গিয়ে বাদ পড়েন সবশেষ ৯ ইনিংসে দুই অঙ্ক ছুঁতে না পারা মুমিনুল হক। ৩১ ম‍্যাচ পর বাদ পড়লেন এই বাঁহাতি ব‍্যাটসম‍্যান।

ক্রিজে যাওয়ার একটু পর চমৎকার স্ট্রেইট ড্রাইভে বাউন্ডারিতে রানের খাতা খোলেন এনামুল। লাঞ্চের পর চমৎকার কিছু বাউন্ডারিতে এগিয়ে যান তিনি। শান্তর সঙ্গে জমে যায় তার জুটি। দুই ওপেনারকে হারিয়ে একশ ছুঁয়ে ফেলা বাংলাদেশের নজর তখন বড় সংগ্রহে।

পরপর দুই ওভারে থিতু দুই ব‍্যাটসম‍্যান এনামুল হক ও নাজমুল হোসেন শান্তর বিদায়ে বড় একটা ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। দুই জনই বিদায় নেন আম্পায়ার্স কলে এলবিডব্লিউ হয়ে।

সাবলীল খেলতে থাকা এনামুলের ইনিংস থামে ফিলিপের নিচু হয়ে আচমকা ভেতরে ঢোকা বলে। পা বাড়িয়ে ব‍্যাটে খেলতে পারেননি ব‍্যাটসম‍্যান। আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দিলে রিভিউ নেন এনামুল। টেস্টে ফেরার ম‍্যাচে ৫ চারে ৩৩ বলে ২৩ রান করেন তিনি।

পরের ওভারে কাইল মেয়ার্সের অ‍্যাঙ্গেলে ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান শান্ত। তিনিও রিভিউ নেন। বল লাগতো লেগ স্টাম্পের বেলে! ৭৩ বলে চারটি চারে ২৬ রান করে ভীষণ হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়েন শান্ত। পরপর দুই ওভারে আম্পায়ার্স কলে দুটি আউটে অসন্তুষ্ট দেখায় বাংলাদেশ দলের সদস‍্যদের।

অ‍্যান্টিগার মতো সুইং মিলছে না সেন্ট লুসিয়ায়। তবে প্রথম দিন থেকেই এখানে মিলছে অসমান বাউন্স। প্রথম দুই সেশনেই বেশ কিছু বল আচমকা নিচু হয়েছে।

মনে হচ্ছিল লিটন দাসের সঙ্গে জুটিতে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে ফেলেছেন সাকিব। কিন্তু পানি পানের বিরতির পর দ্বিতীয় বলেই বিদায় নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। জেডেন সিলসের বেশ বাইরের বল স্টাম্পে টেনে আনেন বাঁহাতি এই ব‍্যাটসম‍্যান। একটু পরেই জোসেফের বাউন্সার সামলাতে না পেরে কিপারকে ক‍্যাচ দিয়ে বিদায় নেন নুরুল হাসান সোহান। 

চা-বিরতির পর দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ব‍্যাকফুট পাঞ্চে মেয়ার্সকে চার মারার এক বল পর এর পুনরাবৃত্তির চেষ্টায় পয়েন্টে ধরা পড়েন মেহেদী হাসান মিরাজ। ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত এক ক‍্যাচ নেন বদলি ফিল্ডার ডেভন টমাস।

নিজের মতো করে খেলে যাচ্ছিলেন লিটন। দৃষ্টিনন্দন সব শটে মারছিলেন বাউন্ডারি। অন‍্য প্রান্তে উইকেট পতন যেন স্পর্শ করছিল না তাকে। সিলসকে ফ্লিক করে চমৎকার চারে ওয়েস্ট ইন্ডিজে নিজের প্রথম ফিফটি করেন লিটন, ৬৬ বলে। তবে সেই চারের জন‍্যই পরের ওভার সামলানোর দায়িত্ব এসে যায় ইবাদত হোসেনের কাঁধে। হতাশ করেননি তিনি, কেমার রোচকে মারেন একটি বাউন্ডারিও।

পরের ওভারে পুল করতে গিয়ে নিজেই তালগোল পাকিয়ে ফেলেন লিটন। জোসেফের লেংথ বলে ক‍্যাচ দেন মিড অনের ফিল্ডার বরাবর। লিটনের ৭০ বলে খেলা ৫৩ রানের ইনিংসে চার আটটি। ১৯১ রানে ৮ উইকেট হারানো বাংলাদেশের জন‍্য দুইশ রান তখন মনে হচ্ছিল অনেক দূরের পথ।

স্বীকৃত ক্রিকেটে শরিফুল ও ইবাদতের সেরা ইনিংসে দুইশ ছাড়ায় বাংলাদেশের সংগ্রহ। ক্রিজে গিয়েই বোলারদের উপর চড়াও হন শরিফুল। খেলেন ১৭ বলে পাঁচটি চারে ২৬ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। তার আগের সেরা ছিল লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের ২২। টেস্টে তার আগের সেরা ছিল ৭, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১২।

সিলসকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় জার্মেইন ব্ল‍্যাকউডের হাতে শরিফুল ধরা পড়লে ভাঙে ৩০ বল স্থায়ী ৩৬ রানের জুটি।

ইবাদত অপরাজিত থাকেন তিন চারে ৩৫ বলে ২১ রান করে। টেস্টে তার আগের সেরা ছিল ৪, সব মিলিয়ে ১২। সে সব এক ইনিংসেই ছাড়িয়ে গেলেন তিনি।

খালেদ আহমেদকে বিদায় করে বাংলাদেশের ইনিংসের সমাপ্তি টানেন সিলস।

পাঁচ পেসার নিয়ে খেলা ওয়েস্ট ইন্ডিজের চার জন ভাগ করে নেন ১০ উইকেট। ভালো বল করলেও উইকেট পাননি রোচ। তিনটি করে উইকেট নেন জোসেফ ও সিলস। দুটি করে ফিলিপ ও মেয়ার্স।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৬৪.২ ওভারে ২৩৪ (তামিম ৪৬, জয় ১০, শান্ত ২৬, এনামুল ২৩, লিটন ৫৩, সাকিব ৮, সোহান ৭, মিরাজ ৯, ইবাদত ২১*, শরিফুল ২৬, খালেদ ১; রোচ ১৫-৩-৫৭-০, সিলস ১৪.২-৪-৫৩-৩, জোসেফ ১৫-১-৫০-৩, ফিলিপ ৯-১-৩০-২, রিফার ৩-১-৬-০, মেয়ার্স ৮-০-৩৫-২)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ১৫ ওভারে ৬৬/০ (ব্র্যাথওয়েট ২৯*, ক্যাম্পবেল ৩২*; শরিফুল ৫-২-১৯-০, খালেদ ৩-০-১৭-০, সাকিব ২-০-৯-০, ইবাদত ৪-১-৮-০, মিরাজ ১-০-৯-০)