প্রথম বল থেকে মেরে খেলতে লিভিংস্টোনের দুই বছরের চেষ্টা

ব্যাট হাতে লিয়াম লিভিংস্টোনের একটিই দর্শন-আক্রমণ। একটি পথই তার জানা-প্রতিপক্ষের বোলিং গুঁড়িয়ে এগিয়ে চলা। টি-টোয়েন্টি হোক বা ওয়ানডে, প্রথম বল থেকেই চড়াও হওয়ার চেষ্টা থাকে তার। ইংল্যান্ডের বিধ্বংসী এই ব্যাটসম্যান জানালেন, ক্রিজে গিয়েই ঝড় তোলার জন্য বছরে দুয়েক ধরে ব্যাটিং নিয়ে কাজ করছেন তিনি।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 June 2022, 05:02 AM
Updated : 22 June 2022, 07:45 AM

এই সময়ে বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যাটসম্যানদের একজন লিভিংস্টোন। তার ইংল্যান্ড সতীর্থ জস বাটলার কিংবা এরকম আরও অনেক বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান অনেক সময় একটু সময় নিয়ে থিতু হয়ে তারপর জ্বলে ওঠেন। কিন্তু লিভিংস্টোন সাধারণত রুদ্ররূপে আবির্ভুত হন উইকেটে যাওয়ার পরপরই।

এতদিন মূলত টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান হিসেবেই তাকে দেখে আসছিল ক্রিকেট বিশ্ব। এখন ওয়ানডেতেও তার ব্যাটিং তাণ্ডব দেখা যাচ্ছে। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের চলতি ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে দলীয় ৪৯৮ রানের বিশ্বরেকর্ডে বড় অবদান ছিল লিভিংস্টোনের ২২ বলে ৬৬ রানের ইনিংসের।

স্রেফ ৫টি ওয়ানডে খেলেছেন এখনও পর্যন্ত, তার স্ট্রাইক রেট ১৫৪.৩৪। বিবেচনায় নেওয়ার জন্য ৫ ম্যাচ খুব কম সময়, তবে এই সংস্করণেও যে তিনি এভাবেই ব্যাট করে যাবেন, তা বোঝা যায় তার লিস্ট ‘এ’ স্ট্রাইক রেট দেখে। ৬০ ম্যাচ খেলে স্ট্রাইক রেট তার ১০২.৫৪।

টি-টোয়েন্টিতে তো কথাই নেই। ইংল্যান্ডের হয়ে ১৭ ম্যাচ খেলে তার স্ট্রাইক রেট ১৫৮.৩৩। সব মিলিয়ে ২০ ওভারের ক্রিকেটে ১৮৮ ম্যাচে তার স্ট্রাইক রেট ১৪৬.৬৬।

নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ওই ম্যাচে ৪৫ ওভারে উইকেটে গিয়ে প্রথম বলে সিঙ্গেল নেন লিভিংস্টোন। পরের ওভারেই চার ছক্কা ও দুই চারে তিনি নেন ৩২ রান। ২৮ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান বললেন, অনুশীলনে তিনি নিজেকে তৈরি করছেন শুরু থেকেই মেরে খেলার জন্য।

“গত বছর দুয়েক ধরেই এটা নিয়ে কাজ করছি। সম্ভবত এই সামর্থ্যের কারণেই ইংল্যান্ড দলে সুযোগ পেয়েছি। ধীরে ধীরে এই ভূমিকায় অভ্যস্ত হতে শুরু করেছি। এবার পুরো আইপিএলেও এটা করেছি এবং এখন ইংল্যান্ড দলে আরও বেশি করে করতে শুরু করেছি।”

“অনুশীলন থেকেই এটার অনেকটুকু আসে। এই দলে (ইংল্যান্ড) আরেকটা বড় ব্যাপার হলো আস্থা। এই পথে (প্রথম বল থেকেই মেরে খেলা) প্রতিদিন সফল হওয়া যাবে না। কোনো দিন এটা কাজে দেবে, কোনো দিন দেবে না। কিন্তু তাতে কারও কোনো সমস্যা নেই। দলের সবার পরস্পরের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস আছে যে, দিনটা আমার না হলে অন্য কেউ এটা করে দেবে।”

এবার আইপিএলের সাফল্য তার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে আরও। ২০১৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত আইপিএলে বিচ্ছিন্নভাবে খেলে ৯ ইনিংসে ১৪ গড়ে তার রান ছিল ১১২, স্ট্রাইক রেট ১২৫। তার পরও এবার মেগা নিলামে তাকে সাড়ে ১১ কোটি রুপিতে দলে নেয় কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব, মূলত তার প্রভাব বিস্তারি ব্যাটিংয়ের জন্যই। লিভিংস্টোন সেটার প্রতিদানও দেন। এই আসরে তিনি ৪৩৭ রান করেন ১৮২.০৮ স্ট্রাইক রেটে!

আইপিএলে শেষ পর্যন্ত ছাপ রাখতে পেরে নিজেকে নির্ভার মনে হচ্ছে লিভিংস্টোনের। ভারতে আইপিএল খেলাটা এখানে আগামী বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপে কাজে দেবে বলেও মনে করছেন তিনি।

“সত্যি বলতে, আগের বছরগুলোর চেয়ে আর বেশি খারাপ করার কিছু তো ছিল না! ওখান থেকে কেবল ভালোই হতে পারত। তবে আগে সুযোগও খুব বেশি পাইনি। আর কথা বলার লোকের তো অভাব নেই। যাহোক, এটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট, এখানে ভালো করতে পেরে ভালো লাগছে।”

“স্পষ্ট একটি ভূমিকা থাকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ওখানে গিয়ে আইপিএল খেলি যাতে ওই পরিবেশ ও কন্ডিশনের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে পারি, দিনশেষে যা কাজে লাগবে ইংল্যান্ডের জন্য আগামী বছরের বিশ্বকাপে। বিশ্বকাপের আগে যে কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা হওয়াই দারুণ ব্যাপার। আমি তাই উপভোগই করেছি। আইপিএলে ভালো করে বোঝাটা সরিয়ে দিতে পেরে ভালো লাগছে।”