নিসানকার দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়াকে হারাল শ্রীলঙ্কা

সামনে ছিল বড় লক্ষ্য। জিততে হলে গড়তে হতো রেকর্ড। রেকর্ড জুটিতে দলকে পথ দেখালেন পাথুম নিসানকা ও কুসল মেন্ডিস। চমৎকার এক সেঞ্চুরিতে নিসানকা খেললেন রেকর্ড গড়া ইনিংস। অসাধারণ জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল শ্রীলঙ্কা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2022, 05:11 PM
Updated : 19 June 2022, 06:34 PM

কলম্বোতে তৃতীয় ওয়ানডেতে রোববার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার জয় ৬ উইকেটে। ২৯২ রানের লক্ষ্য স্বাগতিকরা ছুঁয়ে ফেলে ৯ বল বাকি থাকতে।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই সংস্করণে শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয় এটি। ২০১২ সালে হোবার্টে ২৮১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় জয় ছিল আগের রেকর্ড।

ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে ১৪৭ বলে ১৩৭ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা ওপেনার নিসানকা।

১১ চার ও ২ ছক্কায় গড়া তার ইনিংসটি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডেতে কোনো শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। আগের সর্বোচ্চ ছিল সনাৎ জয়াসুরিয়ার ১২২, সিডনিতে ২০০৩ সালে।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় উইকেটে শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ ১৭০ রানের জুটি উপহার দেন নিসানকা ও মেন্ডিস। পায়ে টান লাগায় মেন্ডিস স্বেচ্ছায় মাঠ ছাড়েন ৮৫ বলে ৫ চারে ৮৭ রান করে।

আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের মন্থর উইকেটে শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানের সংগ্রাম করতে হয় রান তুলতে। অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ ও ট্রাভিস হেডের ফিফটিতে ৬ উইকেটে ২৯১ রানের পুঁজি গড়ে সফরকারীরা।

রান তাড়ায় নিসানকার সঙ্গে ৪২ রানের উদ্বোধনী জুটিতে ভিত করে দেন নিরোশান ডিকভেলা। দানুশকা গুনাথিলাকার জায়গায় সুযোগ পাওয়া এই কিপার-ব্যাটসম্যান ৫ চারে ২৫ রান করে বোল্ড হন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বলে।

এরপর মেন্ডিসের আগ্রাসী ও নিসানকার ধীরস্থির ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যায় লঙ্কানরা। মেন্ডিস ফিফটি পূর্ণ করেন ৩৯ বলে। পঞ্চাশ ছুঁতে নিসানকার লাগে ৬৫ বল।

অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের কোনো সুযোগই দেননি তারা। দুজনে ছাড়িয়ে যান অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় উইকেটে শ্রীলঙ্কার আগের সর্বোচ্চ ১৬৩ রানের জুটি। ২০০৬ সালে সিডনিতে ওই জুটি গড়েছিলেন জয়াসুরিয়া ও কুমার সাঙ্গাকারা।

দুই ব্যাটসম্যানের সামনেই যখন সেঞ্চুরির হাতছানি, পায়ে ক্র্যাম্প করায় মেন্ডিস মাঠ ছাড়েন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে। একটু পরই নিসানকা তিন অঙ্কে পা রাখেন ১২৩ বলে।

২৫ বলে ২৫ রান করে ফেরেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। জয়ের জন্য তিন ওভারে যখন দরকার আর ৮ রান, জাই রিচার্ডসনের একই ওভারে আউট হয়ে যান নিসানকা ও অধিনায়ক দাসুন শানাকা। বাকিটা সারেন চারিথ আসালাঙ্কা ও চামিকা করুনারত্নে।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা ভালো ছিল না। তৃতীয় ওভারে দুশমন্থ চামিরার শর্ট বল পুল করার চেষ্টায় ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ডেভিড ওয়ার্নার।

চোট কাটিয়ে ফেরা মিচেল মার্শও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। বাঁহাতি স্পিনার দুনিথ ওয়াল্লালাগের বলে তিনি সহজ ক্যাচ তুলে দেন ১০ রান করে।

৪৭ রানে ২ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে যায় অধিনায়ক ফিঞ্চ ও মার্নাস লাবুশেনের ব্যাটে। তৃতীয় উইকেটে ৬৯ রানের জুটি গড়েন দুজন।

লেগ স্পিনার জেফ্রি ভ্যান্ডারসের পরপর দুই ওভারে এই দুজনের বিদায়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ফিঞ্চ ৮৫ বলে করেন ৬২, লাবুশেন ৩৬ বলে ২৯।

পঞ্চম উইকেটে ৭২ রানের জুটি গড়েন অ্যালেক্স কেয়ারি ও হেড। কিপার-ব্যাটসম্যান কেয়ারি ১ রানের জন‍্য পাননি ফিফটি। ৫২ বলে ৩ চার ও এক ছক্কায় গড়া তার ইনিংস।

মাঝে ম্যাক্সওয়েল ১৮ বলে করেন ৩৩। হেড শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৬৫ বলে ৩টি করে চার-ছক্কায় ৭০ রান করে। ক্যামেরুন গ্রিন ১২ বলে করেন ১৫।

শেষ ১০ ওভারে ৯৮ রান তুলে সংগ্রহটা তিনশর কাছে নিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু বোলিংয়ে লড়াই-ই করতে পারল না তারা।

পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেল শ্রীলঙ্কা। মঙ্গলবার একই মাঠে হবে চতুর্থ ওয়ানডে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ২৯১/৬ (ওয়ার্নার ৯, ফিঞ্চ ৬২, মার্শ ১০, লাবুশেন ২৯, কেয়ারি ৪৯, হেড ৭০*, ম্যাক্সওয়েল ৩৩, গ্রিন ১৫*; চামিরা ৮-০-৪৯-১, থিকশানা ১০-০-৩৭-০, করুনারত্নে ৫-০-৪৬-০, ওয়াল্লালাগে ১০-০-৫৬-১, ভ্যান্ডারসে ১০-০-৪৯-৩, ধনাঞ্জয়া ৬-০-৩৫-১, শানাকা ১-০-১০-০)

শ্রীলঙ্কা: ৪৮.৩ ওভারে ২৯২/৪ (ডিকভেলা ২৫, নিসানকা ১৩৭, মেন্ডিস ৮৭ রিটায়ার্ড হার্ট, ধনাঞ্জয়া ২৫, আসালাঙ্কা ১৩*, শানাকা ০, করুনারত্নে ০*; হেউজেলউড ৯.৩-০-৫৭-১, রিচার্ডসন ৯-০-০৩৯-২, ম্যাক্সওয়েল ৭-০-৪৪-১, গ্রিন ৫-০-৩০-০, লাবুশেন ৭-০-৪৯-০, হেড ১-০-৯-০)

ফল: শ্রীলঙ্কা ৬ উইকেটে জয়ী

সিরিজ: পাঁচ ম্যাচ সিরিজের তিনটির পর ২-১ এ এগিয়ে শ্রীলঙ্কা

ম্যান অব দা ম্যাচ: পাথুম নিসানকা