স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে ২ উইকেটে ৫০ রান নিয়ে শনিবার দিন শুরু করা বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস থমকে গেছে ২৪৫ রানে। প্রথম টেস্টে ক্যারিবিয়ানদের দিয়েছে ৮৪ রানের লক্ষ্য।
প্রথম সেশনে চার উইকেট হারিয়ে ইনিংস ব্যবধানে হারের শঙ্কায় ছিল বাংলাদেশ। দরকার ছিল বিশেষ কিছুর। তাই করে দেখান সাকিব ও সোহান। উপহার দেন রেকর্ড গড়া জুটি। দলকে দেখান লড়াইয়ের পথ।
ম্যাচে দ্বিতীয় ফিফটির দেখা পাওয়া সাকিব ৯৯ বলে ছয়টি চারে করেন ৬৩ রানে। লম্বা একটা সময় ধরে শারীরিক সমস্যা ভোগাচ্ছিল বাংলাদেশ অধিনায়ককে। দ্রুত দৌড়াতে পারছিলেন না তিনি। তবু চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় লড়াই চালিয়ে যান। একবার আলজারি জোসেফের বল হেলমেটে আঘাত হানলেও হাল ছাড়েননি।
চার বছর আগে এই মাঠেই ৬৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন সোহান। এতো দিন সেটাই ছিল তার একমাত্র ফিফটি। ১৪৭ বলে ১১ চারে এবারও করলেন ৬৪। সপ্তম উইকেটে দুই জনে ২২১ বলে উপহার দেন ১২৩ রানের জুটি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সপ্তম উইকেটে বাংলাদেশের যা সর্বোচ্চ। আগের সেরা ছিল ৪৪। ২০০৪ সালে করেছিলেন খালেদ মাসুদ ও রাজিন সালেহ।
এই টেস্টে এটাই কোনো দলের প্রথম শতরানের জুটি। প্রথম জুটি হিসেবে কাটিয়ে দেন গোটা একটি সেশন। ভাগ্যেরও একটু সহায়তা পান দুই ব্যাটসম্যান।
লাঞ্চের পর দ্বিতীয় ওভারেই ফিরে যেতে পারতেন সাকিব। কাইল মেয়ার্সের বল তার ব্যাট ছুঁয়ে, প্যাডে লেগে কিপারের গ্লাভসে জমা পড়ে। আবেদন করলেও রিভিউ নেয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সে সময় ৫ রানে ছিলেন সাকিব।
আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে এগোনো বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানকে ঠেকাতে ফিল্ডিং ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক। সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক-দুই রান নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন সাকিব। শুরুতে সাবধানী ব্যাটিং করা সোহান পরে খেলেন চমৎকার কিছু শট।
৮ রানে কিপারকে কঠিন একটি সুযোগ দিয়েও বেঁচে যান তিনি। মেয়ার্সের বলে এগিয়ে এসে স্টাম্পের ঠিক পেছনেই দাঁড়ান জশুয়া দা সিলভা। কিন্তু তিনি নিতে পারেননি সোহানের কঠিন ক্যাচ।
৯৪ বলে ম্যাচে বাংলাদেশের প্রথম ফিফটি জুটি আসে সোহানের চারে। পানি পানের বিরতির আগে শেষ বলে তার আরেকটি বাউন্ডারিতে নিশ্চিত হয়ে যায়, আবার ব্যাটিংয়ে নামতে হবে ক্যারিবিয়ানদের। প্রথম ১৩ ওভারে দুই ব্যাটসম্যান যোগ করেন ৫০ রান।
৮২ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন সাকিব। ১৮০ বলে তার সঙ্গে সোহানের জুটি পৌঁছায় তিন অঙ্কে। চা-বিরতির পর প্রথম চার ওভারে দ্রুত রান তোলেন সাকিব ও সোহান। এরপরই পাল্টে যায় চিত্র।
রোচের বলে শর্ট এক্সট্রা কাভারে ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের হাতে ধরা পড়েন সাকিব। একটু পর অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের পর তাড়ার চেষ্টায় কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন সোহান। এরপর বেশিদূর এগোয়নি বাংলাদেশের ইনিংস।
ইবাদত হোসেনকে বোল্ড করে ইনিংসে নিজের পঞ্চম উইকেট নেন রোচ। এই মাঠে এটি তার পঞ্চাশতম উইকেট। দ্বিতীয় নতুন বলে বাংলাদেশের ইনিংস স্থায়ী হয় কেবল ১০.৫ ওভার। ১৩ রানে বাংলাদেশ হারায় শেষ ৪ উইকেট।
রোচ ৫৩ রানে নেন ৫ উইকেট। জোসেফ ৩ উইকেট নেন ৫৫ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১০৩
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ২৬৫
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (আগের দিন ৫০/২) ৯০.৫ ওভারে ২৪৫ (জয় ৪২, শান্ত ১৭, মুমিনুল ৪, লিটন ১৭, সাকিব ৬৩, সোহান ৬৪, ইবাদত ১, মুস্তাফিজ ৭, খালেদ ০*; রোচ ২৪.৫-১০-৫৩-৫, সিলস ১৪-১-৪৫-০, জোসেফ ১৯-৬-৫৫-৩, মেয়ার্স ১৩-৩-৩০-২, মোটি ১৫-২-৪২-০, রিফার ৫-১-১৭-০)।