রেকর্ডের মালায় ইংল্যান্ডের বিশ্ব রেকর্ড ৪৯৮

দিনের শুরুতেই ইংল্যান্ডের উইকেট হারানোর ধাক্কা এবং নেদারল্যান্ডসের উল্লাস। আমস্টেলভিনের ২২ গজে এরপর যা হলো, তা কেবলই জন্ম দিল বিস্ময়ের। ফিল সল্ট ও দাভিদ মালানের ঝড়ে লাইন-লেংথ ভুলে গেলেন ডাচ বোলাররা। পরে তাদের যেন কচুকাটা করলেন জস বাটলার ও লিয়াম লিভিংস্টোন। সেঞ্চুরি হলো তিনটি, ওলটপালট হলো পরিসংখ্যানের বেশ কয়েকটি পাতা। শেষে হলো বিশ্ব রেকর্ড; ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের নতুন ইতিহাস গড়ল ইংল্যান্ড।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 June 2022, 01:14 PM
Updated : 17 June 2022, 03:52 PM

ডাচদের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে শুক্রবার ৪ উইকেটে ৪৯৮ রান করেছে ওয়েন মর্গ্যানের দল।

নতুন চূড়ায় ওঠার পথে নিজেদের গড়া আগের রেকর্ড ভাঙল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০১৮ সালে ৪৮১ রান ছিল এই সংস্করণে দলীয় সংগ্রহের আগের বিশ্ব রেকর্ড।

সর্বোচ্চ রানের তালিকায় পরের নামটিও ইংলিশদের। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৬ সালে তারা করেছিল ৪৪৪ রান।

ইংল্যান্ডের এই ৪৯৮ লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটেও সর্বোচ্চ। এতদিন রেকর্ডটি ছিল সারের, ২০০৭ সালে গ্লস্টারশায়ারের বিপক্ষে ৪৯৬ করেছিল তারা।

অবিশ্বাস্য কিছু করার পণ করেই যেন ব্যাট হাতে মাঠে নেমেছিলেন ইংল্যান্ডের সবাই। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি উপহার দিলেন সল্ট ও মালান। চারে নেমে ছক্কার বৃষ্টিতে দেড়শ ছাড়ানো ইনিংস খেললেন বাটলার। আর লিভিংস্টোন তাণ্ডব চালিয়ে গড়েন দেশের হয়ে এই সংস্করণে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড।

ক্যারিয়ারের চতুর্থ ওয়ানডে খেলতে নেমে ১২২ রান করেন সল্ট। তার ৯৩ বলের ইনিংসটি সাজানো ৩ ছক্কা ও ১৪ চারে। শুরুতে ধীরেসুস্থে ইনিংস গোছানো মালান খেলেন ৩ ছক্কা ও ৯ চারে ১০৯ বলে ১২৫ রানের ইনিংস।

সল্ট যখন বিদায় নেন তখন শেষ প্রায় ৩০ ওভার। সবশেষ আইপিএলে দুর্দান্ত ব্যাটিং উপহার দিয়ে এক আসরে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়া বাটলার বাকি অংশকে যেন ধরে নিলেন টি-টোয়েন্টি। ১৪ ছক্কা ও ৭ চারে স্রেফ ৭০ বল খেলে যখন তিনি মাঠ ছাড়লেন, নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে অপরাজিত ১৬২ রান।

আর ৪৫তম ওভারে উইকেটে গিয়ে ৬টি করে ছক্কা-চারে ২২ বলে ৬৬ রানের খুনে ইনিংস খেলেন লিভিংস্টোন। এই ইনিংসের পথে ১৭ বলে পঞ্চাশে পা রাখেন তিনি। যৌথভাবে যা ওয়ানডেতে দ্বিতীয় দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড। ১৬ বলে করা এবি ডি ভিলিয়ার্সের রেকর্ডটি একটুর জন্য ভাঙা হলো না তার।

ইংল্যান্ডের ইনিংসে মোট ছক্কা হয়েছে ২৬টি। ওয়ানডেতে এটাও বিশ্ব রেকর্ড। এখানেও তারা ভেঙেছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২০১৯ সালে গড়া নিজেদেরই ২৫ ছক্কার রেকর্ড। 

ওয়ানডে ইতিহাসে এই প্রথম এক ইনিংসে তিনটি সেঞ্চুরি করল ইংল্যান্ড। এর আগে এমন ঘটনা দেখা গেছে দুইবার; প্রতিবারই করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ২০১৫ সালেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারতের বিপক্ষে।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই জেসন রয়কে হারানো ইংল্যান্ড রেকর্ডের পথে চলা শুরু করে সল্ট ও মালানের ব্যাটে। দুজনে গড়েন ২২২ রানে জুটি। ওয়ানডেতে দ্বিতীয় উইকেটে যা ইংলিশদের তৃতীয় সর্বোচ্চ।

সেঞ্চুরি করে সল্টের বিদায়ের পর শুরু হয় ‘বাটলার শো’। ফিলিপ বোয়াসেভেনকে চার মেরে যার শুরু, পরের ওভারে তিনি ছক্কায় ওড়ান ডাচ অধিনায়ক পিটার সিলারকে। বাঁহাতি এই স্পিনারের পরের ওভারে চার বলের মধ্যে মারেন আরও তিনটি ছক্কা। পরের বলেই বেঁচে যান ক্যাচ দিয়ে, ৩৭ রানে।

জীবন পেয়ে যেন আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন বাটলার। তার সামনে বল ফেলার জায়গাই খুঁজে পাচ্ছিলেন না নেদারল্যান্ডসের বোলাররা। বাস ডে লেডেকে চার বলের মধ্যে হাঁকান তিন চার ও এক ছক্কা। আরিয়ান দত্তকে টানা তিন ছক্কায় ওড়ানোর পথে ৪৭ বলে স্পর্শ করেন তিন অঙ্ক।

একটু জন্য পারেননি দেশের হয়ে নিজেরই গড়া ৪৬ বলে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙতে। তালিকায় তৃতীয় স্থানটিও তার, ২০১৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে করেছিলেন ৫০ বলে শতক।

সিলারের হ্যাটট্রিক থামিয়ে দেওয়া লিভিংস্টোন যেন উইকেটে নামেন বিশ্ব রেকর্ড করবেন ভেবেই। মুখোমুখি হওয়া দ্বিতীয় বল থেকেই শুরু হয় তার ঝড়। বোয়াসেভেনের ওভারের ছয়টি বলই পাঠান তিনি বাউন্ডারিতে। চারটি ছক্কা ও দুটি চারে ওভার থেকে আসে ৩২।

তার সামনে সুযোগ ছিল দ্রুততম ফিফটির রেকর্ডটি নিজের করে নেওয়ার। ১৩ বলে ৪৬ রান ছিল ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের, পরের বলে বাউন্ডারিতে জীবন পেয়ে নেন আরও দুই রান। কিন্তু পরের দুই বল ডট খেলে আর হয়নি তার রেকর্ড গড়া। তবে পেছনে ফেলেন তিনি ইংল্যান্ডের হয়ে ২১ বলে ফিফটি করা মর্গ্যান ও জনি বেয়ারস্টোর রেকর্ড।

বাটলার-লিভিংস্টোন ঝড়ের সবচেয়ে বড় ঝাপটা যায় বোয়াসেভেনের ওপর দিয়ে। ১০ ওভার বল করে ১০৮ রান দিয়ে তিনি ছিলেন উইকেটশূন্য। ওয়ানডেতে ডাচদের হয়ে এক ইনিংসে প্রথম বোলার হিসেবে শতরান রান দিলেন এই পেসার।

সব দল মিলিয়ে সর্বোচ্চ রান খরচের দিক থেকে তিনি এখন তৃতীয় স্থানে। ১১৩ রান দিয়ে সবার ওপরে অস্ট্রেলিয়ান পেসার মাইক লুইস।

১১০ রান করে দিয়েছেন পাকিস্তান পেসার ওয়াহাব রিয়াজ ও আফগানিস্তান লেগ স্পিনার রশিদ খান।