দুর্দান্ত বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সমতায় শ্রীলঙ্কা

শ্রীলঙ্কার প্রথম আট ব্যাটসম্যানের সবাই গেলেন দুই অঙ্কে। কিন্তু চল্লিশও ছুঁতে পারলেন না কেউ। মাঝারি পুঁজি নিয়ে বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে অবশ্য তারা নিজেদের মেলে ধরলেন দারুণভাবে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুর্দান্ত জয়ে সিরিজে ফেরাল সমতা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 June 2022, 05:48 PM
Updated : 16 June 2022, 06:55 PM

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বৃহস্পতিবার ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ২৬ রানে জিতেছে দাসুন শানাকার দল। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে এখন ১-১ সমতা।

পাল্লেকেলের মন্থর উইকেটে শ্রীলঙ্কা ৪৭.৪ ওভারে ৯ উইকেটে ২২০ রান করার পর বৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। পরে আর ব্যাটিংয়ে নামা হয়নি স্বাগতিকদের।

৪৩ ওভারে ২১৬ রানের নতুন লক্ষ্য তাড়ায় ৫ উইকেটে ১৭০ রানের শক্ত অবস্থানে থেকে ১৮৯ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ১৯ রানে তারা হারায় শেষ ৫ উইকেট।

১৯৯৮ সালের পর ওয়ানডেতে রান তাড়ায় অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে কম রানে শেষ ৫ উইকেট হারানোর ঘটনা এটি। সেবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে তারা শেষ ৫ উইকেট হারিয়েছিল ১৪ রানে (২৪২ রান তাড়ায় ৫ উইকেটে ২২১ থেকে অলআউট হয়েছিল ২৩৫ রানে)।

ব্যাটিংয়ে মূল্যবান ১৮ রানের পর হাত ঘুরিয়ে ৪৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা পেসার চামিকা করুনারত্নে।

প্রথম ম্যাচে ব্যাটিংয়ে ঝড়ো ইনিংসের পর ৪ উইকেট নেওয়া লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকে চোটের কারণে এদিন পায়নি শ্রীলঙ্কা। তার জায়গায় সুযোগ পাওয়া লেগ স্পিনার জেফ্রি ভ্যান্ডারসে উইকেটশূন্য থাকলেও ৫ ওভারে রান দেন ২৩। দুশমন্থ চামিরা, দুনিথ ওয়াল্লালাগে ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে নেন ২টি করে উইকেট।

প্যাট কামিন্সের ৪ উইকেট ও স্পিনারদের নৈপুণ্যে লক্ষ্য নাগালেই ছিল অস্ট্রেলিয়ার। এমনকি রান তাড়ায় একটা সময় জয়ের পথেই ছিল সফরকারীরা। আগের ম্যাচের নায়ক গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার পরই পথ হারায় তারা।

চোটে জেরবার অস্ট্রেলিয়া এই ম্যাচের আগে হারায় মার্কাস স্টয়নিস ও অ্যাশটন অ্যাগারকে। তাদের জায়গায় দলে ডাক পাওয়া ট্রাভিস হেড ও ম্যাথু কুনেমান ঢুকে যান একাদশেও। স্পিনে শক্তি বাড়াতে জাই রিচার্ডসনের জায়গায় নেওয়া হয় মিচেল সোয়েপসনকে।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ষষ্ঠ ওভারেই পাথুম নিসানকাকে (১৪) হারায় শ্রীলঙ্কা। নতুন বলে জশ হেইজেলউডের সঙ্গে বোলিং শুরু করা কুনেমান পান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম উইকেটের স্বাদ।

দানুশকা গুনাথিলাকাও (১৮) টেকেননি বেশিক্ষণ। তাকে ফিরিয়ে ইনিংসে নিজের প্রথম উইকেটের দেখা পান কামিন্স।

৩৫ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর ধাক্কা সামলে তৃতীয় উইকেটে কুসল মেন্ডিস ও ধনাঞ্জয়া গড়েন ৬১ রানের জুটি। কিন্তু ভালো শুরুর পর ইনিংস টেনে নিতে পারেননি দুজনের কেউই।

৪১ বলে ২ চার ও একটি ছক্কায় ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৬ রান করে ম্যাক্সওয়েলকে ফিরতি ক্যাচ দেন মেন্ডিস। ধনাঞ্জয়ার ৪১ বলে ২ চার একটি ছক্কায় গড়া ৩৪ রানের ইনিংস শেষ হয় কট বিহাইন্ড হয়ে।

চারিথ আসালাঙ্কা ও চামিকা করুনারত্নে পারেননি তেমন কিছু করে দেখাতে। একপ্রান্তে দলকে টানছিলেন শানাকা। লেগ স্পিনার সোয়েপসনকে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় লঙ্কান অধিনায়ক ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ৩৬ বলে ৩৪ রান করে।

এরপর ওয়াল্লালাগে ও ভ্যান্ডারসেকে ফিরিয়ে কামিন্স পূর্ণ করেন ৪ উইকেট। চামিরা ও মাহিশ থিকশানা শেষ জুটিতে ২১ রান যোগ করার পরই বৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে যায় খেলা।

ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার স্পিনাররা মিলে করেন ৩২ ওভার, কোনো ওয়ানডেতে যা দলটির স্পিনারদের যৌথভাবে সবচেয়ে বেশি ওভার বোলিং।

দুই ঘণ্টার বেশি সময় পর আবার খেলা শুরু হলে লক্ষ্য তাড়ায় অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা হয় আশা জাগানিয়া। দ্বিতীয় ওভারে স্পিনার থিকশানাকে টানা তিনটি চার মারেন ডেভিড ওয়ার্নার।

শুরুর জুটিতে ৭ ওভারে আসে ৩৯ রান। এরপরই অ্যারন ফিঞ্চকে (১৪) এলবিডব্লিউ করে শ্রীলঙ্কাকে প্রথম সাফল্য এনে দেন ধনাঞ্জয়া।

ওয়ার্নার ছুটছিলেন ফিফটির দিকে। তাকেও ফিরিয়ে দেন ধনঞ্জয়া। তার অফ স্পিনে বোল্ড হওয়া বাঁহাতি ওপেনার ৫১ বলে ৫ চারে করেন ৩৭ রান।

তিনে নেমে স্টিভেন স্মিথ বিদায় নেন ৩৫ বলে ২৮ রান করে। ১৯ বছর বয়সী বাঁহাতি স্পিনার ওয়াল্লালাগে নিজের পরপর দুই ওভারে ফিরিয়ে দেন হেড (২৩) ও লাবুশেনকে (১৮)।

তখন ১৩২ রানে অস্ট্রেলিয়ার নেই ৫ উইকেট, ১০০ বলে দরকার ৯৪ রান। ম্যাক্সওয়েল ও অ্যালেক্স কেয়ারির জুটিতে একটু একটু করে কমছিল ব্যবধান। বিশেষ করে ম্যাক্সওয়েল খেলছিলেন দারুণ। ওয়াল্লালাগের একই ওভারে তিনি মারেন তিনটি চার।

জুটিতে দুজনে তুলে ফেলেন ৩৮ রান। ম্যাক্সওয়েলের বিদায়ে জুটি ভাঙতেই দিক হারিয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। করুনারত্নের শর্ট বল পুল করার চেষ্টায় ঠিকমতো খেলতে পারেননি ম্যাক্সওয়েল। বল উঠে যায় আকাশে। ২৫ বলে ৫টি চারে তিনি করেন ৩০ রান।

ওই ওভারেই দ্বিতীয় রানের চেষ্টায় রান আউট হয়ে যান কেয়ারি (১৫)। বোলার করুনারত্নের থ্রো থেকেই স্টাম্প ভেঙে দেন কিপার মেন্ডিস।

পরের ওভারে ওয়াল্লালাগের দারুণ ক্যাচে ফেরেন কামিন্স। করুনারত্নে নিজের পরের ওভারে বোল্ড করে দেন সোয়েপসনকে। এর পরের ওভারে কুনেমানের স্টাম্প এলোমেলো করে দেন চামিরা। জয়ের উল্লাসে মাতে শ্রীলঙ্কা।

আগামী রোববার তৃতীয় ম্যাচ হবে কলম্বোয়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ৪৭.৪ ওভারে ২২০/৯ (গুনাথিলাকা ১৮, নিসানকা ১৪, মেন্ডিস ৩৬, ধনাঞ্জয়া ৩৪, আসালাঙ্কা ১৩, শানাকা ৩৪, করুনারত্নে ১৮, ওয়াল্লালাগে ২০, ভ্যান্ডারসে ৭, চামিরা ৭*, থিকশানা ১১*; হেইজেলউড ৭-১-২৬-০, কুনেমান ১০-০-৪৮-২, ম্যাক্সওয়েল ১০-২-৩৫-২, কামিন্স ৮.৪-০-৩৫-৪, সোয়েপসন ১০-০-৫৮-১, লাবুশেন ২-০-১৩-০)   

অস্ট্রেলিয়া: (৪৩ ওভারে লক্ষ্য ২১৬) ৩৭.১ ওভারে ১৮৯ (ওয়ার্নার ৩৭, ফিঞ্চ ১৪, স্মিথ ২৮, হেড ২৩, লাবুশেন ১৮, কেয়ারি ১৫, ম্যাক্সওয়েল ৩০, কামিন্স ৪, সোয়েপসন ২, কুনেমান ১, হেইজেলউড ৪*; চামিরা ৬.১-০-১৯-২, থিকশানা ৮-০-৪৪-০, ধনাঞ্জয়া ৬-০-২৬-২, ভ্যান্ডারসে ৫-১-২৩-০, করুনারত্নে ৭-০-৪৭-৩, ওয়াল্লালাগে ৫-০-২৫-২)    

ফল: ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ২৬ রানে জয়ী শ্রীলঙ্কা

সিরিজ: পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুটির পর ১-১ সমতা

ম্যান অব দা ম্যাচ: চামিকা করুনারত্নে