আইসিসির এফটিপিতে আইপিএলের আড়াই মাসের ‘উইন্ডো’

অবিশ্বাস্য ও চোখধাঁধানো মূল্যে সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রি হওয়ার পর আইপিএলে নতুন কী কী মাত্রা যোগ হয়, সেটি দেখার অপেক্ষায় ক্রিকেট বিশ্ব। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি অবশ্য এখনই নিশ্চিত করে দিলেন বিসিসিআই সচিব জয় শাহ। ভারতীয় বোর্ডের এই বড় কর্তা জানালেন, আইসিসি ভবিষ্যৎ সফর সূচীর (এফটিপি) আগামী চক্র থেকেই আড়াই মাসের আলাদা সময় ধরা থাকবে আইপিএলের জন্য।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 June 2022, 05:27 AM
Updated : 15 June 2022, 08:48 AM

২০২৩ থেকে ২০২৭ পর্যন্ত ৫ বছরের জন্য আইপিএলে সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রি হয়েছে ৪৮ হাজার ৩৯০.৫ কোটি রুপিতে। সম্প্রচার স্বত্বের দিক থেকে ভারতের এই ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট এখন সব খেলা মিলিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে দামী টুর্নামেন্ট।

আমেরিকান ফুটবলের আসর ন্যাশনাল ফুটবল লিগের (এনএফএল) প্রতি ম্যাচের মূল্য ৩ কোটি ৫৭ লাখ মার্কিন ডলার। এরপরই এখন আইপিএলের অবস্থান, প্রতি ম্যাচের মূল্য এখানে হতে যাচ্ছে ১ কোটি ৫১ লাখ মার্কিন ডলারের একটু বেশি। আইপিএলের পেছনে পড়ে গেছে এমনকি ফুটবল বিশ্বজুড়ে তুমুল জনপ্রিয় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগও (প্রতি ম্যাচের মূল্য ১ কোটি ১৩ লাখ মার্কিন ডলারের একটু বেশি)।

এমন আকাশছোঁয়া মূল্যে সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রি হওয়ার পর আইপিএলের আকার বাড়তে পারে। এই বছর থেকেই আইপিএলে দল দুটি বাড়ানো হয়েছে। এবার নতুন ধরনের সূচিতে খেলা হলেও সামনে টুর্নামেন্টে ম্যাচের সংখ্যা বাড়তে পারে। বাড়তে পারে পরিধিও। ম্যাচ সংখ্যা এখনকার ৭৪ থেকে বেড়ে ৮৪, এমনকি ৯৪টিও হতে পারে।

আইপিএলের যে দাপট ও ক্রিকেটারদের কাছে যে চাহিদা, তাতে এফটিপিতে এটির জন্য আলাদা ‘উইন্ডো’ নিয়ে আলোচনা হয়ে আসছে অনেক দিন থেকেই। অবশেষে তা সত্যি হতে যাচ্ছে, ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে  নিশ্চিত করলেন বিসিসিআই সচিব জয় শাহ।

“এই দিকটি নিয়ে আমরা কাজ করছি (ম্যাচ সংখ্যা বাড়ানো)। আমি জানিয়ে দিচ্ছি যে, আইসিসির এফটিপির পরের চক্র থেকেই আইপিএলের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আড়াই মাসের উইন্ডো থাকবে, যাতে বিশ্বের সব সেরা ক্রিকেটাররা খেলতে পারেন এখানে। আইসিসিসহ অন্য দেশের বোর্ডগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে আমাদের।”

আইসিসির বর্তমান এফটিপি শেষ হচ্ছে আগামী বছর। ২০২৪ থেকে ২০২৭ পর্যন্ত এফটিপি এখন চূড়ান্ত হওয়ার পথে। সেখানেই আইপিএলের জন্য থাকবে প্রতিবছর আড়াই মাস করে সময়, যখন কোথাও কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হবে না।

আইপিএলের দলগুলির ব্যস্ততা শুধু ওই আড়াই মাস বা ভারতের মধ্যে নয়, আরও ছড়িয়ে দেওয়ার ভাবনাও আছে বলে জানালেন জয় শাহ।

“সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করছি আমরা। আইপিএল দলগুলির বিদেশে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার অনেক প্রস্তাব আমাদের কাছে আছে। এই পরিকল্পনাও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় আছে। তবে এটা নিয়ে অন্য বোর্ডগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক সূচি সম্পর্কে জানতে।”

আইপিএলে এত জোর দেওয়া হলেও ভারতের আন্তর্জাতিক সূচি বা অন্য দেশগুলোর আন্তর্জাতিক সূচিকে যথাযথ সম্মান জানানো হবে বলেও দাবি বিসিসিআই সচিবের।

“বিশ্ব ক্রিকেট যতদিন শক্তিশালী থাকবে, ততদিন ভারতীয় ক্রিকেটও শক্তিশালী রবে, এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রতি বিসিসিআই দায়বদ্ধ। এবং সেটা শুধু ভারত-অস্ট্রেলিয়া বা ভারত-ইংল্যান্ডের মতো আকর্ষণীয় সিরিজ নয়, ছোট দেশগুলোর সঙ্গে খেলতেও আমরা প্রতিজ্ঞবদ্ধ।”

“সব সংস্করণের সব দ্বিপাক্ষিক সিরিজকে সম্মান করা হবে। এই মাসেই তো আমরা আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে দুটি টি-টোয়েন্টি খেলতে যাচ্ছি। আমরা শক্তিশালী ও তেজি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আঙিনা চাই ও ছোট দেশগুলোকে সহায়তা করতে চাই তাদের সঙ্গে খেলে।”

লম্বা আইপিএলের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের এত ব্যস্ততা ও দায় রক্ষায় ভারতীয় ক্রিকেটারদের ওপর প্রবল চাপ পড়তে যাচ্ছে নিশ্চিতভাবেই। জয় শাহ জানালেন, এটির সমাধানও তারা ভেবে রাখছেন।

“জাতীয় ক্রিকেট একাডেমির প্রধান ভিভিএস লক্ষনের সঙ্গে কথা হয়েছে আমার। অন্তত ৫০ জন ক্রিকেটার আমাদের হাতে তৈরি থাকবে। আমাদের টেস্ট দল এক দেশে ব্যস্ত থাকবে, একই সময়ে অন্য দেশে সিরিজে ব্যস্ত থাকবে আমাদের সাদা বলের ক্রিকেটের দল।”

“আমরা ওই পথেই এগোচ্ছি, যখন একই সঙ্গে আমাদের দুটি জাতীয় দল প্রস্তুত থাকবে।”