ভারতের সীমিত ওভারের দলে নিয়মিত মুখ ছিলেন পান্ডিয়া। শেষ দিকে ব্যাট হাতে ঝড়ো ইনিংস খেলার পাশাপাশি বোলিংয়ে রাখতেন কার্যকর ভূমিকা। কিন্তু পিঠের চোটে তাকে বিরত থাকতে হয় বোলিং থেকে। শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে তাই ভারত দলে টিকে থাকা সহজ ছিল না। পান্ডিয়াও পারেননি সেই লড়াইয়ে জিততে।
গত অক্টোবর-নভেম্বরে হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর ভারত দলে জায়গা হচ্ছিল না পান্ডিয়ার। নিউ জিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাদ পড়েন তিনি। সবশেষ ওয়ানডে তো খেলেছেন সেই ২০২১ এর জুলাইয়ে।
পান্ডিয়াকে নিয়ে চারদিকে শুরু হয় নানা সমালোচনা। তবে হার মেনে নেননি তিনি। নিজেকে ফিরে পেতে শুরু করেন কঠোর পরিশ্রম। গত মার্চে শুরু হওয়া আইপিএল দিয়ে আবার ফেরেন ক্রিকেটে। এবার নতুন এক ভূমিকা নিয়ে, গুজরাট টাইটান্সের অধিনায়ক হয়ে।
দুর্দান্ত অধিনায়কত্বে সকলের প্রশংসা কুড়ান পান্ডিয়া। তার নেতৃত্বে প্রথমবার আইপিএলে অংশ নিয়েই শিরোপা ঘরে তোলে গুজরাট।
ব্যাটে-বলে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণও দেন। গুজরাটে খেলেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে। তাতে তার স্ট্রাইক রেট কিছুটা কমে গেলেও মৌসুমজুড়ে ছিলেন বেশ ধারাবাহিক ও দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ১৫ ইনিংস খেলে তার রান আসরের চতুর্থ সর্বোচ্চ ৪৮৭। গড় ৪৪.২৭, স্ট্রাইক রেট ১৩১.২৬।
১০ ইনিংসে ৩০.৩ ওভার করেন বোলিংও। ২৭.৭৫ গড়ে নেন ৮ উইকেট। ফাইনালে রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে ১৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে তিনিই রাখেন সবচেয়ে বড় অবদান। পরে ব্যাট হাতে ৩৪ রান করে জেতেন ফাইনাল সেরার পুরস্কার।
আইপিএলের নিলামের পর গুজরাট ছিল না ফেভারিট বিবেচনায়। সেই দলই পান্ডিয়ার নেতৃত্বে শুরু থেকে দাপট দেখিয়ে জিতে নেয় শিরোপা। নিজেকে প্রমাণ করা ও দল হিসেবে ছাপ রাখার চ্যালেঞ্জ নিয়েই সফল হয়েছেন বলে বিসিসিআইয়ের একটি ভিডিওতে শনিবার বলেন পান্ডিয়া।
“আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। নিজের ও আরও অনেক কিছুর বিপক্ষে জয়ের চেয়েও তা বেশি ছিল। আইপিএল জেতা এমনকি প্লে অফে কোয়ালিফাই করাই আমার জন্য ছিল বড় পাওয়া, কারণ অনেকেই আমাদের সামর্থ্য নিয়ে সংশয়ে ছিল…অনেক লোক অনেক প্রশ্ন তুলছিল। এমনকি আমি ফেরার আগেই আমাকে নিয়ে অনেক ধরনের কথা বলা হচ্ছিল।”
আইপিএলের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদেই ভারত দলে আবারও ডাক পান পান্ডিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ব্যাট হাতে আলোও ছড়ান তিনি। ১২ বলে ৩ ছক্কা ও ২ চারে খেলেন ৩২ রানের ক্যামিও ইনিংস। বোলিংয়ে যদিও রাখতে পারেননি অবদান, এক ওভার করে দেন ১৮ রান। ম্যাচটি রেকর্ড গড়ে জিতে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে রোববার মাঠে নামবে দুই দল। আগের দিন ২৮ বছর বয়সী পান্ডিয়া তুলে ধরেন, কতটা কঠিন পরিশ্রমের পর দলে ফেরার পথ তৈরি করেছেন তিনি।
“এটা (তাদের) সমালোচকদের জবাব দেওয়ার জন্য নয়। আমি স্রেফ আমার অনুসরণ করা প্রক্রিয়া নিয়ে গর্বিত। আমি যে ৬ মাস খেলার বাইরে ছিলাম, কেউ জানে না সেই সময় কিসের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। অনুশীলন করার জন্য আমি ভোর ৫টায় উঠতাম। টানা চার মাস আমি রাত সাড়ে ৯টায় ঘুমিয়ে পড়তাম। অনেক ত্যাগ করেছি।”
“এই লড়াই আমি আইপিএলের আগে করেছি। সবসময় জীবনে কঠোর পরিশ্রম করেছি, আর এর ফলে আমি সবসময় যা চেয়েছি তাই পেয়েছি।”